০৩:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫

কুমিল্লার কৃতী সন্তান এটিএম শামসুল হক আর নেই

কুমিল্লার কৃতী সন্তান, আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমপুর গ্রামের গর্ব, সাবেক সচিব, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য, এটিএম শামসুল হক সাহেব ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল, শাহবাগে ICU-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অদ্য সকাল ০৯:২০ ঘটিকায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিঊন) তিনি গত ১৫ দিন যাবৎ বারডেম এর ICU তে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তিনি ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারের মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এবং কুমিল্লা সদর আসন থেকে দুইবার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছিলেন।

১৯৮৩ সালে, তিনি তখন ১৫টি রাষ্ট্রের সংগঠন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র ( CIRDAP বা সিরডাপ) এর মহাপরিচালক, নিজ গ্রাম শিমপুরে প্রতিষ্ঠা করলেন পিতার নামে “Vocational Training Institute”। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে কারিগরি শিক্ষার যে বীজ আপনি গ্রামে রোপন করেছিলেন, বর্তমান সরকার সেটাকেই আজ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ওই সময় আশেপাশের অনেক গ্রামের হাজার হাজার অশিক্ষিত গরীব যুবকরা বিনাফি’তে কাঠের কাজ, বিদ্যুৎতের কাজ, ওয়েল্ডিং এর কাজ ইত্যাদি কারিগরি কাজ শিখে বিদেশে গিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। তিনি বলতেন” Charity begins at home”। একে একে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করলেন গরিব মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, কারিগরি স্কুল ও কলেজ। কুমিল্লা শহরে ১২৫ শতাংশ জমি দান করেছেন ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের জন্য।

রাজনৈতিক জীবন:
১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল তাঁর রাজনৈতিক জীবনকাল। ” রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন অপরিহার্য ” এই শ্লোগান তিনি কুমিল্লার মাঠে-ঘাটে-হাটে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাইতো দল-মত নির্বিশেষে, শিক্ষিত-সাধারণ মানুষ তাঁর ভক্ত হয়ে গেলেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন কুমিল্লার উন্নয়নের রূপকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্নেহধন্য ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ভিপি ও জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন। সাহসী এই ছাত্রনেতা ৫১-র ভাষা আন্দোলনের সময় কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা সদর আসনের নমিনেশন ঘোষনার প্রাক্কালে জনাব শামসুল হক সম্পর্কে অপর দুই প্রার্থীর প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ” শামসুল হক সাহেব আওয়ামীলীগে নতুন নয়। তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তাছাড়া ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকার জেলা প্রশাসক থাকাকালীন মাঝরাতে চাদর মোড়া দিয়ে আমাদের বাসার পেছন দিক দিয়ে এসে চাকুরী ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আব্বাকে ( জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রের কথা বলে যেতেন।” বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়ে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফসল ঘরে তুলতে পারেন নাই। তারপর ২০০২ সালে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ” আমার পক্ষে এই রাজনীতি করা সম্ভব নয় ” এই বলে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৯৩ সালে খাদ্য সচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার তিন মাস পরে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনাকে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত কেবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। “জনসেবায় প্রশাসন” এর ভিত্তিতে প্রশাসন সংস্কার বিষয়ে শামসুল হক কমিশনের সুপারিশ আজও অদ্বিতীয় যা আধুনিক ও উন্নয়ন প্রশাসন বিনির্মাণে অবদান অব্যাহত। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগদানের পূর্বে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন Oxford, Cambridge ও University of Pennsylvania থেকে।

বর্ণাঢ্য শিক্ষা-কর্ম- রাজনৈতিক-সমাজসেবাময় জীবনের অধিকারী জনাব এটিএম শামসুল হক আজ মৃত্যুবরণ করেন। কুমিল্লার এই কৃতী সন্তান ও এই বরেণ্য ব্যাক্তির মৃত্যুতে কুমিল্লার জনপদ আজ শোকাহত।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :

কুমিল্লার কৃতী সন্তান এটিএম শামসুল হক আর নেই

প্রকাশিত : ১২:৪৫:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ জুলাই ২০২২

কুমিল্লার কৃতী সন্তান, আমড়াতলী ইউনিয়নের শিমপুর গ্রামের গর্ব, সাবেক সচিব, আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য, এটিএম শামসুল হক সাহেব ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হসপিটাল, শাহবাগে ICU-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অদ্য সকাল ০৯:২০ ঘটিকায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাহে রাজিঊন) তিনি গত ১৫ দিন যাবৎ বারডেম এর ICU তে আশংকাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তিনি ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকারের মন্ত্রীর পদ মর্যাদায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। এবং কুমিল্লা সদর আসন থেকে দুইবার ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করেছিলেন।

১৯৮৩ সালে, তিনি তখন ১৫টি রাষ্ট্রের সংগঠন এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমন্বিত পল্লী উন্নয়ন কেন্দ্র ( CIRDAP বা সিরডাপ) এর মহাপরিচালক, নিজ গ্রাম শিমপুরে প্রতিষ্ঠা করলেন পিতার নামে “Vocational Training Institute”। আজ থেকে ৩৯ বছর আগে কারিগরি শিক্ষার যে বীজ আপনি গ্রামে রোপন করেছিলেন, বর্তমান সরকার সেটাকেই আজ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। ওই সময় আশেপাশের অনেক গ্রামের হাজার হাজার অশিক্ষিত গরীব যুবকরা বিনাফি’তে কাঠের কাজ, বিদ্যুৎতের কাজ, ওয়েল্ডিং এর কাজ ইত্যাদি কারিগরি কাজ শিখে বিদেশে গিয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। তিনি বলতেন” Charity begins at home”। একে একে গ্রামে প্রতিষ্ঠা করলেন গরিব মানুষের জন্য ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা, কারিগরি স্কুল ও কলেজ। কুমিল্লা শহরে ১২৫ শতাংশ জমি দান করেছেন ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও নার্সিং কলেজের জন্য।

রাজনৈতিক জীবন:
১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল তাঁর রাজনৈতিক জীবনকাল। ” রাজনীতিতে গুনগত পরিবর্তন অপরিহার্য ” এই শ্লোগান তিনি কুমিল্লার মাঠে-ঘাটে-হাটে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তাইতো দল-মত নির্বিশেষে, শিক্ষিত-সাধারণ মানুষ তাঁর ভক্ত হয়ে গেলেন। তিনি তাঁর নির্বাচনী এলাকায় সার্বিক উন্নয়নের নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি ছিলেন কুমিল্লার উন্নয়নের রূপকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর স্নেহধন্য ছাত্রলীগ নেতা, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ভিপি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের ভিপি ও জিএস পদে দায়িত্ব পালন করেন। সাহসী এই ছাত্রনেতা ৫১-র ভাষা আন্দোলনের সময় কারাবরণ করেন। তিনি ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা সদর আসনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৯৬ সালে কুমিল্লা সদর আসনের নমিনেশন ঘোষনার প্রাক্কালে জনাব শামসুল হক সম্পর্কে অপর দুই প্রার্থীর প্রশ্নের জবাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ” শামসুল হক সাহেব আওয়ামীলীগে নতুন নয়। তিনি ছাত্রলীগ করতেন। তাছাড়া ১৯৭০-৭১ সালে ঢাকার জেলা প্রশাসক থাকাকালীন মাঝরাতে চাদর মোড়া দিয়ে আমাদের বাসার পেছন দিক দিয়ে এসে চাকুরী ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আব্বাকে ( জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রের কথা বলে যেতেন।” বিপুল জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের শিকার হয়ে জাতীয় নির্বাচনে ভোটের ফসল ঘরে তুলতে পারেন নাই। তারপর ২০০২ সালে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে ” আমার পক্ষে এই রাজনীতি করা সম্ভব নয় ” এই বলে রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে সমাজ সেবায় আত্মনিয়োগ করেন।

১৯৯৩ সালে খাদ্য সচিবের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার তিন মাস পরে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উনাকে আওয়ামীলীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য পদে অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি ১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত কেবিনেট মন্ত্রীর মর্যাদায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। “জনসেবায় প্রশাসন” এর ভিত্তিতে প্রশাসন সংস্কার বিষয়ে শামসুল হক কমিশনের সুপারিশ আজও অদ্বিতীয় যা আধুনিক ও উন্নয়ন প্রশাসন বিনির্মাণে অবদান অব্যাহত। সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে যোগদানের পূর্বে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন Oxford, Cambridge ও University of Pennsylvania থেকে।

বর্ণাঢ্য শিক্ষা-কর্ম- রাজনৈতিক-সমাজসেবাময় জীবনের অধিকারী জনাব এটিএম শামসুল হক আজ মৃত্যুবরণ করেন। কুমিল্লার এই কৃতী সন্তান ও এই বরেণ্য ব্যাক্তির মৃত্যুতে কুমিল্লার জনপদ আজ শোকাহত।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর