বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প, বঙ্গবন্ধু লার্নিং হাব উদ্বোধন, শিশুদের চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা, সিনেমা প্রদর্শনী, দোয়া মাহফিলসহ নানা ব্যতিক্রমী আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে দিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস। রোববার (১৭ মার্চ) দিনব্যাপী দিবসটি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়টি। এদিন সকাল ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের নেতৃত্বে একটি র্যালী বের করা হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে র্যালীটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ভাস্কর্যের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যরা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিক্ষক সমিতি আলাদাভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এসময় শিক্ষক সভাপতি অধ্যাপক ড. আবু তাহের ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহামুদুল হাসানসহ শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিষদ, ছাত্রলীগ, কর্মকর্তা পরিষদ পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। একই সময়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের হল রুমে শতাধিক শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজন করা হয় চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতা।
বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্যে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান।
প্রধান অতিথির বক্ত্যেবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আমরা তাঁকে স্মরণ করি। তার ৫৫ বছরের ছোট্ট একটি জীবনে ১৪ বছর তাকে কারাগারে কাটাতে হয়েছে। তিনি ২৪টি মামলায় ১৮ বার কারারুদ্ধ হয়েছেন। তিনি এসব করেছেন আমাদের জন্য, এদেশের জনগণের জন্য। একাত্তর সালে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার পর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে দেশ গড়ায় মনোযোগ দিলেন। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো উচ্চশিক্ষা বৃদ্ধির জন্য বঙ্গবন্ধু প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেন, যেটি কুদরত ই খুদা শিক্ষা কমিশন নামে পরিচিত।
তিনি বিজ্ঞান ভিত্তিক ও প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করেছেন। তিনি যখন দেশ গড়ায় নিয়োজিত তখন তাকে টেনেহিচঁড়ে নামানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, অপপ্রচার চালানো হয়েছে, ষড়যন্ত্র হয়েছে। এসবে যখন পারেনি তখন আমাদেরই কিছু সন্তান আমাদের নেতাকে হত্যা করেছে। তার মৃত্যুর পরও তাকেঁ নিয়ে বিভিন্ন দুর্নাম রটনো হয়েছিল। তার হত্যাকারীদের দেশে বিদেশে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দিয়ে পদে বসানো হয়েছিল। জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে এনে এদেশে স্থান দিয়েছিলেন। কারণ তারা বঙ্গবন্ধুর সিদ্ধান্ত, নেতৃত্বকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে ম্লান করা সম্ভব হয়নি। আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দিনরাত পরিশ্রম করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আজ আমাদের মধ্যে মিথ্যার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এতএত অর্জনকে নিয়ে যদি আমরা সমালোচনা করি তাহলে কিভাবে এগিয়ে যাব? মিথ্যার যে সংস্কৃতি সেখান আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে, তাহলে উন্নয়ন সম্ভব। আলোচনা সভা শেষে চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ৬ জনসহ মোট ১৬ জন শিশু শিক্ষার্থীর হাতে পুরষ্কার তুলে দেন উপাচার্যসহ অতিথিরা। ‘ক’ ও ‘খ’ দুইটি ক্যাটাগরিতে শতাধিক শিশু শিক্ষার্থী চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেন।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে তৃতীয়বারের মতো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। এতে শিশু, অর্থোপেডিক্স, চর্ম ও যৌনরোগ, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ এবং মেডিসিন বিষয়ে ৫টি বুথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন চিকিৎসক রোগীদের দিনব্যাপী সেবা প্রদান করছেন। রোববার বেলা ১২টায় মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেন উপাচার্য। এসময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন শোষিত, নির্যাতিত ও গরীব মানুষের জন্য সংগ্রাম করে গেছেন। কিন্তু অনেক বড় বড় দিবসে আমরা সেসব গরীব, মেহনতি মানুষদের ভুলে যাই। তিনি যাদের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে সেবা দানের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু স্মরণ করতে আমরা এই ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছি।
এদিন বেলা ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভার্চুয়াল ক্লাস রুম, উপাচার্যের কার্যালয়সহ আবাসিক হল সমূহে প্রদর্শন করা হয় মুজিব একটি জাতির রূপকার সিনেমাটি। পরে আড়াইটায় ‘বঙ্গবন্ধু লার্নিং হাব’ উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল মঈন। এস কিউ গ্রুপের সহযোগিতায় লার্নিং হাবটি করেছেন করেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উদ্বোধনকালে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামা, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মু. মুশফিকুর রহমানসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এস কিউ গ্রুপের প্রতিনিধিবৃন্দ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মহিউদ্দিন মোহাম্মদ তারিক ভূঁঞার সঞ্চলনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় একটু ব্যতিক্রমী আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে এদেশের শিক্ষার উন্নয়ন কাজ করেছেন। তার স্মরণে তারা নামেই একটি লার্নিং হাব তৈরি করেছেন শিক্ষার্থীদের জন্য। এটি প্রশংসীয় একটি উদ্যােগ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি ছিল তারা বইখাতা, ল্যাপটপ নিয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকতে পারে না। তখন থেকে আমি চিন্তা করেছি কিভাবে একটি রুম শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ দেয়া যায়। সে ভাবনা থেকে এখানে একটি ল্যাব ছিল সেটি সরিয়ে আমরা লার্নিং হাবটা করেছি।
আমরা সেজন্য ফান্ড আহ্বায়ন করলে আমাদের এস কিউ গ্রুপ আমাদের সাথে যোগাযোগ করে। তারাই আমাদের ফান্ড করেছেন। এখন থেকে শিক্ষার্থীরা এখানে বইখাতা, ল্যাপটপ নিয়ে আসতে পারবে। পরীক্ষার প্রস্তুতি, এ্যাসাইনমেন্ট করতে পারবে। তবে আমাদের সবার মনে রাখতে হবে এটি আমাদের সম্পদ তাই আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. শামসুন্নাহার, প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী, ডেপুটি লাইব্রেরিয়ান মুহিউদ্দিন আলমসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এসকিউ গ্রুপের প্রতিনিধি, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ।

























