০৪:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪

চাল, আটা, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা

আমদানির অনুমতি, শুল্ক্ক কমানো, বাজার তদারকিসহ নানা উদ্যোগ নিলেও প্রধান খাদ্যপণ্য চাল নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না। বহুল ব্যবহূত আরেক খাদ্যপণ্য আটার একই অবস্থা। অতি প্রয়োজনীয় এ দুটি নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমলো না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে উল্টো বেড়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনধারণ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

ভোগ্যপণ্যের বাজার বিশ্নেষকরা বলছেন, চাল, আটা, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হওয়ার পেছনে শুধু আন্তর্জাতিক বাজার দায়ী নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী পরিস্থিতিকে পুঁজি করে অতি মুনাফা করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতার হাপিত্যেশ ছাড়া কিছু করার থাকছে না।

এবার ভরা মৌসুমেও চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি শুল্ক্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। জিটুজি ভিত্তিতেও চাল ও গম আমদানির উদ্যোগ নেয়। বাজারে বিভিন্ন সংস্থার তদারকি জোরদার করা হয়। এসব উদ্যোগের প্রভাব বাজারে খুব বেশি পড়েনি। চাল ও আটা-ময়দার দাম এখনও চড়া। এদিকে সরকার বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আসছে কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর ও তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, পাইজাম ৫৭ থেকে ৫৮ এবং নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা আটার কেজি ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় উঠেছে। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি কেজি খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে সরু চালের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। মোটা চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এক মাসে খোলা আটার দর ৮ শতাংশ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে খোলা আটার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল কারওয়ান বাজার একটি মুদি দোকান থেকে ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী কামাল হোসেন। তিনি বলেন, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। মানুষ খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
তেজকুনিপাড়া এলাকার মা-বাবার দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোরশেদ আলম বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার লক্ষণ নেই। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে তাদের বিক্রিও কিছুটা কমেছে। মিরপুর শাহ আলী কাঁচাবাজারের জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, চালের দাম কমেনি বরং কিছুটা বেড়েছে। আটার দামও বেড়েছে।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেও। জানা গেছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ম্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগস্টে মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে এ দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ম্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে বিবিএস এখনও গত দুই মাসের মূল্যস্ম্ফীতির তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

ভোজ্যতেল নিয়েও ক্রেতার ভোগান্তির অন্ত নেই। গত সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে তিন দিন পার হলেও কম দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে মিলছে না। আগের বাড়তি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মিরপুর শাহ আলী কাঁচাবাজারের মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমাম হোসেন বলেন, দুই দিন আগে তেলের চাহিদা নিয়েছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা, এখনও দেননি। কবে দেবেন তাও জানাননি।

তেজকুনিপাড়ার মাসুদা স্টোরের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, কোম্পানিগুলো দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে খুচরা ব্যবসায়ীদের তুলনামূলক বেশি বোতলজাত তেল দিয়েছে। সেগুলো বিক্রি শেষ না হলে নতুন দামের তেল আসবে না।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক্ক কমানো হলো। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানি হচ্ছে, তবে দাম কমছে না। ঘোষণা দিয়েও কম দরের তেল বাজারে ছাড়ছে না কোম্পানিগুলো। ভোক্তাকে নানাভাবে ঠকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসন, খাদ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

দাম বাড়ল চিনির :মাত্র ১০ দিনের মাথায় আবারও বেড়েছে চিনির দাম। খুচরা পর্যায়ে এবার প্রতি কেজিতে বাড়ানো হয়েছে ৬ টাকা। তবে এ সময় পাম অয়েলের দাম কমানো হয়েছে লিটারে ৮ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত পাম অয়েল, আরবিডি পাম অলিন এবং চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ও স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনা করা হয়। পরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ ও সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব পণ্যের নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির কেজি ৭৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এর চেয়ে বেশি দরেই চিনি বিক্রি হয়েছে বাজারে। চিনি উৎপাদন ও পরিশোধনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর সরকার খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। বাজারে সেই দরও কার্যকর হতে দেখা যায়নি। চিনি বিক্রি হয়েছে এর চেয়ে বেশি দামে। গতকাল কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনির কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি করছেন ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে।

