১০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

সিলেটে আকস্মিক বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত, রাস্তাঘাট আর বসতবাড়ি বিধ্বস্ত

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে সিলেটে উজান ভারত থেকে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর সহ সিলেটের অন্ততঃ ৬টি উপজেলা ইতোমধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে এসব উপজেলায় হু হু করে বাড়তে শুরু করে পানি। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। রাতে খবর পাওয়া যায়- অনেকের ঘরে গলা পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে।

ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে অগ্রিম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষ। অনেকে রাতে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে ভার্চুয়াল মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

গতরাত (২৯ মে) বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সোসাল নেটওর্য়াক ছিল খুবল সবল।

কানাইঘাট উপজেলার রোবেল আহমদ হৃদয় নামের একজন পোস্ট করেছেন”নিয়তির কাছে হেরে গেলাম”।

জৈন্তাপুরের উপজেলার বোরহান উদ্দীন নামের একজন পোস্ট করেছেন “আল্লাহ ঘরের ভিতরে কোমর পানি এ-র মাজে এতো শ্রুত আল্লাহ তুমি একমাত্র বাসা নির মালিক ছুট ছুট বাচ্চা ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নাই আল্লাহ” গতরাতের তিনি পোষ্ট করেন,”সর্বশেষ ঘরের খাটের উপর”

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ময়নারহা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান সাজন নামে এক যুবক সাহায্যের আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট করেন। বুধবার (২৯ মে) রাত ১১টা ৯ মিনিটে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন- ‘হায়রে ফেরী ঘাটের নৌকা, একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি’।

‘লাশ উদ্ধার অইমু হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না, হয়তো এইটা শেষ পোস্ট’—এভাবেই বাঁচার আকুতি জানান সাজিদুর সাজন।

এর আগে রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাজিদুর রহমান সাজন লেখেন, ‘আমি দৌলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা দিলু মিয়ার পোয়া, বাড়ি ফেরিঘাট। আমরারে কেউ বাঁচাও, আমরার মরণ সামনে, কেউ বাঁচাও আমরারে, মা ভাই লইয়া আটকিগেছি’।

আকুতি জানিয়ে সাজিদুর রহমান আরও লেখেন, ‘অনেক স্রোতের কারণে কেউ উদ্ধারের জন্য আসতে পারছে না, সুন্দর এই ভুবনে বাঁচার অনেক ইচ্ছা। ’

সাজনের মতো জৈন্তাপুর উপজেলার আরও কয়েকটি জায়গা থেকে উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় আটকে পড়া কয়েকজন নৌকা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

জৈন্তাপুরের ময়নাহাটি খেয়াঘাট এলাকার আহমেদ নাইম রাত সাড়ে দশটায় ফেসবুকে লেখেন- ‘একটা ইঞ্জিন নৌকার দরকার, কেউ বাঁচাও আমরারে’।

জানা গেছে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এই তিন উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল। অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। পানিবন্দি মানুষরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষনজকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এদিকে, সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইনসহ প্রত্যেকটি নদীতে পানি বেড়েছে। বেশিরভাগ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে পানি।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS

 

ট্যাগ :

সিলেটে আকস্মিক বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত, রাস্তাঘাট আর বসতবাড়ি বিধ্বস্ত

প্রকাশিত : ০৪:৫২:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সৃষ্ট প্রবল বৃষ্টিতে সিলেটে উজান ভারত থেকে আসা পানির ঢল ও অতিবৃষ্টির কারণে কানাইঘাট,গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর সহ সিলেটের অন্ততঃ ৬টি উপজেলা ইতোমধ্যে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে। এর মধ্যে গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাটে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ।

মঙ্গলবার বিকাল থেকে এসব উপজেলায় হু হু করে বাড়তে শুরু করে পানি। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। রাতে খবর পাওয়া যায়- অনেকের ঘরে গলা পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে।

ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটে অগ্রিম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষ। অনেকে রাতে নৌকা নিয়ে তাদের উদ্ধার করতে ভার্চুয়াল মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।

গতরাত (২৯ মে) বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সোসাল নেটওর্য়াক ছিল খুবল সবল।

কানাইঘাট উপজেলার রোবেল আহমদ হৃদয় নামের একজন পোস্ট করেছেন”নিয়তির কাছে হেরে গেলাম”।

জৈন্তাপুরের উপজেলার বোরহান উদ্দীন নামের একজন পোস্ট করেছেন “আল্লাহ ঘরের ভিতরে কোমর পানি এ-র মাজে এতো শ্রুত আল্লাহ তুমি একমাত্র বাসা নির মালিক ছুট ছুট বাচ্চা ঘরে খাওয়ার মতো কিছু নাই আল্লাহ” গতরাতের তিনি পোষ্ট করেন,”সর্বশেষ ঘরের খাটের উপর”

সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ময়নারহা খেয়াঘাট এলাকার বাসিন্দা সাজিদুর রহমান সাজন নামে এক যুবক সাহায্যের আকুতি জানিয়ে ফেসবুকে এমন পোস্ট করেন। বুধবার (২৯ মে) রাত ১১টা ৯ মিনিটে ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে তিনি লিখেছেন- ‘হায়রে ফেরী ঘাটের নৌকা, একটা নৌকা নাইনি বাছাইবার লাগি’।

‘লাশ উদ্ধার অইমু হয়তো, জীবিত উদ্ধার অইতে পারতাম না, হয়তো এইটা শেষ পোস্ট’—এভাবেই বাঁচার আকুতি জানান সাজিদুর সাজন।

এর আগে রাত ১০টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে সাজিদুর রহমান সাজন লেখেন, ‘আমি দৌলা চেয়ারম্যানের ভাতিজা দিলু মিয়ার পোয়া, বাড়ি ফেরিঘাট। আমরারে কেউ বাঁচাও, আমরার মরণ সামনে, কেউ বাঁচাও আমরারে, মা ভাই লইয়া আটকিগেছি’।

আকুতি জানিয়ে সাজিদুর রহমান আরও লেখেন, ‘অনেক স্রোতের কারণে কেউ উদ্ধারের জন্য আসতে পারছে না, সুন্দর এই ভুবনে বাঁচার অনেক ইচ্ছা। ’

সাজনের মতো জৈন্তাপুর উপজেলার আরও কয়েকটি জায়গা থেকে উজানের ঢলে আকস্মিক বন্যায় আটকে পড়া কয়েকজন নৌকা চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন।

জৈন্তাপুরের ময়নাহাটি খেয়াঘাট এলাকার আহমেদ নাইম রাত সাড়ে দশটায় ফেসবুকে লেখেন- ‘একটা ইঞ্জিন নৌকার দরকার, কেউ বাঁচাও আমরারে’।

জানা গেছে, ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে সিলেটের গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিয়ানীবাজার ও বিশ্বনাথের কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে এই তিন উপজেলার বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল। অনেক সড়ক ডুবে যাওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। পানিবন্দি মানুষরা বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে উঠতে শুরু করেছেন।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষনজকে নিয়ে আসা হচ্ছে। এ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।

এদিকে, সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি-গোয়াইনসহ প্রত্যেকটি নদীতে পানি বেড়েছে। বেশিরভাগ পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে পানি।

বিজনেস বাংলাদেশ/DS