ভোলার মনপুরায় দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধের নির্মান কাজ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাবেক সম্পাদক মোঃ রাশেদ (২৭) এর মৃত্যুতে চরফ্যাসন ও মনপুরা দুইু উপজেলায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বুধবার রাত ১০ টায় বিচার দাবিতে বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম সমর্থিতরা সিরাজগঞ্জ বাজার ও কোড়ালিয়া বাজার বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করে।
পরে বৃহস্পতিবার সাড়ে ১০ টায় উপজেলার হাজিরহাট বাজারে হত্যায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতার ও বিচারের দাবীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে উপজেলা বিএনপি নেতারা। একই সময়ে একই দাবীতে চরফ্যাসন উপজেলায় আলম সমর্থিত ছাত্রদলের নেতারা বিক্ষোভ মিছিল করে।
বুধবার সকালে সংঘর্ষের পর আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেয়ার পথে রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান রাশেদ। গুরুতর আহত রাব্বি ( ২৫) , সামসুদ্দিন ( ২৮), সোহান, মামুনসহ ১০ জনকে চরফ্যাশন ও মনপুরা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে বুধবার রাত ১২ টায় উপজেলা বিএনপির বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব সামছুদ্দিন চৌধুরী বাচ্চু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক মোঃ মফিজুর রহমান মিলন মাতাব্বর স্বাক্ষরিত এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে এই হামলার জন্য আওয়ামীলীগকে দায়ী করা হয়। তাতে উল্লেখ করা হয় চরফ্যাশন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক জয়নাল আবদীন আকন্দ নামে মনপুরায় গেল বছর থেকে বেড়িবাধ নির্মান কাজ চলছিল। কাজের মান খারাপ ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ করেন সাবেক ছাত্রদল সাধারন সম্পাদক মোঃ রাশেদসহ স্থানীয় অনেকে। এ সময় বর্তমানে ওই ঠিকাদারী কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা মনপুরার দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সদস্য গিয়াসউদ্দিন মিজির নেতৃত্বে প্রতিবাদকারীদের উপর হামলা করে। এ সময় নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করা হয় রাশেদসহ ১০/ ১২ জনকে।
এদিকে একই দাবীতে উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক মোঃ একরাম কবির ও সদস্য সচিব মোঃ শাহেদুল ইসলাম শাহীন স্বাক্ষরিত শোক বার্তায়, সাবেক ছাত্রদল নেতার হত্যার ঘটনায় আসামীদের আটক ও দৃষ্ঠান্ত শাস্তি দাবী করেন।
স্থানীয়রা জানান, গিয়াস উদ্দিন মিজি এক সময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরে আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে দক্ষিণ সাকুচিয়া দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ৪২ তম সদস্য হন। তবে তার পরিবার অন্যান্য সকল সদস্যরা বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয় রয়েছেন। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ফের গিয়াস উদ্দিন মিজি বিএনপির রাজনীতি শুরু করেন।
এদিকে নিহতের বড় ভাই মোঃ আজাদ বাদি হয়ে মনপুরা থানায় ১৭ জনকে আসামী করে মামলা করেছেন বলে জানান মনপুরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহসান কবির। পরে অভিযান চালিয়ে মামলার চার আসামীকে আটক করা হয় বলে জানান তিনি।
আটককৃতরা হলেন, জসিম মিঝি, রহিম মিঝি, মামুন ডাক্তার, আল-আমিন চৌকিদার। এদের সবার বাড়ি উপজেলার উত্তর ও দক্ষিণ সাকুচিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে।
স্থানীয়রা জাননা, আওয়ামীলীগ আমলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক হাজার ১৫ কোটি টাকার চলমান বেড়ীবাঁধ নির্মান কাজ করছিল ১৪টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ৫ আগষ্টের পর অলিখিতভাবেই এই সব কাজের দায়িত্ব নেয় বিএনপি সমর্থিতরা। নদী থেকে বালু তোলা, বালু সাপ্লাইসহ নানা কাজ নিয়ে দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব চলছিল দীর্ঘদিন। এর জের ধরেই হামলার ঘটনা ঘটে দুই পক্ষের।
এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় যুবদল সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন সমর্থিত উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক আবদুল মান্নান হাওলাদার সাংবাদিকদের জানান, বাঁধ নির্মানের ঠিকাদারী কাজ নিয়ে উপজেলা বিএনপির একটি গ্রুপের দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরে হামলা হয়। নাজিমউদ্দিন আলম সমর্থিত দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জের ধরেই হামলা হয়। পরে ছাত্রদল দলের সাবেক নেতা নিহত হয়। তবে তিনি জানান, নূরুল ইসলাম নয়ন সমর্থিত কেউ মনপুরায় কোন ধরনের অনিয়ম বা দখলের রাজনীতি করেন না। ওই দিনের ঘটনায় নয়ন সমর্থিত বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের কেউ জড়িতও নন।
এদিকে ছেলেকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন রাশেদেও মা কহিনুর বেগম ও বাবা আবুল কালাম। বৃহস্পতিবার রাতে জানাজা শেষে রাশেদকে আবু দালাল জামে মসজিদ গোরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানান তারা।