০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্বপ্ন দেখার ও দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল আমার বাবার

“ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার বগাজান গ্রামে আমার জন্ম। বাবা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। আর্থিক টানাপোড়েন ছিল সংসারে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার ও দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল আমার বাবার। তিনি আমাদের পড়ালেখার জন্য উনার সকল সাধ-আহ্লাদ উৎসর্গ করেছিলেন। তিন ভাইকে পড়াশোনা করাতে বেশ ঋণের চাপেও পড়েন। আর বোনটি তখনো খুব ছোট। ঋণের ব্যাপারগুলো আমরা অনেক পরে এসে জানতে পারি।

আর যখন জানতে পারি তখন আমাদের মধ্যে এটাই স্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল যে, বাবাকে ঋণমুক্ত করে স্বস্তি দিব। বড় ভাই মাস্টার্স শেষ করে, চাকরির জন্য কালক্ষেপন না করে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। সফলতা আসে মেজ ভাই এর হাত ধরে। মেজ ভাই মৎস্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। আর আমারও স্বপ্ন হয়ে উঠে বিসিএস। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকেও পরিশ্রমের প্রতিদান দিয়েছেন।”

এভাবেই নিজের বিসিএস জয়ের গল্প শোনাচ্ছিলেন গোলাম কিবরিয়া নাঈম। তিনি সদ্য প্রকাশিত ৪৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

নাঈম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া তিনি ৪১ তম বিসিএস এ কৃষি ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

অথচ নাঈমের পথচলা সহজ ছিল না। ছোট থেকে দারিদ্রতার সাথেই তার বেড়ে ওঠা। ভালুকায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। সেই সময় পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে চাচা এবং মামার সহায়তা নিতে হয়েছিল।

চূড়ান্ত ফলাফলে এডমিন ক্যাডার দেখে অনুভূতি কেমন হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন পার্কে ছিলাম। ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। পূর্বের বিসিএস থেকে কৃষি ক্যাডার চলে আসায়, উত্তেজনার পারদ টা তেমন ছিল না। বিকেলে যখন রেজাল্ট হয়, আমি তখন পরিবার নিয়ে পার্কে দোলনায় দোল খাই। বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে ফলাফল দিবে। বন্ধুর ফোনে জানতে পারি রেজাল্ট হয়েছে। রেজাল্ট দেখে ঘাসের মধ্যেই বসে পরি। চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

নতুন যারা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেকোন সিরিজের বই পড়তে পারবেন, তবে একই বই বারবার পরে আত্মস্ত করার চেষ্টা করবেন। সব প্রশ্ন কমন আসে না। তবে কমন প্রশ্ন ভুল করা যাবে না কোন অবস্থাতেই। তাই বারবার পড়ার কোন বিকল্প নেই। পড়তে পড়তেই জানা হয়ে যাবে, কোন তথ্যগুলো মুখস্ত থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করে এই অভিজ্ঞতাটা অর্জন করে নিতে হবে নিজেকেই।

কর্মজীবনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে, দেশ গড়ার কাজে নিজের একটা স্বতন্ত্র ছাপ রেখে যাওয়া তার স্বপ্ন।

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি

ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

স্বপ্ন দেখার ও দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল আমার বাবার

প্রকাশিত : ০৯:১৬:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

“ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানার বগাজান গ্রামে আমার জন্ম। বাবা একজন কাঠ ব্যবসায়ী। আর্থিক টানাপোড়েন ছিল সংসারে। কিন্তু স্বপ্ন দেখার ও দেখানোর অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল আমার বাবার। তিনি আমাদের পড়ালেখার জন্য উনার সকল সাধ-আহ্লাদ উৎসর্গ করেছিলেন। তিন ভাইকে পড়াশোনা করাতে বেশ ঋণের চাপেও পড়েন। আর বোনটি তখনো খুব ছোট। ঋণের ব্যাপারগুলো আমরা অনেক পরে এসে জানতে পারি।

আর যখন জানতে পারি তখন আমাদের মধ্যে এটাই স্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল যে, বাবাকে ঋণমুক্ত করে স্বস্তি দিব। বড় ভাই মাস্টার্স শেষ করে, চাকরির জন্য কালক্ষেপন না করে বাবার ব্যবসার হাল ধরেন। সফলতা আসে মেজ ভাই এর হাত ধরে। মেজ ভাই মৎস্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন। আর আমারও স্বপ্ন হয়ে উঠে বিসিএস। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ আমাকেও পরিশ্রমের প্রতিদান দিয়েছেন।”

এভাবেই নিজের বিসিএস জয়ের গল্প শোনাচ্ছিলেন গোলাম কিবরিয়া নাঈম। তিনি সদ্য প্রকাশিত ৪৩ তম বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।

নাঈম শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এর আগে তিনি একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এছাড়া তিনি ৪১ তম বিসিএস এ কৃষি ক্যাডার হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।

অথচ নাঈমের পথচলা সহজ ছিল না। ছোট থেকে দারিদ্রতার সাথেই তার বেড়ে ওঠা। ভালুকায় এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ভর্তি হন নটরডেম কলেজে। সেই সময় পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে চাচা এবং মামার সহায়তা নিতে হয়েছিল।

চূড়ান্ত ফলাফলে এডমিন ক্যাডার দেখে অনুভূতি কেমন হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, তখন পার্কে ছিলাম। ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম। পূর্বের বিসিএস থেকে কৃষি ক্যাডার চলে আসায়, উত্তেজনার পারদ টা তেমন ছিল না। বিকেলে যখন রেজাল্ট হয়, আমি তখন পরিবার নিয়ে পার্কে দোলনায় দোল খাই। বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলাম আজকে ফলাফল দিবে। বন্ধুর ফোনে জানতে পারি রেজাল্ট হয়েছে। রেজাল্ট দেখে ঘাসের মধ্যেই বসে পরি। চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।

নতুন যারা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যেকোন সিরিজের বই পড়তে পারবেন, তবে একই বই বারবার পরে আত্মস্ত করার চেষ্টা করবেন। সব প্রশ্ন কমন আসে না। তবে কমন প্রশ্ন ভুল করা যাবে না কোন অবস্থাতেই। তাই বারবার পড়ার কোন বিকল্প নেই। পড়তে পড়তেই জানা হয়ে যাবে, কোন তথ্যগুলো মুখস্ত থাকা আবশ্যক। বিশেষ করে প্রশ্ন ব্যাংক সলভ করে এই অভিজ্ঞতাটা অর্জন করে নিতে হবে নিজেকেই।

কর্মজীবনে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে, দেশ গড়ার কাজে নিজের একটা স্বতন্ত্র ছাপ রেখে যাওয়া তার স্বপ্ন।

বিজনেস বাংলাদেশ/এমএইচটি