০৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

কারণ ছাড়াই বাড়ছে রডের দাম

তেমন কোনো কারণ ছাড়াই রডের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। এক মাসের ব্যবধানে এমএস রডের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শীত মৌসুমের আগে এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের পরিকল্পিত কারসাজি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে অন্যতম নির্মাণসামগ্রী রডের হঠাৎ এভাবে দাম বাড়ার কারণে দেশের উন্নয়ন কাজে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সার্বিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া আবাসন খাতেও ব্যয় বেড়ে যাবে। যার ভার বহন করতে হবে ক্রেতাদের।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের মূল উপাদান রডের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকায় প্রকল্পের কাজের গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রড ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রি-রোলিং মালিকরা রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে রডের দাম নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিয়েছেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেসরকারিভাবে যারা অবকাঠামো নির্মাণ করছে তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। যারা বাড়ি-ঘর, দালান তৈরি করছে তাদের ব্যয় বাড়ছে। ভাড়াটিয়াদের এর দায় বহন করতে হবে। তাই সরকারের উচিত দাম বাড়ার বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া।

সরেজমিন রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ের ইংলিশ রোড ঘুরে রড ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে গ্রেডভেদে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। ৭৫ গ্রেডের ৫০০-ডব্লিউ রডের মধ্যে বিএসআরএম বিক্রি হচ্ছে ৫৮ হাজার টাকায়। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪ হাজার টাকায়। বিএসআইর রডের দাম ৫৪ হাজার টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫১ হাজার টাকায়। আরআরএম রড টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার টাকায়। এইচআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার টাকায়। এছাড়া বাজারে ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৪৯ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে বেশি ব্যবহৃত ৬০ গ্রেডের রড কোনো দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেশি থাকায় এই সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ১ হাজার ৩৬৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১২৬টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১১টি, জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের ৪টি, উন্নয়ন থোক থেকে ৯টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ১১৬টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, রড হচ্ছে অবকাঠামো খাতের মূল উপাদান। এর দাম নানা কারণে কমবেশি হতে পারে। যদি স্বল্পমেয়াদে দাম বেড়ে থাকে তাহলে সেটি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে যদি রডের দাম বাড়তে থাকে তাহলে তা উন্নয়ন প্রকল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি রডের দাম বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। সংস্থাটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকেই ইস্পাত সামগ্রীর মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি মন্থর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, এমএস রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব কারণ বলে থাকে সেগুলো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের মূল্যবৃদ্ধি, ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় এবং ট্যাক্স ও ভ্যাট বৃদ্ধি। এসব কারণ দেখিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যোগসাজশ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমএস রডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে চলছে। তবে বিলেট বর্তমানে দেশেই তৈরি হয়, খুব অল্প পরিমাণই আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের কারণে সামগ্রিক এমএস রডের মূল্যের ওপর এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো ট্যাক্স বা ভ্যাট বাড়ানো হয়নি। তাই এমএস রডের মূল্য ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্কাই আয়রন স্টোরের মালিক এসএম সাগীর বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধির কথা বলে বাজেট ঘোষণার পরপরই রডের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওই সময় প্রতি টন রডের মূল্য ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় দাম কিছুটা কমে। কিন্তু সেটি আর আগের দামে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রি-রোলিং মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছে।

জামাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল স্টোরের মালিক হাজী মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজারে রডের দাম একটু বাড়তি। গত এক মাসের ব্যবধানে গ্রেডভেদে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রি-রোলিং মিল মালিকরা যে দাম ঠিক করে আমাদের সেই বাড়তি দামে রড কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারি হিসাবও বলছে রডের দাম বৃদ্ধির কথা। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী রডের বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এক বছর আগে ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ৬০ গ্রেডের এমএস রডের মূল্য ছিল প্রতি টন ৫০-৫৩ হাজার টাকা। সেটি ১৫ অক্টোবর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি টন ৫৩-৫৪ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে টনপ্রতি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ মূল্য। এছাড়া ৪০ গ্রেডের এমএস রডের দাম ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ছিল ৪০-৪৬ হাজার টাকা। সেটি বেড়ে ১৫ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ৪৬-৪৮ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।

ট্যাগ :

কারণ ছাড়াই বাড়ছে রডের দাম

প্রকাশিত : ০৩:০২:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ অক্টোবর ২০১৭

তেমন কোনো কারণ ছাড়াই রডের দাম বাড়ছে অস্বাভাবিকভাবে। এক মাসের ব্যবধানে এমএস রডের দাম বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। শীত মৌসুমের আগে এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধি ব্যবসায়ীদের পরিকল্পিত কারসাজি বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে অন্যতম নির্মাণসামগ্রী রডের হঠাৎ এভাবে দাম বাড়ার কারণে দেশের উন্নয়ন কাজে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে সার্বিকভাবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া আবাসন খাতেও ব্যয় বেড়ে যাবে। যার ভার বহন করতে হবে ক্রেতাদের।

এ খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের মূল উপাদান রডের দাম হঠাৎ করেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকায় প্রকল্পের কাজের গতি মন্থর হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে রড ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বাড়ার কারণে রি-রোলিং মালিকরা রডের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে রডের দাম নিয়ন্ত্রণের তাগিদ দিয়েছেন ভোক্তাদের সংগঠন কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।

ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রডের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বেসরকারিভাবে যারা অবকাঠামো নির্মাণ করছে তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। যারা বাড়ি-ঘর, দালান তৈরি করছে তাদের ব্যয় বাড়ছে। ভাড়াটিয়াদের এর দায় বহন করতে হবে। তাই সরকারের উচিত দাম বাড়ার বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া।

সরেজমিন রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার মোড়ের ইংলিশ রোড ঘুরে রড ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে গ্রেডভেদে প্রতি টন রডের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা। ৭৫ গ্রেডের ৫০০-ডব্লিউ রডের মধ্যে বিএসআরএম বিক্রি হচ্ছে ৫৮ হাজার টাকায়। যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫৪ হাজার টাকায়। বিএসআইর রডের দাম ৫৪ হাজার টাকা, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৫১ হাজার টাকায়। আরআরএম রড টনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার টাকায়। এইচআরএম রড বিক্রি হচ্ছে ৫২ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪৯ হাজার টাকায়। এছাড়া বাজারে ৪০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে ৪৯ হাজার টাকায়, যা এক মাস আগে ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন বিক্রেতারা। অপরদিকে বেশি ব্যবহৃত ৬০ গ্রেডের রড কোনো দোকানেই পাওয়া যাচ্ছে না। চাহিদা বেশি থাকায় এই সংকট তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থ বছরের (২০১৭-১৮) বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) মোট ১ হাজার ৩৬৬টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১২৬টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১১১টি, জাপানি ঋণ মওকুফ সহায়তা তহবিলের ৪টি, উন্নয়ন থোক থেকে ৯টি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ১১৬টি প্রকল্প রয়েছে। এগুলোর অধিকাংশই অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট প্রকল্প।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, রড হচ্ছে অবকাঠামো খাতের মূল উপাদান। এর দাম নানা কারণে কমবেশি হতে পারে। যদি স্বল্পমেয়াদে দাম বেড়ে থাকে তাহলে সেটি দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে যদি রডের দাম বাড়তে থাকে তাহলে তা উন্নয়ন প্রকল্পে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। এতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সম্প্রতি রডের দাম বৃদ্ধির কারণে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই)। সংস্থাটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মনির উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকেই ইস্পাত সামগ্রীর মূল্য প্রায় ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে গতি মন্থর লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সংস্থাটি বলেছে, এমএস রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে যেসব কারণ বলে থাকে সেগুলো হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বাজারে বিলেটের মূল্যবৃদ্ধি, ইন্ডাস্ট্রিতে গ্যাসের মূল্য সমন্বয় এবং ট্যাক্স ও ভ্যাট বৃদ্ধি। এসব কারণ দেখিয়ে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো যোগসাজশ করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এমএস রডের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে চলছে। তবে বিলেট বর্তমানে দেশেই তৈরি হয়, খুব অল্প পরিমাণই আমদানি করা হয়ে থাকে। তবে গ্যাসের মূল্য সমন্বয়ের কারণে সামগ্রিক এমএস রডের মূল্যের ওপর এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো ট্যাক্স বা ভ্যাট বাড়ানো হয়নি। তাই এমএস রডের মূল্য ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি অযৌক্তিক।

এ বিষয়ে পুরান ঢাকার স্কাই আয়রন স্টোরের মালিক এসএম সাগীর বলেন, ভ্যাট বৃদ্ধির কথা বলে বাজেট ঘোষণার পরপরই রডের দাম বাড়ানো হয়েছে। ওই সময় প্রতি টন রডের মূল্য ২ থেকে ৪ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছিল। পরে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন না হওয়ায় দাম কিছুটা কমে। কিন্তু সেটি আর আগের দামে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এখন আবার আন্তর্জাতিক বাজারে স্ক্র্যাপের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে রি-রোলিং মিল মালিকরা দাম বাড়িয়েছে।

জামাল আয়রন অ্যান্ড স্টিল স্টোরের মালিক হাজী মোহাম্মদ ইমাম উদ্দিন বলেন, বর্তমান বাজারে রডের দাম একটু বাড়তি। গত এক মাসের ব্যবধানে গ্রেডভেদে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ হাজার টাকা। তিনি বলেন, রি-রোলিং মিল মালিকরা যে দাম ঠিক করে আমাদের সেই বাড়তি দামে রড কিনে বাড়তি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে সরকারি হিসাবও বলছে রডের দাম বৃদ্ধির কথা। ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী রডের বার্ষিক মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ বছর একই সময়ে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। সংস্থাটি বলছে, এক বছর আগে ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ৬০ গ্রেডের এমএস রডের মূল্য ছিল প্রতি টন ৫০-৫৩ হাজার টাকা। সেটি ১৫ অক্টোবর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি টন ৫৩-৫৪ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে এক বছরের ব্যবধানে টনপ্রতি বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ মূল্য। এছাড়া ৪০ গ্রেডের এমএস রডের দাম ২০১৬ সালের ১৫ অক্টোবর ছিল ৪০-৪৬ হাজার টাকা। সেটি বেড়ে ১৫ অক্টোবর দাঁড়িয়েছে ৪৬-৪৮ হাজার টাকায়। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ।