১০:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী টেঁটা যুদ্ধ, টেঁটা ও গুলিবিদ্ধে নিহত ২

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চাঁনপুরে গোষ্ঠিগত দ্বন্ধ  ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রবাস ফেরত দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত আরো ১০ জন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামের বড় বাড়ি বংশ ও জান মাহমুদ বাড়ি বংশের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুটি গ্রুপের মধ্যে বড় বাড়ির নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও জান মাহমুদ বাড়ির নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য সামসু মিয়া।
নিহতরা হলেন ওই এলাকার বারেক হাজির ছেলে বাশার মিয়া (৩৫) ও খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (২৩)। সে গত ৩ মাস আগে সৌদিআরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন। নিহত দুইজন সালাম সমর্থিত বলে জানা গেছে। নিহতদের মরদেহ সকালে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে সেনাবাহিনীর একটি দল হাসপাতালে পরিদর্শন করেন।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহিনীপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে ওই দুই পক্ষের অনুসারীরা প্রায়ই দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতো। এর আগের সংঘর্ষে আব্দুস সালামের অনুসারীরা হেরে গিয়ে এলাকা ছাড়েন। ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁরা এলাকায় ফিরছিলেন। এসময় ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার লোকজন তাঁদের এলাকায় ঢুকতে বাঁধা দিলে দুই পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও টেঁটা বল্লম সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলি ও টেঁটার আঘাতে আব্দুস সালাম পক্ষের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ নদী পথে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অন্যদিকে পুলিশের আরেকটি দল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল প্রস্তুত করেন।
আব্দুস সালাম বলেন, সামসু মেম্বারের সাথে পূর্ব থেকে বিরোধ ছিলো। গত ছয় মাস যাবত আমার লোকজন এলাকার বাইরে ছিলো। রমজানের ঈদ এলাকায় করার জন্য তারা ভোরে এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এসময় সামসু মেম্বারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। দুইজন গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনায় সামসু সহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ইউপি সদস্য সামসু মিয়া বলেন, সংঘর্ষের সময় আমার ৩ জন অনুসারী গুলিবিদ্ধে আহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের ২ জন মারা গেছে বলে শুনেছি।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা বলেন, আমিন ও বাশার নামে দুইজনকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য দুটি মরদেহ নরসিংদীতে প্রেরণ করা হবে।
রায়পুরা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। পরবর্তি সহিংসতা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমান পুলিশ এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরার চানপুরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অফিশিয়ালি দুইজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যেই পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
ডিএস../
ট্যাগ :

মামলা হলেই গ্রেপ্তার নয়,নিরীহ কাউকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন : আইজিপি

রায়পুরায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের রক্তক্ষয়ী টেঁটা যুদ্ধ, টেঁটা ও গুলিবিদ্ধে নিহত ২

প্রকাশিত : ০৪:৩৭:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চল চাঁনপুরে গোষ্ঠিগত দ্বন্ধ  ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে টেটা ও গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রবাস ফেরত দুই যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন উভয় পক্ষের অন্তত আরো ১০ জন।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকালে উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের মোহিনীপুর গ্রামের বড় বাড়ি বংশ ও জান মাহমুদ বাড়ি বংশের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুটি গ্রুপের মধ্যে বড় বাড়ির নেতৃত্ব দেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম ও জান মাহমুদ বাড়ির নেতৃত্ব দেন ইউপি সদস্য সামসু মিয়া।
নিহতরা হলেন ওই এলাকার বারেক হাজির ছেলে বাশার মিয়া (৩৫) ও খোরশেদ মিয়ার ছেলে আমিন মিয়া (২৩)। সে গত ৩ মাস আগে সৌদিআরব থেকে ছুটিতে দেশে আসেন। নিহত দুইজন সালাম সমর্থিত বলে জানা গেছে। নিহতদের মরদেহ সকালে রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হলে সেনাবাহিনীর একটি দল হাসপাতালে পরিদর্শন করেন।
নিহতের স্বজন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহিনীপুর গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার সঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালামের বিরোধ চলে আসছে। এরই জেরে ওই দুই পক্ষের অনুসারীরা প্রায়ই দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতো। এর আগের সংঘর্ষে আব্দুস সালামের অনুসারীরা হেরে গিয়ে এলাকা ছাড়েন। ঈদকে সামনে রেখে শুক্রবার ভোরের দিকে তাঁরা এলাকায় ফিরছিলেন। এসময় ইউপি সদস্য সামসু মিয়ার লোকজন তাঁদের এলাকায় ঢুকতে বাঁধা দিলে দুই পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র ও টেঁটা বল্লম সহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে প্রতিপক্ষের ছোড়া গুলি ও টেঁটার আঘাতে আব্দুস সালাম পক্ষের দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। খবর পেয়ে রায়পুরা থানা পুলিশ নদী পথে ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। অন্যদিকে পুলিশের আরেকটি দল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে মরদেহের প্রাথমিক সুরতহাল প্রস্তুত করেন।
আব্দুস সালাম বলেন, সামসু মেম্বারের সাথে পূর্ব থেকে বিরোধ ছিলো। গত ছয় মাস যাবত আমার লোকজন এলাকার বাইরে ছিলো। রমজানের ঈদ এলাকায় করার জন্য তারা ভোরে এলাকায় প্রবেশ করার চেষ্টা করে। এসময় সামসু মেম্বারের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। দুইজন গুলিতে নিহত হয়। এ ঘটনায় সামসু সহ জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ইউপি সদস্য সামসু মিয়া বলেন, সংঘর্ষের সময় আমার ৩ জন অনুসারী গুলিবিদ্ধে আহত হয়েছেন। প্রতিপক্ষের ২ জন মারা গেছে বলে শুনেছি।
রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রাবেয়া সুলতানা বলেন, আমিন ও বাশার নামে দুইজনকে মুমুর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে আনার আগেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। ময়না তদন্তের জন্য দুটি মরদেহ নরসিংদীতে প্রেরণ করা হবে।
রায়পুরা থানার ইন্সপেক্টর তদন্ত প্রবীর কুমার ঘোষ বলেন, এলাকার পরিস্থিতি বর্তমানে শান্ত রয়েছে। পরবর্তি সহিংসতা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমান পুলিশ এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান সাংবাদিকদের বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রায়পুরার চানপুরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অফিশিয়ালি দুইজন নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ইতোমধ্যেই পুলিশ কাজ শুরু করেছে।
ডিএস../