মানিকগঞ্জের অন্যতম পদ্মা অধ্যুষিত উপজেলা হরিরামপুর। প্রায় পঞ্চাক দশক থেকে অনবদ্য পদ্মার ভাঙন কবলে ১৩টি ইউনিয়নের মধ্য ৯টি ইউনিয়নের ভৌগলিক আয়তনের অধিকাংশই নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তার মধ্যে অন্যতম কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের ১৩টি মৌজার মধ্য ১২টি মৌজাই নদী গর্ভে। চলতি বছরে বর্ষার পানি চলে যেতে না যেতেই মোহাম্মদপুর থেকে মালুচি পর্যন্ত প্রায় ৩.৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য ও প্রায় আধা কি.মি. প্রস্থ এলাকা জুড়ে জেগে উঠে বিস্তৃত চর। যার নৈর্সগিক সৌন্দর্য কয়েকদিনের মধ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এতে সারাদিনের কর্মযজ্ঞ শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে নির্মল হাওয়ায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী দর্শনার্থীরা এই পদ্মা পাড়ে ছুটে আসে। দিনে দিনে দর্শনার্থীদের ভিড় বাড়তে থাকায় জাহিদ খান নামের স্থানীয় এক তরুণ উদ্যোক্ততা নির্মাণ করেন ভাসমান রেস্টুরেন্ট ‘নিরিবিলি’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এই রেস্টুরেন্টের সামনে দিয়ে সারিবদ্ধভাবে দেয়া হয়েছে রঙ বেরঙের পাতকা। প্রতিটি পতাকার নিচে সী বিচের আদৌলে বসানো হয়েছে কাঠের তৈরি কিটকট (চেয়ার)। এতে করে প্রতিদিন বিকেলেই দর্শনার্থীরা ছুটে আসছে এই কালিতলা পদ্মাপাড়ে। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের চেয়ে শুক্র এবং শনিবারে সবচেয়ে বেশি ভিড় জমে স্থানটিতে। বিকেল হতে না হতেই মোটরসাইকেল, ইজিবাইক, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন যানবাহনে এখানে দূরদূরান্ত থেকে দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে। দর্শনার্থীদর পদাচারণায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের এই পদ্মা বিচ যেন রূপ নিয়েছে অনেকটাই কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের মতোই।
বরিশালের বাবুগঞ্জ থেকে বেড়াতে আসা আসাদুজ্জামান মিন্টু ও সাথী দম্পতি জানান, “প্রত্যন্ত এলাকার এই পদ্মাপাড়ে চর জেগে যে সৌন্দর্যে রূপ নিয়েছে, তাতে এখানে আসলে সবারই ভাল লাগবে। এক কথায় আমাদের কুয়াকাটার সাথে এখানকার সৌন্দর্যের তেমন পার্থক্য নেই।” ঘিওর উপজেলার বানিয়াজুরি এলাকার কলেজ ছাত্র রোহান আহমেদ জানালেন, “এক কথায় জায়গাটা অপুর্ব। এখানে এসে কক্সবাজার ও কুয়াকাটার ছোঁয়া অনুভব করছি।”
স্থানীয় যুবক রফিকুল ইসলাম বলেন, “মূলত বর্ষার পানি চলে যাওয়ার পরেই এখানে চর জেগে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। আস্তে আস্তে এই স্থানের পরিচিতি বৃদ্ধি পায়। ফলে এখানে বসানো হয় নিরিবিলি নামের একটি ভাসমান রেস্টুরেন্ট। এতে করেই স্থানটি যেন আরও সৌন্দর্যে রূপ নেয়।”
কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী বনি ইসলাম রূপক জানান, “প্রতিবছর এখানে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এখানে গত বর্ষার আগেও নদীর তীর রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ বছর বর্ষার পানি চলে যেতেই দীর্ঘ চর জেগে ওঠে। এতে করে বিকেলে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোকজন এখানে ঘুরতে আসে। লোক সমাগমের জন্যই স্থানীয় এক তরুণ এখানে ভাসমান রেস্টুরেন্ট দেয়। শুধু তাই নয়, এখানে সী বিচের আদৌলে সাজানোও হয়। ফলে দিন দিন এখানে দূরদূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে এবং স্থানটি বেশ পরিচিত পায়। আগত দর্শনার্থীদের যেন কোনো প্রকার অসুবিধা না হয়, সেজন্য আমরা সার্বিকভাবে দেখভাল করি।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব






















