১০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলছেন না অনেক কৃষক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাকখালী গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান। সারাবছর নানা রকম সবজির চাষ করেই দিনাতিপাত করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে এবার এক একর জমিতে টমেটো চাষ করছেন। এ জমিতে চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি টমেটো বিক্রি করেছেন মাত্র দুই লাখ টাকার। এরই মধ্যে টমেটোর দাম কমে হুরহুর করে। অবস্থা এমই যে ক্ষেত্র থেকে তুলে বাজারে আনতে যে খরচ, বিক্রি করলে তাও উঠছে না। ফলে ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন তিনি। এতে বড় অংকের টাকা লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছেন এই কৃষক। এ অবস্থা শুধু পশ্চিম বাকখালী গ্রামের নয়, পুরো উপজেলার।
“প্রচুর টাকা ক্ষতি কৃষকের, হিমাগার না থাকায় উপায় নেই সংরক্ষণের”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার সীতাকুণ্ডে ৫৮০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো এক হাজার মেট্রিক টন টমেটো বেশী উৎপাদন হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম টমেটো উৎপাদক অঞ্চল সৈয়দপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাকখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টমেটোর ক্ষেত্র জাল দিয়ে সুরক্ষিত করে পরম যত্নে রেখেছিল কৃষকরা। কিছু কিছু ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে সেগুলো নিয়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে খাচায় ভর্তি করে কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ ব্যবসায়ী সেগুলোরকে আকার ও গুনগতমান অনুসারে বাছাই করে পুনরায় খাচায় ভর্তি করছেন। এরপর গাড়ী ভর্তি করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। তবে দাম ভালো না পাওয়ায় অনেকস্থানে টমেটো ফেলে দেওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। এসব ক্ষেত্রে গেলে কামরুল হাসানের মতো আরো অনেক কৃষক হতাশার কথা শোনান।
কৃষক কামরুল হাসান বলেন, এক একর জমিতে টমেটো চাষ করতে তার তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তিনি মাত্র দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছেন।
বর্তমানে ১ কেজি টমেটো ৪/৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারী দরে। এই দাম অনুসারে তিনি বড়জোড় ২/৩ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে তার লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠবে না।
ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলে বাজারে নিয়ে যেতে যে খরচ হয় তা উঠবে না বলে টমেটো তুলছেন না একই এলাকার সাইমন হোসেনসহ আরো অনেকে। তারা বলেন, টমেটো তুলতে শ্রমিকের মজুরি লাগে, একটা পিকআপ কিংবা ভ্যানে নিয়ে যেতে হয় বাজারে। তুলা এবং বাজারে নিয়ে যেতে যদি ৮ শ কিংবা ৯ শ টাকা খরচ হয়, তবে সেখানে নিয়ে বিক্রি হয় ৫ শ থেকে ৬ শ টাকায়। তাই আমরা টমেটো তুলা ছেড়ে দিয়েছি। আবার হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ করেও রাখতে পারি না। তাই লোকসান হলেও চাষ করি। টমেটো চাষে হতাশার কথা জানান, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কৃষক জসিম ও মোঃ কামাল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে ছিল। বেশী কুয়াশা কিংবা অসময়ে বৃষ্টি হয়নি। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ফলন হয়েছে। তবে বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষি লোকসান ঠেকাতে উৎপাদিত সবজি রপ্তানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাহলে কৃষকদের আর লোকসান হবে না।
ডিএস./
ট্যাগ :

মামলা হলেই গ্রেপ্তার নয়,নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন : আইজিপি

আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলছেন না অনেক কৃষক

প্রকাশিত : ০৪:৩৫:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাকখালী গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান। সারাবছর নানা রকম সবজির চাষ করেই দিনাতিপাত করেন তিনি। এরই অংশ হিসেবে এবার এক একর জমিতে টমেটো চাষ করছেন। এ জমিতে চাষাবাদে তার খরচ হয়েছে তিন লাখ টাকা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তিনি টমেটো বিক্রি করেছেন মাত্র দুই লাখ টাকার। এরই মধ্যে টমেটোর দাম কমে হুরহুর করে। অবস্থা এমই যে ক্ষেত্র থেকে তুলে বাজারে আনতে যে খরচ, বিক্রি করলে তাও উঠছে না। ফলে ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলতে আগ্রহ হারিয়েছেন তিনি। এতে বড় অংকের টাকা লোকসানের আশঙ্কায় ভুগছেন এই কৃষক। এ অবস্থা শুধু পশ্চিম বাকখালী গ্রামের নয়, পুরো উপজেলার।
“প্রচুর টাকা ক্ষতি কৃষকের, হিমাগার না থাকায় উপায় নেই সংরক্ষণের”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার সীতাকুণ্ডে ৫৮০ হেক্টর জমিতে টমেটোর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৪ হাজার ১৮৫ মেট্রিক টন। এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হয়েছে। ফলে এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আরো এক হাজার মেট্রিক টন টমেটো বেশী উৎপাদন হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার অন্যতম টমেটো উৎপাদক অঞ্চল সৈয়দপুর ইউনিয়নের পশ্চিম বাকখালী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, টমেটোর ক্ষেত্র জাল দিয়ে সুরক্ষিত করে পরম যত্নে রেখেছিল কৃষকরা। কিছু কিছু ক্ষেত থেকে টমেটো তুলে সেগুলো নিয়ে স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। পরে খাচায় ভর্তি করে কতিপয় ব্যবসায়ীর কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ঐ ব্যবসায়ী সেগুলোরকে আকার ও গুনগতমান অনুসারে বাছাই করে পুনরায় খাচায় ভর্তি করছেন। এরপর গাড়ী ভর্তি করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন বিক্রির জন্য। তবে দাম ভালো না পাওয়ায় অনেকস্থানে টমেটো ফেলে দেওয়ার চিত্রও দেখা গেছে। এসব ক্ষেত্রে গেলে কামরুল হাসানের মতো আরো অনেক কৃষক হতাশার কথা শোনান।
কৃষক কামরুল হাসান বলেন, এক একর জমিতে টমেটো চাষ করতে তার তিন লাখ টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু তিনি মাত্র দুই লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পেরেছেন।
বর্তমানে ১ কেজি টমেটো ৪/৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে পাইকারী দরে। এই দাম অনুসারে তিনি বড়জোড় ২/৩ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন। তাহলে তার লাভ তো দূরের কথা খরচও উঠবে না।
ক্ষেত্র থেকে টমেটো তুলে বাজারে নিয়ে যেতে যে খরচ হয় তা উঠবে না বলে টমেটো তুলছেন না একই এলাকার সাইমন হোসেনসহ আরো অনেকে। তারা বলেন, টমেটো তুলতে শ্রমিকের মজুরি লাগে, একটা পিকআপ কিংবা ভ্যানে নিয়ে যেতে হয় বাজারে। তুলা এবং বাজারে নিয়ে যেতে যদি ৮ শ কিংবা ৯ শ টাকা খরচ হয়, তবে সেখানে নিয়ে বিক্রি হয় ৫ শ থেকে ৬ শ টাকায়। তাই আমরা টমেটো তুলা ছেড়ে দিয়েছি। আবার হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণ করেও রাখতে পারি না। তাই লোকসান হলেও চাষ করি। টমেটো চাষে হতাশার কথা জানান, বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কৃষক জসিম ও মোঃ কামাল।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ বলেন, এবছর তাপমাত্রা অনুকূলে ছিল। বেশী কুয়াশা কিংবা অসময়ে বৃষ্টি হয়নি। ফলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী ফলন হয়েছে। তবে বাজার দর কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষি লোকসান ঠেকাতে উৎপাদিত সবজি রপ্তানির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করছি। তাহলে কৃষকদের আর লোকসান হবে না।
ডিএস./