০৮:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

গুজবের চাপে সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করাই এখন চ্যালেঞ্জ

গুজব এখন বাংলাদেশে একটি ট্রেন্ডে পরিনত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু ভাইরাল হলে, দ্বিতীয় বার চিন্তা না করে সেগুলো শেয়ার করা হয়  এবং বিশ্বাস করা হয়।

১ লা জুলাই কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পড়ে দেখা যায়, তারা গুরুতর আহত হলেও কেউই মারা যায়নি। এরই মধ্যে রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। অথচ সেদিন ছয়টার মধ্যেই সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে কিন্তু কেউ নিহত হয়নি।

এদিকে সারাদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে সবধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে সারাদেশেই সংবেদনশীল দুটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

যেখানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা দেশ ছেড়ে স্পেন পালিয়েছেন এবং খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়েছে। অথচ দুটোই মিথ্যা। আসলে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে স্পেন যাওয়ার কথা ছিলো, যেটা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরের দিনই ব্যবসায়ীদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেছেন।

সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, তখন দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা পালায়নি, পালায় না।’ অন্যদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের থেকেও স্থিতিশীল বলে জানা যায়।

একই সাথে মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে এমন শিরোনামেও অনেক গুজব শোনা গেছে । কিন্তু সরেজমিনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল সহ আলোচিত সকল মন্ত্রীদের, তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে দেখা গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার সময়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক গুজব পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফেসবুকে আরেকটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে ঢাকায় ভারতীয় বাহিনী আনা হয়েছে।  কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ভারতীয় কোনো সৈন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।

তবে গুজব শুধু বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেই ছড়াচ্ছে এমনটি নয়। ১ মাসও হয়নি সারাদেশে রাসেল ভাইপারের গুজব ছড়িয়ে পড়ছিলো। রাসেল ভাইপার অন্যান্য সাপের মতোই একটি বিষধর সাপ। কিন্তু এটির ব্যাপারে অনেক অপ্রীতিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এখানে রাসেল ভাইপারের কামড়ে মৃত্যু, সেখানে মৃত্যু,  অথচ খোঁজ নিয়ে কোনো মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সাপের মতোই এটিরও মতোই এটিরও প্রতিষেধক রয়েছে এবং এটি কোনো মানুষকে ধাওয়া করে কামড়ায় না।

সরকারি মহল থেকে কয়েক দিন ধরে বারবার বলা হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে; গুজবে কান দেবেন না। কিন্তু গুজবে কান না দিয়ে আসলে ঘটনা কী ঘটেছে, তা যাচাই করার মোক্ষম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। গুজব বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে গুজব বাড়বে বৈকি কমবে না। কিছু নিউজ পোর্টালের দেওয়া তথ্যের ওপর মানুষ ভরসা করে। যেকোনো খবরের সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে ওই সব ওয়েবসাইট মানুষ দেখতে পারত। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় কোথায় কী ঘটছে, তা সঙ্গে সঙ্গে জানার কোনো উপায় নেই।

পাঁচ দিন ধরে সারা দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে পাঠকদের তথ্য জানানো সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সেটা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে শুধু গুজব নয়, অপতথ্য ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা রকম ফায়দা লুটতে একটি মহল এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তাই এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ। ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে কি পরিমাণ আইডি থেকে ছড়ানো হচ্ছে এসব গুজব এবং কোন কোন দেশ থেকে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই পুলিশের কাছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক

জনপ্রিয়

দশম গ্রেড বাস্তবায়নে সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্মারকলিপি

গুজবের চাপে সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করাই এখন চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৩০:১৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

গুজব এখন বাংলাদেশে একটি ট্রেন্ডে পরিনত হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু ভাইরাল হলে, দ্বিতীয় বার চিন্তা না করে সেগুলো শেয়ার করা হয়  এবং বিশ্বাস করা হয়।

১ লা জুলাই কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক গুজব ছড়ানো হচ্ছে সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। ১৫ জুলাই ছাত্রলীগ এবং আন্দোলনকারীদের মধ্যে হওয়া সংঘর্ষের পরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পড়ে দেখা যায়, তারা গুরুতর আহত হলেও কেউই মারা যায়নি। এরই মধ্যে রাতে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাতের অন্ধকারে গণহত্যা চালানো হচ্ছে। অথচ সেদিন ছয়টার মধ্যেই সকল শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছেন। যদিও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ এবং ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে কিন্তু কেউ নিহত হয়নি।

এদিকে সারাদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে সবধরনের ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও, ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াকে নিয়ে সারাদেশেই সংবেদনশীল দুটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে।

যেখানে বলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনা দেশ ছেড়ে স্পেন পালিয়েছেন এবং খালেদা জিয়ার মৃত্যু হয়েছে। অথচ দুটোই মিথ্যা। আসলে প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরে স্পেন যাওয়ার কথা ছিলো, যেটা অনিবার্য কারণে বাতিল করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পরের দিনই ব্যবসায়ীদের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিং করেছেন।

সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, তখন দফায় দফায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। আন্দোলনের মধ্যে গুজব ছড়ানো হয়েছে, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু বলে দিতে চাই, শেখ হাসিনা পালায়নি, পালায় না।’ অন্যদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের থেকেও স্থিতিশীল বলে জানা যায়।

একই সাথে মন্ত্রীরা দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে এমন শিরোনামেও অনেক গুজব শোনা গেছে । কিন্তু সরেজমিনে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান নওফেল সহ আলোচিত সকল মন্ত্রীদের, তাদের নিজ নিজ কার্যালয়ে দেখা গেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের সাথে আলোচনার সময়ে তথ্য প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক গুজব পরিহার করার আহ্বান জানিয়েছেন। ফেসবুকে আরেকটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে ঢাকায় ভারতীয় বাহিনী আনা হয়েছে।  কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে কথা বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ভারতীয় কোনো সৈন্য বাংলাদেশে প্রবেশ করেনি।

তবে গুজব শুধু বর্তমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতেই ছড়াচ্ছে এমনটি নয়। ১ মাসও হয়নি সারাদেশে রাসেল ভাইপারের গুজব ছড়িয়ে পড়ছিলো। রাসেল ভাইপার অন্যান্য সাপের মতোই একটি বিষধর সাপ। কিন্তু এটির ব্যাপারে অনেক অপ্রীতিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। এখানে রাসেল ভাইপারের কামড়ে মৃত্যু, সেখানে মৃত্যু,  অথচ খোঁজ নিয়ে কোনো মৃত্যুর সত্যতা পাওয়া যায়নি। অন্যান্য সাপের মতোই এটিরও মতোই এটিরও প্রতিষেধক রয়েছে এবং এটি কোনো মানুষকে ধাওয়া করে কামড়ায় না।

সরকারি মহল থেকে কয়েক দিন ধরে বারবার বলা হচ্ছে, ছাত্র আন্দোলন নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে; গুজবে কান দেবেন না। কিন্তু গুজবে কান না দিয়ে আসলে ঘটনা কী ঘটেছে, তা যাচাই করার মোক্ষম মাধ্যম হলো ইন্টারনেট। গুজব বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো তথ্যের অবাধ প্রবাহ। তাই ইন্টারনেট বন্ধ থাকলে গুজব বাড়বে বৈকি কমবে না। কিছু নিউজ পোর্টালের দেওয়া তথ্যের ওপর মানুষ ভরসা করে। যেকোনো খবরের সত্যতার বিষয়ে নিশ্চিত হতে ওই সব ওয়েবসাইট মানুষ দেখতে পারত। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় কোথায় কী ঘটছে, তা সঙ্গে সঙ্গে জানার কোনো উপায় নেই।

পাঁচ দিন ধরে সারা দেশে বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে পাঠকদের তথ্য জানানো সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব। কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সেটা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এর ফলে শুধু গুজব নয়, অপতথ্য ও ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা রকম ফায়দা লুটতে একটি মহল এই ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তাই এখনই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ। ফেসবুক, ইউটিউব ও টুইটারে কি পরিমাণ আইডি থেকে ছড়ানো হচ্ছে এসব গুজব এবং কোন কোন দেশ থেকে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই পুলিশের কাছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক