০৯:২১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বদলির আদেশ অমান্য করায় স্ট্যান্ড রিলিজ, তবুও বহাল তবিয়তে পাবনা সমাজসেবা কর্মকর্তা

মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বদলির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে পূর্বের কর্মস্থলেই অফিস করছেন পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাশেদুল কবীর। এর ফলে তাকে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবুও নিয়মিতভাবেই ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি, নিচ্ছেন সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। তবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এতে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে অফিসটিতে।
নথি বলছে, চলতি বছরের গত ২৯ এপ্রিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সমাজসেবা পাবনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবীর সহ অন্যান্য কার্যালয়ের মোট বারোজন কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। এতে এ কর্মকর্তাকে পাবনার পাশ্ববর্তী জেলা নাটোরের জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এবং নাটোরের উপপরিচালক মো.মোস্তাফিজুর রহমানকে পাবনায় বদলি করা হয়। এরপর ১৫ মে সমাজ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন)  মোস্তাফা মাহমুদ সরোয়ার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই মাসের ২১ তারিখের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এ পত্রে বলা হয়, নির্দেশ অমান্য করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করা কর্মকর্তারা ২৩ মে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন।
রবিবার (১৪ জুলাই) পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে উপপরিচালক রাশেদুল কবীরকে পাওয়া যায়নি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অসুস্থ্যতাজনিত কারণে তিনি এদিন অফিসে আসেননি। তবে তিনি  নির্দেশ অমান্য করে এখনো পাবনাতেই নিয়মিত অফিস করছেন। অথচ সার্ভিস রুলের ৮১ ধারা অনুযায়ী, বদলি আদেশের পর নতুন কর্মস্থলে যোগদানের প্রস্তুতির জন্য একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ছয় দিন সময় পান। একই শহরে বদলি হলে প্রস্তুতির সময় পান না। দপ্তরের আদেশ অনুযায়ী ওই অফিসের সহাকারী পরিচালক খন্দকার গোলাম সরওয়ারকে ভারপ্রাপ্ত করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। বদলিকৃত কর্মস্থলেও যোগদান করেননি। উল্টো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বদলির নির্দেশের তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে বদলির আগের কর্মস্থলেই অফিস করছেন। ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি ও নিচ্ছেন সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। জানা গেছে গত বছরেও বদলির আদেশ হয় এই কর্মকর্তার। তদবির করে সে আদেশ বাতিল করান তিনি। এতে প্রশ্ন উঠেছে রাশেদুল কবীর কি এমন অতিরিক্ত সুবিধা পান এই অফিসে? যেটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না এই কর্মকর্তা।
ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব বুঝে পাবার ক্ষেত্রে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক খন্দকার গোলাম সরওয়ার বলেন, আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে পাইনি। স্যার (রাশেদুল কবীর) জানিয়েছেন ওই বদলির আদেশ নাকি সংশোধন হবে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, অবমুক্ত হবার পর পনেরো দিনের মত তিনি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। এতে করে উপজেলা থেকে শুরু করে সমস্ত পর্যায়ের নানারকম বিল, ট্রেনিং ও টেন্ডার প্রক্রিয়া থেমে যায়। সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। পরে এগুলো নিয়ে সমালোচনা উঠলে আবার নিয়মিতই সব ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। আগেরমত বহাল তবিয়তেই অফিস করছেন। সূত্র বলছে, বিভিন্ন প্রোজেক্ট থেকে নয় ছয় করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন রাশেদুল কবীর। শুধুমাত্র নামে বিভিন্ন ট্রেনিং দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিএডিএ বিল থেকে শুরু করে যে সম্মানি বরাদ্দ থাকে তা নামমাত্র একটি অংশ দিয়ে পুরোটাই আত্মসাৎ করেন তিনি। ক্যান্সার চিকিৎসা সহায়তা সেবা ও নামে বেনামে দুস্থ বা অসহায়দের বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা দেবার নামেও লুট করেছেন বিপুল অর্থ। তবে তিনি কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী হওয়ায় সেগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রাখেন না। ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি এসব কর্মকান্ড চালিয়ে থাকেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না বলেও জানায় ওই সূত্র।
তবে কি অনিয়মের মাধ্যমে গড়া এমন সুবিধার রাজ্য ছেড়ে না যেতেই বার বার মন্ত্রণালয় ও অফিসের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান রাশেদুল কবীর? অবমুক্ত হবার পরও কিভাবে বহাল তবিয়তে অফিস করছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছেলের এস.এসসি পরীক্ষা বিবেচনায় বদলির আদেশের বিপরীতে মাত্র কয়েকটি মাস সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে তাকে অফিসের সকল কার্যক্রম পরিচালনার অনুমিত দিয়েছেন। মৌখিক অনুমতিতে এভাবে অফিস পরিচালনা করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি তাদের অনুমতিতেই অফিস করছি।
এব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্দেশ অমান্য করে অফিস করার সুযোগ নেই। স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি আমি জানি না, খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।
ট্যাগ :

শরীয়তপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ আসলামের মামলা প্রত্যাহারের দাবি

বদলির আদেশ অমান্য করায় স্ট্যান্ড রিলিজ, তবুও বহাল তবিয়তে পাবনা সমাজসেবা কর্মকর্তা

প্রকাশিত : ০৮:১৫:২২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ জুলাই ২০২৪
মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বদলির নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে বহাল তবিয়তে পূর্বের কর্মস্থলেই অফিস করছেন পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. রাশেদুল কবীর। এর ফলে তাকে অবমুক্ত করা হয়েছে। তবুও নিয়মিতভাবেই ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি, নিচ্ছেন সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। তবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। এতে সেবাদানে স্থবিরতা নেমে এসেছে অফিসটিতে।
নথি বলছে, চলতি বছরের গত ২৯ এপ্রিল সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সমাজসেবা পাবনা জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাশেদুল কবীর সহ অন্যান্য কার্যালয়ের মোট বারোজন কর্মকর্তাকে বদলির আদেশ দেয়া হয়। এতে এ কর্মকর্তাকে পাবনার পাশ্ববর্তী জেলা নাটোরের জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে এবং নাটোরের উপপরিচালক মো.মোস্তাফিজুর রহমানকে পাবনায় বদলি করা হয়। এরপর ১৫ মে সমাজ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (প্রশাসন)  মোস্তাফা মাহমুদ সরোয়ার স্বাক্ষরিত একটি পত্রে ওই মাসের ২১ তারিখের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেয়া হয়। এ পত্রে বলা হয়, নির্দেশ অমান্য করে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান না করা কর্মকর্তারা ২৩ মে অবমুক্ত (স্ট্যান্ড রিলিজ) বলে গণ্য হবেন।
রবিবার (১৪ জুলাই) পাবনা জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে সরেজমিনে গিয়ে উপপরিচালক রাশেদুল কবীরকে পাওয়া যায়নি। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অসুস্থ্যতাজনিত কারণে তিনি এদিন অফিসে আসেননি। তবে তিনি  নির্দেশ অমান্য করে এখনো পাবনাতেই নিয়মিত অফিস করছেন। অথচ সার্ভিস রুলের ৮১ ধারা অনুযায়ী, বদলি আদেশের পর নতুন কর্মস্থলে যোগদানের প্রস্তুতির জন্য একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ ছয় দিন সময় পান। একই শহরে বদলি হলে প্রস্তুতির সময় পান না। দপ্তরের আদেশ অনুযায়ী ওই অফিসের সহাকারী পরিচালক খন্দকার গোলাম সরওয়ারকে ভারপ্রাপ্ত করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেবার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। বদলিকৃত কর্মস্থলেও যোগদান করেননি। উল্টো মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের বদলির নির্দেশের তোয়াক্কা না করে বহাল তবিয়তে বদলির আগের কর্মস্থলেই অফিস করছেন। ব্যবহার করছেন সরকারি গাড়ি ও নিচ্ছেন সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা। জানা গেছে গত বছরেও বদলির আদেশ হয় এই কর্মকর্তার। তদবির করে সে আদেশ বাতিল করান তিনি। এতে প্রশ্ন উঠেছে রাশেদুল কবীর কি এমন অতিরিক্ত সুবিধা পান এই অফিসে? যেটি কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চান না এই কর্মকর্তা।
ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব বুঝে পাবার ক্ষেত্রে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক খন্দকার গোলাম সরওয়ার বলেন, আমি এখনো দায়িত্ব বুঝে পাইনি। স্যার (রাশেদুল কবীর) জানিয়েছেন ওই বদলির আদেশ নাকি সংশোধন হবে।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের একটি সূত্র বলছে, অবমুক্ত হবার পর পনেরো দিনের মত তিনি কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করেননি। এতে করে উপজেলা থেকে শুরু করে সমস্ত পর্যায়ের নানারকম বিল, ট্রেনিং ও টেন্ডার প্রক্রিয়া থেমে যায়। সার্বিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে যায়। পরে এগুলো নিয়ে সমালোচনা উঠলে আবার নিয়মিতই সব ফাইলে স্বাক্ষর করছেন। আগেরমত বহাল তবিয়তেই অফিস করছেন। সূত্র বলছে, বিভিন্ন প্রোজেক্ট থেকে নয় ছয় করে বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করে থাকেন রাশেদুল কবীর। শুধুমাত্র নামে বিভিন্ন ট্রেনিং দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে। প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য টিএডিএ বিল থেকে শুরু করে যে সম্মানি বরাদ্দ থাকে তা নামমাত্র একটি অংশ দিয়ে পুরোটাই আত্মসাৎ করেন তিনি। ক্যান্সার চিকিৎসা সহায়তা সেবা ও নামে বেনামে দুস্থ বা অসহায়দের বিভিন্ন আর্থিক সহায়তা দেবার নামেও লুট করেছেন বিপুল অর্থ। তবে তিনি কর্মকর্তা হিসেবে অত্যন্ত দক্ষ ও মেধাবী হওয়ায় সেগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রাখেন না। ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে তিনি এসব কর্মকান্ড চালিয়ে থাকেন। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস করেন না বলেও জানায় ওই সূত্র।
তবে কি অনিয়মের মাধ্যমে গড়া এমন সুবিধার রাজ্য ছেড়ে না যেতেই বার বার মন্ত্রণালয় ও অফিসের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখান রাশেদুল কবীর? অবমুক্ত হবার পরও কিভাবে বহাল তবিয়তে অফিস করছেন তিনি? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, ছেলের এস.এসসি পরীক্ষা বিবেচনায় বদলির আদেশের বিপরীতে মাত্র কয়েকটি মাস সময় চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় থেকে মৌখিকভাবে তাকে অফিসের সকল কার্যক্রম পরিচালনার অনুমিত দিয়েছেন। মৌখিক অনুমতিতে এভাবে অফিস পরিচালনা করা যায় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটি মন্ত্রণালয়কে জিজ্ঞেস করতে হবে। আমি তাদের অনুমতিতেই অফিস করছি।
এব্যাপারে পাবনার জেলা প্রশাসক মু. আসাদুজ্জামান বলেন, নির্দেশ অমান্য করে অফিস করার সুযোগ নেই। স্ট্যান্ড রিলিজের বিষয়টি আমি জানি না, খোঁজ নিয়ে জানাতে পারব।