সরকার চিনির দাম বাড়ালেও পাম অয়েলের দাম কমিয়েছে। লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা। যা এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৩৩ টাকা দরে। ভোজ্যতেলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার সময়সীমা বাড়ল :এদিকে আমদানি, উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভোজ্যতেলের ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে জানানো হয়, পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলে ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকেই তা কার্যকর বলে গণ্য হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

চাল, আটা, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত : ১২:২৪:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৭ অক্টোবর ২০২২

আমদানির অনুমতি, শুল্ক্ক কমানো, বাজার তদারকিসহ নানা উদ্যোগ নিলেও প্রধান খাদ্যপণ্য চাল নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না। বহুল ব্যবহূত আরেক খাদ্যপণ্য আটার একই অবস্থা। অতি প্রয়োজনীয় এ দুটি নিত্যপণ্যের দাম কোনোভাবেই কমলো না। বরং সাম্প্রতিক সময়ে উল্টো বেড়েছে। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনধারণ দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে।

ভোগ্যপণ্যের বাজার বিশ্নেষকরা বলছেন, চাল, আটা, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হওয়ার পেছনে শুধু আন্তর্জাতিক বাজার দায়ী নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ী পরিস্থিতিকে পুঁজি করে অতি মুনাফা করছেন। সরকারের নীতিনির্ধারকদের কেউ কেউ অতি মুনাফার বিরুদ্ধে কথা বলছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতার হাপিত্যেশ ছাড়া কিছু করার থাকছে না।

এবার ভরা মৌসুমেও চালের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার বেসরকারি খাতে আমদানির অনুমতি দেওয়ার পাশাপাশি শুল্ক্ক সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে দুই দফায় কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনে। জিটুজি ভিত্তিতেও চাল ও গম আমদানির উদ্যোগ নেয়। বাজারে বিভিন্ন সংস্থার তদারকি জোরদার করা হয়। এসব উদ্যোগের প্রভাব বাজারে খুব বেশি পড়েনি। চাল ও আটা-ময়দার দাম এখনও চড়া। এদিকে সরকার বেসরকারিভাবে ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আসছে কম। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৪০ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মিরপুর ও তেজকুনিপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিআর-২৮ জাতীয় চাল ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, পাইজাম ৫৭ থেকে ৫৮ এবং নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে খোলা আটার কেজি ৫৪ থেকে ৫৫ টাকায় উঠেছে। প্যাকেটজাত আটার কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা। প্রতি কেজি খোলা ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ এবং প্যাকেটজাত ময়দা ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, এক মাসের ব্যবধানে সরু চালের দাম ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ২ শতাংশ। আর এক বছরের ব্যবধানে সরু চালের দাম প্রায় ১৩ শতাংশ বেড়েছে। মাঝারি চালের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। মোটা চালের দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে এক মাসে খোলা আটার দর ৮ শতাংশ এবং প্যাকেটজাত আটার দাম ৪ শতাংশ বেড়েছে। এক বছরে খোলা আটার দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে।

গতকাল কারওয়ান বাজার একটি মুদি দোকান থেকে ২৫ কেজি ওজনের এক বস্তা চাল কিনছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী কামাল হোসেন। তিনি বলেন, কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। মানুষ খাওয়া-দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে।
তেজকুনিপাড়া এলাকার মা-বাবার দোয়া স্টোরের স্বত্বাধিকারী মোরশেদ আলম বলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার লক্ষণ নেই। সব কিছুর দাম বাড়ার কারণে তাদের বিক্রিও কিছুটা কমেছে। মিরপুর শাহ আলী কাঁচাবাজারের জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্সের বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, চালের দাম কমেনি বরং কিছুটা বেড়েছে। আটার দামও বেড়েছে।

বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার প্রমাণ পাওয়া যায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবেও। জানা গেছে, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ম্ফীতি ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আগস্টে মূল্যস্ম্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৮৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে তা ৯ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে এ দুই মাসে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ম্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে। তবে বিবিএস এখনও গত দুই মাসের মূল্যস্ম্ফীতির তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি।

ভোজ্যতেল নিয়েও ক্রেতার ভোগান্তির অন্ত নেই। গত সোমবার ভোজ্যতেল পরিশোধন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে তিন দিন পার হলেও কম দরের বোতলজাত সয়াবিন তেল বাজারে মিলছে না। আগের বাড়তি দরে বিক্রি করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

মিরপুর শাহ আলী কাঁচাবাজারের মেসার্স ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক ইমাম হোসেন বলেন, দুই দিন আগে তেলের চাহিদা নিয়েছেন কোম্পানির প্রতিনিধিরা, এখনও দেননি। কবে দেবেন তাও জানাননি।

তেজকুনিপাড়ার মাসুদা স্টোরের একজন বিক্রয়কর্মী বলেন, কোম্পানিগুলো দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার আগে খুচরা ব্যবসায়ীদের তুলনামূলক বেশি বোতলজাত তেল দিয়েছে। সেগুলো বিক্রি শেষ না হলে নতুন দামের তেল আসবে না।
কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, চাল আমদানিতে শুল্ক্ক কমানো হলো। সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানি হচ্ছে, তবে দাম কমছে না। ঘোষণা দিয়েও কম দরের তেল বাজারে ছাড়ছে না কোম্পানিগুলো। ভোক্তাকে নানাভাবে ঠকাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসন, খাদ্য, কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও ভোক্তা অধিদপ্তরের সমন্বিত বাজার তদারকি জোরদার করার পরামর্শ দেন তিনি।

দাম বাড়ল চিনির :মাত্র ১০ দিনের মাথায় আবারও বেড়েছে চিনির দাম। খুচরা পর্যায়ে এবার প্রতি কেজিতে বাড়ানো হয়েছে ৬ টাকা। তবে এ সময় পাম অয়েলের দাম কমানো হয়েছে লিটারে ৮ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অপরিশোধিত পাম অয়েল, আরবিডি পাম অলিন এবং চিনির আন্তর্জাতিক বাজারদর ও স্থানীয় উৎপাদন ব্যয় পর্যালোচনা করা হয়। পরে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ ও সংশ্নিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে এসব পণ্যের নতুন দর নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি খোলা চিনি ৯০ এবং প্যাকেটজাত চিনির দর ৯৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর খোলা চিনির কেজি ৭৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির দাম ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এর চেয়ে বেশি দরেই চিনি বিক্রি হয়েছে বাজারে। চিনি উৎপাদন ও পরিশোধনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ২৫ সেপ্টেম্বর সরকার খোলা চিনির কেজি ৮৪ এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি ৮৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। বাজারে সেই দরও কার্যকর হতে দেখা যায়নি। চিনি বিক্রি হয়েছে এর চেয়ে বেশি দামে। গতকাল কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, খুচরা ব্যবসায়ীরা খোলা চিনির কেজি ৯০ থেকে ৯২ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনির কেজি বিক্রি করছেন ৯৫ থেকে ১০০ টাকা দরে।

সরকার চিনির দাম বাড়ালেও পাম অয়েলের দাম কমিয়েছে। লিটারে ৮ টাকা কমিয়ে নতুন দর নির্ধারণ করেছে ১২৫ টাকা। যা এতদিন বিক্রি হয়েছে ১৩৩ টাকা দরে। ভোজ্যতেলে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধার সময়সীমা বাড়ল :এদিকে আমদানি, উৎপাদন এবং ব্যবসায়ী পর্যায়ে ভোজ্যতেলের ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে জানানো হয়, পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম অয়েলে ভ্যাট হার মওকুফ সুবিধার সময় আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। গত ১ অক্টোবর থেকেই তা কার্যকর বলে গণ্য হবে। ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব