১১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

ছাগলকাণ্ডে সব কূল হারাচ্ছেন মতিউর

প্রথমে এনবিআর পরে সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী ব্যাংকটির পর্ষদ সভা শেষে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) শুল্ক -১ শাখার উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এদিকে মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৯৪ সালে বাণিজ্য ক্যাডার (১১তম ব্যাচ) হিসেবে ড. মতিউর রহমানসহ সাত জন এক সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। একই সঙ্গে কাস্টমস ক্যাডারে যোগদান করেন ১৯ জন ক্যাডার। ওই সাত জন হলো বহিরাগত ক্যাডার। যেহেতু কাস্টমস ক্যাডারের ছিল না এই সাত জন, এ কারণে তাদেরকে সরানোর জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের দুই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা থাকায় এনবিআরের চেয়ারম্যানকে তোয়াক্কা করতেন না মতিউর।

বর্তমান শেয়ার বাজার মতিউর নিয়ন্ত্রণ করছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বড় হোতা মতিউর। বন্ডে কাজ করতো মতিউর। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ক কাজ করতো। কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট থাকায় বহু মামলা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিস্পত্তি করে দিতেন। বিমান বন্দর থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথেও জড়িত মতিউর। ঢাকা এয়ারপোর্ট, যশোর এয়ারপোর্ট, বেনাপল স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে বিদেশে পাচার করেছেন।

মতিউর তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার নামে পুঁজিবাজার এবং এর বাইরের প্রায় ডজনখানেক কোম্পানির অংশীদারত্বের নথিপত্র এসেছে। এসব নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজীপুরের গ্লোবাল সু ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং কোম্পানিতে তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার মালিকানা রয়েছে।

আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে কৌশলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নেন মতিউর রহমান। আর গ্লোবাল ম্যাক্সের মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজে। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটিতেও মালিকানা রয়েছে তার। শুধু ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নয়, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন নামে পুঁজিবাজারের আরেক কোম্পানিতে ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ শেয়ার রয়েছে।

মতিউর রহমান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন। তার পারিবারিক মালিকানাধীন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের হেড অফিসও ওই এলাকায়। এ ছাড়া মতিউর রহমানের ছেলে অর্ণবের নামে অর্ণব ট্রেডিং নামেও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মেয়ের ল্যাম্বারগিনি নামে বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহারের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যার দাম প্রায় ৪ লাখ কানাডিয়ান ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।

শুধু রাজধানী ঢাকা বা গাজীপুরে নয়, মতিউর রহমান অঢেল সম্পত্তি কিনেছেন শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীতেও। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ড. মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

ছাগলকাণ্ডে সব কূল হারাচ্ছেন মতিউর

প্রকাশিত : ১০:১১:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ জুন ২০২৪

প্রথমে এনবিআর পরে সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত-সমালোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী ব্যাংকটির পর্ষদ সভা শেষে গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনালের সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।

রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের (আইআরডি) শুল্ক -১ শাখার উপসচিব মকিমা বেগম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই আদেশ জারি করা হয়। এদিকে মতিউর রহমানের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সম্প্রতি ঈদুল আজহার আগে মতিউর রহমানের ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এর পর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকার বিষয়ে একের পর এক খবর প্রকাশিত হতে থাকে।

১৯৯৪ সালে বাণিজ্য ক্যাডার (১১তম ব্যাচ) হিসেবে ড. মতিউর রহমানসহ সাত জন এক সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। একই সঙ্গে কাস্টমস ক্যাডারে যোগদান করেন ১৯ জন ক্যাডার। ওই সাত জন হলো বহিরাগত ক্যাডার। যেহেতু কাস্টমস ক্যাডারের ছিল না এই সাত জন, এ কারণে তাদেরকে সরানোর জন্য বহুবার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সম্ভব হয়নি। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সরকারের দুই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতা থাকায় এনবিআরের চেয়ারম্যানকে তোয়াক্কা করতেন না মতিউর।

বর্তমান শেয়ার বাজার মতিউর নিয়ন্ত্রণ করছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির বড় হোতা মতিউর। বন্ডে কাজ করতো মতিউর। বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে চুক্তি বিষয়ক কাজ করতো। কাস্টমস এক্সাইজ ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট থাকায় বহু মামলা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে নিস্পত্তি করে দিতেন। বিমান বন্দর থেকে স্বর্ণ চোরাচালানের সাথেও জড়িত মতিউর। ঢাকা এয়ারপোর্ট, যশোর এয়ারপোর্ট, বেনাপল স্থলবন্দর ও চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা ইনকাম করে বিদেশে পাচার করেছেন।

মতিউর তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার নামে পুঁজিবাজার এবং এর বাইরের প্রায় ডজনখানেক কোম্পানির অংশীদারত্বের নথিপত্র এসেছে। এসব নথিপত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গাজীপুরের গ্লোবাল সু ও গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং কোম্পানিতে তার দুই সন্তান অর্ণব ও ইপসিতার মালিকানা রয়েছে।

আর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে এই দুই প্রতিষ্ঠানের নামে কৌশলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নেন মতিউর রহমান। আর গ্লোবাল ম্যাক্সের মালিকানা রয়েছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি এসকে ট্রিমস ইন্ডাস্ট্রিজে। ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান শাহজালাল ইক্যুইটিতেও মালিকানা রয়েছে তার। শুধু ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নয়, অ্যাসোসিয়েট অক্সিজেন নামে পুঁজিবাজারের আরেক কোম্পানিতে ২৭ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ শেয়ার রয়েছে।

মতিউর রহমান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন। তার পারিবারিক মালিকানাধীন বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের হেড অফিসও ওই এলাকায়। এ ছাড়া মতিউর রহমানের ছেলে অর্ণবের নামে অর্ণব ট্রেডিং নামেও একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মেয়ের ল্যাম্বারগিনি নামে বিলাসবহুল গাড়ির ব্যবহারের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। যার দাম প্রায় ৪ লাখ কানাডিয়ান ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।

শুধু রাজধানী ঢাকা বা গাজীপুরে নয়, মতিউর রহমান অঢেল সম্পত্তি কিনেছেন শ্বশুরবাড়ি নরসিংদীতেও। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও ড. মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে