০৫:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র

জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণা করে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার সুমনের জামিন হয়নি

জাল ভিসা দিয়ে বিদেশে লোক নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের বিভিন্ন অসহায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন মো. সাব্বির হোসেন সুমন নামে এক যুবক। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী দেবিদ্বারের ধামতী গ্রামের আবদুল মোমিন ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, প্রতারণা করে জাল ভিসার ফাঁদে ফেলে আমার মাধ্যমে আসা অসংখ্য লোককে পথে বসিয়ে দিয়েছে এই প্রতারক সুমন। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং তার কাছে আমার পাওনা বাবদ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিদ্রুত ফেরৎ পেতে আদালত সঠিক রায় দেবেন। তিনি জানান, অন্য মামলায় সুমন গ্রেফতার হলেও গতকাল ১ এপ্রিল ডিএমপির পল্টন মডেল থানায় আমি তার বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতারণা মামলা দায়ের করি, যার নম্বর ০৩। ধারা-৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ পেনাল কোড।

জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার ডেমরা থানার বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী সুমন মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, মালদোভা, রোমানিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের জাল স্টিকার ভিসার মাধ্যমে বহু মানুষকে ফাঁদে ফেলে কয়েক বছর যাবৎ এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। সে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সদস্য। তার প্রলোভনে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাহাকার করছে বহু তরুণ। তার কাছে বিদেশ যাওয়ার কথা বললে বা টাকা ফেরৎ চাইলে নানাভাবে হুঁমকি-ধমকি দেয়া হতো, এমনকি পোষা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে কাউকে কাউকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করতেন তিনি।

এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর স্বপন মাতব্বর নামে একজন সিএসজি চালক ইতালিতে লোক পাঠানোর উদ্দেশ্যে জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুমন-সহ ২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৩৪ ধারায় একটি মামলা করেন, যার এফআইআর নং-২৩ এবং জিআর নং-৪৫৩।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় ফ্যাক্টরির কলিং ভিসায় লোক পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোঃ খোরশেদ আহম্মেদ রানা গত ০৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে রাজধানীর বনানী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন, যার এফআইআর নং-১৩ এবং জিআর নং-৪৩৬।
এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহনগর গেয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সোমবার (২৫ মার্চ) পল্টন এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সুমন একজন প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধে আরও বড়ধরনের অভিযোগ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে বলেও জানান তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েকটি দেশের ভিসা করিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে সুমনকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকাসহ ৫ শতাধিক পাসপোর্ট দেন আল ফারিয়া রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া। কিন্তু তার প্রতিশ্রুত লোক না পাঠিয়ে এমনকি টাকাও ফেরৎ না দিয়ে অনেকদিন ধরে পলাতক ছিল সুমন। এর মধ্যে নানান কৌশলে বিভিন্ন অফিস থেকে ৪৬ লাখ টাকা ফেরৎ বা উদ্ধার করতে পারলেও এখনও তার কাছে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার পাওনা রয়েছে মামলায় উল্লেখ করেন মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া।

এছাড়াও মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ময়মনসিংহের গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, বিথিলা ট্রাভেলসের আক্তার হোসেনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, সাগরের কাছ থেকে ৩৪ লাখ, সেলিমের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা, মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, এ আর ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসিন আরাফাত রাসেলের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা-সহ আরও অনেকের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযুক্ত সুমন।

প্রতারণার শিকার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গোলাম মোস্তফা বলেন, সুমনের প্রতারণার কারণে আমরা শত শত মানুষ পথে বসে গেছি। পরিবারসহ দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছি। সরকার ও আদালতের কাছে আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই এবং আমাদের পাওনা টাকা উদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা সবকিছু করবেন বলে আমরা আশা করছি।

ট্যাগ :

সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র

জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণা করে ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেফতার সুমনের জামিন হয়নি

প্রকাশিত : ০৯:০৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল ২০২৪

জাল ভিসা দিয়ে বিদেশে লোক নেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে গ্রামের বিভিন্ন অসহায় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে প্রায় ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর অবশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন মো. সাব্বির হোসেন সুমন নামে এক যুবক। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের মৃত আবুল হাসেমের ছেলে।

আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী দেবিদ্বারের ধামতী গ্রামের আবদুল মোমিন ভুঁইয়ার ছেলে মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, প্রতারণা করে জাল ভিসার ফাঁদে ফেলে আমার মাধ্যমে আসা অসংখ্য লোককে পথে বসিয়ে দিয়েছে এই প্রতারক সুমন। আমি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই এবং তার কাছে আমার পাওনা বাবদ ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিদ্রুত ফেরৎ পেতে আদালত সঠিক রায় দেবেন। তিনি জানান, অন্য মামলায় সুমন গ্রেফতার হলেও গতকাল ১ এপ্রিল ডিএমপির পল্টন মডেল থানায় আমি তার বিরুদ্ধে আরেকটি প্রতারণা মামলা দায়ের করি, যার নম্বর ০৩। ধারা-৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১ পেনাল কোড।

জানা যায়, বর্তমানে ঢাকার ডেমরা থানার বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী সুমন মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, মালদোভা, রোমানিয়া-সহ বিভিন্ন দেশের জাল স্টিকার ভিসার মাধ্যমে বহু মানুষকে ফাঁদে ফেলে কয়েক বছর যাবৎ এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। সে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক দলের সদস্য। তার প্রলোভনে পা দিয়ে সর্বশান্ত হয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাহাকার করছে বহু তরুণ। তার কাছে বিদেশ যাওয়ার কথা বললে বা টাকা ফেরৎ চাইলে নানাভাবে হুঁমকি-ধমকি দেয়া হতো, এমনকি পোষা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে কাউকে কাউকে শারিরীকভাবে লাঞ্চিত করতেন তিনি।

এর মধ্যে যাত্রাবাড়ীর স্বপন মাতব্বর নামে একজন সিএসজি চালক ইতালিতে লোক পাঠানোর উদ্দেশ্যে জাল ভিসা দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সুমন-সহ ২ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৩৪ ধারায় একটি মামলা করেন, যার এফআইআর নং-২৩ এবং জিআর নং-৪৫৩।

অন্যদিকে মালয়েশিয়ায় ফ্যাক্টরির কলিং ভিসায় লোক পাঠানোর কথা বলে ১৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোঃ খোরশেদ আহম্মেদ রানা গত ০৭ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে রাজধানীর বনানী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন, যার এফআইআর নং-১৩ এবং জিআর নং-৪৩৬।
এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহনগর গেয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সোমবার (২৫ মার্চ) পল্টন এলাকা থেকে সুমনকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠায়। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃত সুমন একজন প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তার বিরুদ্ধে আরও বড়ধরনের অভিযোগ ও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যাবে বলেও জানান তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কয়েকটি দেশের ভিসা করিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সময়ে সুমনকে প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ টাকাসহ ৫ শতাধিক পাসপোর্ট দেন আল ফারিয়া রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া। কিন্তু তার প্রতিশ্রুত লোক না পাঠিয়ে এমনকি টাকাও ফেরৎ না দিয়ে অনেকদিন ধরে পলাতক ছিল সুমন। এর মধ্যে নানান কৌশলে বিভিন্ন অফিস থেকে ৪৬ লাখ টাকা ফেরৎ বা উদ্ধার করতে পারলেও এখনও তার কাছে প্রায় ১ কোটি ৭৮ লাখ ৫০ হাজার পাওনা রয়েছে মামলায় উল্লেখ করেন মোঃ ফয়েজ উল্লাহ ভূঁইয়া।

এছাড়াও মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ময়মনসিংহের গোলাম মোস্তফার কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, বিথিলা ট্রাভেলসের আক্তার হোসেনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, সাগরের কাছ থেকে ৩৪ লাখ, সেলিমের কাছ থেকে ১৮ লাখ টাকা, মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা, এ আর ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াসিন আরাফাত রাসেলের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা-সহ আরও অনেকের কাছ থেকে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে অভিযুক্ত সুমন।

প্রতারণার শিকার ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের গোলাম মোস্তফা বলেন, সুমনের প্রতারণার কারণে আমরা শত শত মানুষ পথে বসে গেছি। পরিবারসহ দূর্বিসহ জীবন-যাপন করছি। সরকার ও আদালতের কাছে আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই এবং আমাদের পাওনা টাকা উদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তারা সবকিছু করবেন বলে আমরা আশা করছি।