অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গাছে গাছে প্রচুর পরিমাণে সজনে ডাটা ধরতে দেখা গেছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় এ বছর সজনে ডাটার ফলন বেড়েছে। যার ফলে হাটবাজারে সজনে ডাটার চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাজারে এর চাহিদা থাকায় ভালো দামও রয়েছে।
উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি সজনে ডাটার প্রচুর চাহিদা চোখে পড়ছে। এক সময় পতিত জায়গায়, বাড়ীর আশেপাশে, রাস্তার ধারে ব্যাপক সজনের গাছ লাগাতো। মাঝখানে তা চোখে না পরলেও বর্তমানে অনেক কৃষকরা তাদের ফসলি জমিতে সজনের চাষ করছেন। পরিকল্পিতভাবে সজনের চাষ করে লাভবানও হচ্ছেন। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীতাকুণ্ড অংশের বড়দারোগাহাট থেকে কুমিরা পর্যন্ত সড়কের পাশে গাছে গাছে ঝুলছে সজনে ডাটা। স্থানীয়রা সেগুলো বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে পুষ্টিগুণে ভরপুর সজনে ডাটার সবসময় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি ১৫০/২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বাজারে এর বেশী চাহিদা থাকায় ফলে বর্তমানে হাটবাজারে ৭০ থেকে ৮০ টাকা পাইকারী ও ১৫০ থেকে ২০০ টাকা প্রতি কেজিতে খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে।
উপজেলার কাঁচা বাজারের তরকারী বিক্রেতারা জানান, মৌসুমের শুরুতে সজনে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আমদানী বাড়ায় এর দাম কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে সজনে ডাটার বেশ চাহিদা রয়েছে। বর্তমান বাজারে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে এ ডাটা বিক্রি হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড বাজারের বিক্রেতা শহীদ বলেন, এ উপজেলার সজনে ডাটার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমি প্রতিবছর সজনে ডাটা গুলো চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করে থাকি। সীতাকুণ্ড উপজেলায় অনেক সজনের গাছ আছে। এ বছর ঝড়-বৃষ্টি না হওয়ায় সজনে ডাটার ফলন বেশী হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর লাভ বেশী হচ্ছে।
সজনে বিক্রি করতে আসা কৃষক ফয়েজ আহমেদ বলেন, সজনে চাষ করা সবচেয়ে সহজ তেমনি খরচা ও ঝামেলাও নাই। সজনের গাছের ডাল থেকে নতুন গাছের সৃষ্টি হয়। আমার বাড়ীতে ৬টা গাছ আছে। ফলনও অনেক হয়েছে।
আরেক চাষী বলেন, শুরুতে ভালো দাম পেয়েছি। বিক্রির উপযোগী আমার এখনও দুইটা গাছে সজনে আছে। এই বাজার দর থাকলেও ৪ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। আমার মতে বাণিজ্যিকভাবে সজনে চাষ করতে পারলে কৃষিতে অনেক সাফল্য বয়ে আনবে। একই সঙ্গে অর্থনীতে অনেক ভূমিকা রাখবে।
সজনে ডাটার মানবদেহের উপকারিতার বিষয়ে জানতে চাইলে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আলতাফ হোসেন বলেন, সজনে ডাটা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহের কোলেষ্টোরল নিয়ন্ত্রণ, পেটের সমস্যা সমাধান ও হজমে ব্যাপক ভাবে সাহায্য করে। সজনে ডাটা উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য বেশী উপকারী। শুধু তাই নয় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মানুষের শরীরে চিনির সটিক মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রেখে ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করে সজিনা। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সজনে খুবই উপকারী সবজি।
সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুল্লাহ জানান, বীজ রোপণ ছাড়াই শুধু ডাটা বসত বাড়ীর আশেপাশে রাস্তার ধারে পুকুর পাড়ে এমনকি মাঠের ফসলের আইলে চাষ করা যায়। তাই উপজেলার চাষীদের সজনে চাষে বিনা পুঁজিতে বাণিজ্যিকভাবে এর বাগান করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। অনেকেই এ সজনে চাষাবাদ করে অপ্রত্যাশিত লাভবান হন।
ডিএস../