০৯:০৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির কোনো খবর নেই, বলছে হামাস

গাজায় আটক বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে শনিবার তেল আবিবের রাজপথে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: এএফপি

গাজায় আটক বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে শনিবার তেল আবিবের রাজপথে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: এএফপি
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এছাড়া সংঘাতের অবসানে হামাস আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।

অন্যদিকে লাখো ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী আবারও দেশটির তেল আবিবের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা সরকারের কাছে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের বাঁচানোর এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার দাবি জানায়।

রোববার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

লেবাননে অবস্থান করা হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ওসামা হামদান শনিবার বলেছেন, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী প্রায় নয় মাসের সংঘাতের অবসান ঘটায় এমন যেকোনো যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে এখনও প্রস্তুত।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে হামদান বলেন, ‘হামাস যেকোনো প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত যেটাতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে (ইসরায়েলি সেনাদের) ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্দি বিনিময় চুক্তি নিশ্চিত করে।’

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আরব মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা এ পর্যন্ত যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজায় সংঘাতরত উভয় পক্ষই এই অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।

হামাস বরাবরই বলেছে, যেকোনো চুক্তির জন্য অবশ্যই গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাসকে ‘নির্মূল’ না করা পর্যন্ত যুদ্ধে তারা কেবল সাময়িক বিরতি গ্রহণ করবে।

ইসরায়েলের শর্ত মেনে নিতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও অভিযুক্ত করেন হামদান।

এদিকে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার দাবিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী আবারও দেশটির তেল আবিবের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তেল আবিবে সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভের আয়োজকরা অনুমান করেছেন, ১ লাখ ৩০ হাজার ইসরায়েলি শনিবার রাতের এই বিক্ষোভে যোগ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজায় আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জনগণের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন। গাজায় আটক বন্দির এক অজ্ঞাত আত্মীয় বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুকে আবার চুক্তিটিকে নষ্ট করতে দেবেন না। যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নেতানিয়াহুর জেদ আমাদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে ইসরায়েলি সরকারের হাতে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের নিহত হওয়া। জনগণ বোঝে, নেতানিয়াহু ব্যক্তিগত কারণে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। কারণ চুক্তিতে পৌঁছানোর ফলে (যুদ্ধ বন্ধ হলে) ইসরায়েলে আগাম নির্বাচন হবে এবং তার শাসনের অবসান ঘটবে।’

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

একইসঙ্গে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির কোনো খবর নেই, বলছে হামাস

প্রকাশিত : ১১:০০:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪

গাজায় আটক বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তির দাবিতে শনিবার তেল আবিবের রাজপথে বিক্ষোভ করছেন ইসরায়েলিরা। ছবি: এএফপি
গাজায় চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। এছাড়া সংঘাতের অবসানে হামাস আলোচনা করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছে গোষ্ঠীটি।

অন্যদিকে লাখো ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী আবারও দেশটির তেল আবিবের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা সরকারের কাছে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের বাঁচানোর এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার দাবি জানায়।

রোববার (৩০ জুন) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।

লেবাননে অবস্থান করা হামাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ওসামা হামদান শনিবার বলেছেন, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠী প্রায় নয় মাসের সংঘাতের অবসান ঘটায় এমন যেকোনো যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে এখনও প্রস্তুত।

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে হামদান বলেন, ‘হামাস যেকোনো প্রস্তাবের বিষয়ে ইতিবাচকভাবে কাজ করতে প্রস্তুত যেটাতে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, গাজা উপত্যকা থেকে (ইসরায়েলি সেনাদের) ব্যাপকভাবে প্রত্যাহার এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্দি বিনিময় চুক্তি নিশ্চিত করে।’

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত আরব মধ্যস্থতাকারীদের প্রচেষ্টা এ পর্যন্ত যেকোনো ধরনের যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। গাজায় সংঘাতরত উভয় পক্ষই এই অচলাবস্থার জন্য একে অপরকে দায়ী করেছে।

হামাস বরাবরই বলেছে, যেকোনো চুক্তির জন্য অবশ্যই গাজায় চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটাতে হবে এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যদিকে ইসরায়েল বলেছে, ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসনকারী হামাসকে ‘নির্মূল’ না করা পর্যন্ত যুদ্ধে তারা কেবল সাময়িক বিরতি গ্রহণ করবে।

ইসরায়েলের শর্ত মেনে নিতে হামাসের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকেও অভিযুক্ত করেন হামদান।

এদিকে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের বাঁচাতে এবং যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার দাবিতে হাজার হাজার ইসরায়েলি বিক্ষোভকারী আবারও দেশটির তেল আবিবের রাজপথে নেমে বিক্ষোভ করেছেন। তেল আবিবে সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভের আয়োজকরা অনুমান করেছেন, ১ লাখ ৩০ হাজার ইসরায়েলি শনিবার রাতের এই বিক্ষোভে যোগ দিয়ে শহরের কেন্দ্রস্থলে জড়ো হয়েছিলেন।

এছাড়া ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাইরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গাজায় আটক ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা জনগণের উদ্দেশে বিবৃতি দিয়েছেন। গাজায় আটক বন্দির এক অজ্ঞাত আত্মীয় বলেছেন, ‘নেতানিয়াহুকে আবার চুক্তিটিকে নষ্ট করতে দেবেন না। যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নেতানিয়াহুর জেদ আমাদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া মানে ইসরায়েলি সরকারের হাতে গাজায় আটক থাকা বন্দিদের নিহত হওয়া। জনগণ বোঝে, নেতানিয়াহু ব্যক্তিগত কারণে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছেন। কারণ চুক্তিতে পৌঁছানোর ফলে (যুদ্ধ বন্ধ হলে) ইসরায়েলে আগাম নির্বাচন হবে এবং তার শাসনের অবসান ঘটবে।’

মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

এছাড়া ইসরায়েলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরায়েলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

একইসঙ্গে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে ইসরায়েল।

বিজনেস বাংলাদেশ/একে