০৪:২১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪

সিলেটে বন্যার পানি কোথাও কমছে কোথাও বাড়ছে, দুর্ভোগ অব্যাহত

সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমায় প্লাবিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। তবে জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। এখনও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, মাছুদিঘীরপাড়, উপশহর, যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার এলাকার রাস্তাঘাটে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানি আগের থেকে কিছুটা কমেছে। তবে বৃষ্টি শুরু হলে আবার বেড়ে যাবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানির উচ্চতা কিছুটা নিচে নেমেছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কোথাও পানি কমেছে, আবার কোথাও বেড়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্ট ছাড়া অন্য নদ-নদীগুলোর পানি আগের তুলনায় নেমেছে। বন্যার্ত এলাকায় প্রশাসনের ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখছে।

সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী শাহিদ হাতিমী বলেন, আমার উপজেলার কিছু মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নেমেছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। আমি সিলেট শহরে বাসা নিয়ে থাকি। ঈদের আগেরদিন এলাকায় এসেছিলাম। গিয়ে দেখি আমার বাসার আসবাবপত্রসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিলেট নগরীর উপশহরের ডি ব্লকের বাসিন্দা আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের দিন বাসার নিচ তলায় পানি প্রবেশ করেছিল। পানির জন্য ঠিকমত ঈদের আনুষ্ঠিকতা করা হয়নি। বৃহস্পতিবারও বাসায় পানি রয়েছে। বন্দির মতো দিনকাল যাচ্ছে, তবে পানি একটু কমছে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেট জেলা-নগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ২২৩ টি গ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন মানুষ। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট জেলার সাথে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সকল সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যার কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারতেছেন না।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টির ওপর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। পাহাড়ি ঢল নামার ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার রাতে কোনো বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়নি। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

জনপ্রিয়

ফরিদপুর চর অঞ্চল ও কৃষকদের মাঝে জেলা প্রসাশকের গামবুট বিতরণ

সিলেটে বন্যার পানি কোথাও কমছে কোথাও বাড়ছে, দুর্ভোগ অব্যাহত

প্রকাশিত : ০২:৪৩:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ জুন ২০২৪

সিলেটে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমায় প্লাবিত এলাকার পানি কিছুটা কমেছে। তবে জেলার কোথাও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। এখনও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় সিলেটের প্রধান নদী সুরমা-কুশিয়ারার পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর তালতলা, জামতলা, মাছুদিঘীরপাড়, উপশহর, যতরপুর, সোবাহানীঘাট, মীরাবাজার, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, তোপখানা, বেতেরবাজার এলাকার রাস্তাঘাটে হাঁটু সমান পানি রয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, পানি আগের থেকে কিছুটা কমেছে। তবে বৃষ্টি শুরু হলে আবার বেড়ে যাবে।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্য মতে, সিলেটের প্রধান দুটি নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গোয়াইনঘাটের সারি নদীর পানি সকাল থেকে বিপৎসীমার নিচে রয়েছে। পানির উচ্চতা কিছুটা নিচে নেমেছে।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, সিলেটের বন্যা পরিস্থিতির কোথাও পানি কমেছে, আবার কোথাও বেড়েছে। তবে কুশিয়ারা নদীর একটি পয়েন্ট ছাড়া অন্য নদ-নদীগুলোর পানি আগের তুলনায় নেমেছে। বন্যার্ত এলাকায় প্রশাসনের ত্রাণ বিরতণ অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির ওপর সর্তক দৃষ্টি রাখছে।

সিলেটের জৈন্তাপুর এলাকার বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী শাহিদ হাতিমী বলেন, আমার উপজেলার কিছু মানুষের বাড়িঘর থেকে পানি নেমেছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে এখনও বন্যার পানি রয়েছে। আমি সিলেট শহরে বাসা নিয়ে থাকি। ঈদের আগেরদিন এলাকায় এসেছিলাম। গিয়ে দেখি আমার বাসার আসবাবপত্রসহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস পানিতে তলিয়ে গেছে।

সিলেট নগরীর উপশহরের ডি ব্লকের বাসিন্দা আহমেদ চৌধুরী বলেন, ঈদের দিন বাসার নিচ তলায় পানি প্রবেশ করেছিল। পানির জন্য ঠিকমত ঈদের আনুষ্ঠিকতা করা হয়নি। বৃহস্পতিবারও বাসায় পানি রয়েছে। বন্দির মতো দিনকাল যাচ্ছে, তবে পানি একটু কমছে।

গতকাল বিকাল পর্যন্ত সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, মহানগরীর ২৩টি ওয়ার্ড ও জেলার ১০৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সিলেট জেলা-নগর মিলিয়ে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রের মধ্যে মহানগরে ৮০টি। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯ হাজার ৯৫৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়নের ২২৩ টি গ্রামের ১ লাখ ২৩ হাজার ৮০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। তার মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ১ হাজার ৪৪০ জন মানুষ। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ডুবে যাওয়ায় সিলেট জেলার সাথে গোয়াইনঘাট উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সবচেয়ে বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ১১৩টি গ্রামের ৯৫ হাজার ৫০০ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। উপজেলার বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক বাদে বাকি সকল সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। যার কারণে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজন নৌকা ছাড়া বাড়ি থেকে বের হতে পারতেছেন না।

সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ সাংবাদিকদের বলেন, সিলেটে বৃষ্টিপাত কম হওয়া ও ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে আসায় নদ-নদীর পানি কিছুটা কমেছে। ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টির ওপর বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির বিষয়টি নির্ভর করছে। পাহাড়ি ঢল নামার ফলে নদ-নদীর পানি বেড়ে গিয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১০ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে বুধবার রাতে কোনো বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হয়নি। সিলেটে আগামী দুই দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে