০৫:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪

করোনা সংকটে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের আত্নত্যাগ

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটির উপরে, এছাড়া মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৫ লক্ষের উপর। এ সংকট নিবারণে দেখা গিয়েছে ফ্রন্ট লাইনার যোদ্ধাদের আত্নত্যাগ, এছাড়া এ ভাইরাস মানুষের ভেতর থেকে অমানবিকতার পরিচয়ও বের করে দেখিয়েছে। একজন মানুষের শেষ বিদায়ে এমন অমানবিক হতে হবে, কাউকে সাথে পাওয়া যাবেনা, এমন দৃশ্য-ঘটনাগুলো খুবই মর্মান্তিক।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম যখন ‘অজানা’ এই ভাইরাসের সংক্রমনের খবর প্রকাশিত হয়, তখন মানুষ ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেনি যে সেই ভাইরাসটি পরের ৬ মাসের মধ্যে পুরো পৃথিবীকে ওলট পালট করে দেবে।

শুরুর দিকে যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হওয়া শুরু করে তখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কর্তৃপক্ষই সংক্রমনটিকে ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন এ ভাইরাসে সংক্রমন ও মৃত্যূর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশ বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে থাকে পরিস্থিতি নিবারণের জন্য।

এহেন সংকটে বাংলাদেশ সরকারও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রায় দেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং হাসপাতাল গুলোতে করোনা ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি করোনা সংকট নিবারণে এগিয়ে আসে একটি ভিন্নধর্মী সামাজিক উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

বর্তমান সংকটে এ সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হলো করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্তরোগীদেরকে এ্যাম্বুল্যান্স ও অক্সিজেন সেবা দেয়া। ২৯ জুন, ২০২০ ইং পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ সংগঠনটির তত্ত্বাবধানে ২৬৫ টি লাশ দাফন-কাফন এবং ২২৪ জন রোগীকে এ্যাম্বুল্যান্স ও অক্সিজেন সেবা দেয়া হয়। ২৬৫ টি লাশের মধ্যে কভিড-১৯ পজিটিভ ছিল ১১২ জন, বাকিগুলো ছিল সাসপেক্টেড।

অসহায় গরীব থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষকে দেওয়া হচ্ছে এ সেবা। এছাড়া রয়েছে গরীবদের জন্য খাদ্য-সামগ্রী ও বিভিন্ন রকম ত্রান বিতরণ। বাংলাদেশ তথা পুরো বিশে ধণী কোম্পানির তালিকায় উঠে আসা এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলমকেও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করে আল-মানাহিল। এছাড়া এ সেবায় রয়েছে অসংখ্যা ডাক্তার, মাস্টার ও বিভিন্ন শ্রমজীবি পেশার মানুষ।

মূলত এ সেবা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে আল-মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা হেলাল উদ্দিন,
সেক্রেটারী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন ও সিনিয়র পরিচালক মাওলানা শিহাব উদ্দিন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম ও সক্রিয় তৎপর থেকে এসব কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া কিছু স্বেচ্ছাসেবক যুবকদল এগিয়ে আসে কাফন-দাফন ও আক্রান্তরোগীকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে। যারা ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের মাধ্যমে দিয়ে যায় সেবা।

করোনা পজিটিভ লাশকে যখন তাদের স্বজন-পরিবার ও সমাজ গ্রহণ করছেনা এমন নির্দয় চিত্র দেখেই আলমানাহিলের চেয়ারম্যান-সেক্রেটারী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নেয় এসব লাশকে এ সংগঠনের অর্থে দাফন-কাফন করা হবে। শুধু তাই নয় সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও করা হচ্ছে সৎকার।

আল-মাহিলের সেক্রেটারী মাওলানা ফরিদ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কাজ করতে গিয়ে আসে অনেক রকম বাধা। দেখা যায় সমাজ লাশ গ্রহণ করতে চায়না, দেয়না কবরস্থানের জায়গাটুকুও। তারা এটা চিন্তা করেনা সমাজের জন্য মৃত ব্যক্তিটির অবদান, স্বজন-পরিবারের জন্য কতটুকুযোগানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সে। ছেলে বাবাকে, বাবা ছেলেকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বীকে পরস্পর পরস্পরকে বিদায় দিচ্ছে খুবই নির্দয় ভাবে। এছাড়া আবার আমরা এমনও পেয়েছি যারা আমাদের খুব পাশে থেকেই তাদের স্বজনদের বিদায় দিয়েছে। এটা সত্যি যে একজন মৃত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সম্মানের সহিত তার বিদায় পাওয়ার।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন, এসব সেবা দিতে গিয়ে আমরা দেখেছি অনেক হাসপাতালে রোগীরা ঠিকভাবে পাচ্ছেনা সেবা-চিকিৎসা। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এ সংকটে আক্রান্তদের সেবা হিসেবে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরী করি। যেখানে রয়েছে ৭০ টি জেনারেল বেড এবং প্রক্রিয়াধীন ২০ টির মতো সেন্ট্রাল আইসিইউ বেড। ০১ জুলাই এ হাসপাতাল উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

এছাড়া সংগঠনটির সিনিয়র পরিচালক মাওলানা শিহাব উদ্দিন বলেন, এসব সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জন। সেবা দেওয়া মানুষের নৈতিক দায়িত্ব, সেবা পাওয়া মানুষের অধিকার।

সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ জানায়, সেবা দিতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন রকম আর্থিক সংকটে পড়ি। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের সতর্ক ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ইত্যাদি।

এছাড়া হালিশহরে কভিড আক্রান্তরোগীদের সেবায় নির্মিত হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থ।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

জনপ্রিয়

সৌদি সরকারের সম্মতি, এবার সমুদ্রপথে হজে যেতে পারবেন বাংলাদেশিরা

করোনা সংকটে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের আত্নত্যাগ

প্রকাশিত : ০৬:২৯:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটির উপরে, এছাড়া মৃতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৫ লক্ষের উপর। এ সংকট নিবারণে দেখা গিয়েছে ফ্রন্ট লাইনার যোদ্ধাদের আত্নত্যাগ, এছাড়া এ ভাইরাস মানুষের ভেতর থেকে অমানবিকতার পরিচয়ও বের করে দেখিয়েছে। একজন মানুষের শেষ বিদায়ে এমন অমানবিক হতে হবে, কাউকে সাথে পাওয়া যাবেনা, এমন দৃশ্য-ঘটনাগুলো খুবই মর্মান্তিক।

৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ এ চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম যখন ‘অজানা’ এই ভাইরাসের সংক্রমনের খবর প্রকাশিত হয়, তখন মানুষ ঘুনাক্ষরেও চিন্তা করতে পারেনি যে সেই ভাইরাসটি পরের ৬ মাসের মধ্যে পুরো পৃথিবীকে ওলট পালট করে দেবে।

শুরুর দিকে যখন ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশিত হওয়া শুরু করে তখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশের কর্তৃপক্ষই সংক্রমনটিকে ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়নি। কিন্তু পরবর্তীতে যখন এ ভাইরাসে সংক্রমন ও মৃত্যূর সংখ্যা বাড়তে থাকে তখন পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেকটি দেশ বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিতে থাকে পরিস্থিতি নিবারণের জন্য।

এহেন সংকটে বাংলাদেশ সরকারও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রায় দেশের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং হাসপাতাল গুলোতে করোনা ইউনিট চালু করার নির্দেশ দেয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি করোনা সংকট নিবারণে এগিয়ে আসে একটি ভিন্নধর্মী সামাজিক উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান আল-মানাহিল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ।

বর্তমান সংকটে এ সংগঠনটির মূল উদ্দেশ্য হলো করোনায় মৃত ব্যক্তির লাশ গোসল, কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করা এবং আক্রান্তরোগীদেরকে এ্যাম্বুল্যান্স ও অক্সিজেন সেবা দেয়া। ২৯ জুন, ২০২০ ইং পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এ সংগঠনটির তত্ত্বাবধানে ২৬৫ টি লাশ দাফন-কাফন এবং ২২৪ জন রোগীকে এ্যাম্বুল্যান্স ও অক্সিজেন সেবা দেয়া হয়। ২৬৫ টি লাশের মধ্যে কভিড-১৯ পজিটিভ ছিল ১১২ জন, বাকিগুলো ছিল সাসপেক্টেড।

অসহায় গরীব থেকে শুরু করে সকল শ্রেনীর মানুষকে দেওয়া হচ্ছে এ সেবা। এছাড়া রয়েছে গরীবদের জন্য খাদ্য-সামগ্রী ও বিভিন্ন রকম ত্রান বিতরণ। বাংলাদেশ তথা পুরো বিশে ধণী কোম্পানির তালিকায় উঠে আসা এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোরশেদুল আলমকেও দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করে আল-মানাহিল। এছাড়া এ সেবায় রয়েছে অসংখ্যা ডাক্তার, মাস্টার ও বিভিন্ন শ্রমজীবি পেশার মানুষ।

মূলত এ সেবা দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসে আল-মানাহিল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মাওলানা হেলাল উদ্দিন,
সেক্রেটারী মাওলানা ফরিদ উদ্দিন ও সিনিয়র পরিচালক মাওলানা শিহাব উদ্দিন। তাঁরা কঠোর পরিশ্রম ও সক্রিয় তৎপর থেকে এসব কাজের আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া কিছু স্বেচ্ছাসেবক যুবকদল এগিয়ে আসে কাফন-দাফন ও আক্রান্তরোগীকে সেবা দেয়ার উদ্দেশ্যে। যারা ঘাম ঝরানো পরিশ্রমের মাধ্যমে দিয়ে যায় সেবা।

করোনা পজিটিভ লাশকে যখন তাদের স্বজন-পরিবার ও সমাজ গ্রহণ করছেনা এমন নির্দয় চিত্র দেখেই আলমানাহিলের চেয়ারম্যান-সেক্রেটারী ও অন্যান্য কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্ত নেয় এসব লাশকে এ সংগঠনের অর্থে দাফন-কাফন করা হবে। শুধু তাই নয় সনাতন ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদেরও করা হচ্ছে সৎকার।

আল-মাহিলের সেক্রেটারী মাওলানা ফরিদ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব কাজ করতে গিয়ে আসে অনেক রকম বাধা। দেখা যায় সমাজ লাশ গ্রহণ করতে চায়না, দেয়না কবরস্থানের জায়গাটুকুও। তারা এটা চিন্তা করেনা সমাজের জন্য মৃত ব্যক্তিটির অবদান, স্বজন-পরিবারের জন্য কতটুকুযোগানের ব্যবস্থা করে দিয়েছে সে। ছেলে বাবাকে, বাবা ছেলেকে, স্বামী স্ত্রীকে, স্ত্রী স্বীকে পরস্পর পরস্পরকে বিদায় দিচ্ছে খুবই নির্দয় ভাবে। এছাড়া আবার আমরা এমনও পেয়েছি যারা আমাদের খুব পাশে থেকেই তাদের স্বজনদের বিদায় দিয়েছে। এটা সত্যি যে একজন মৃত ব্যক্তির অধিকার রয়েছে সম্মানের সহিত তার বিদায় পাওয়ার।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান বলেন, এসব সেবা দিতে গিয়ে আমরা দেখেছি অনেক হাসপাতালে রোগীরা ঠিকভাবে পাচ্ছেনা সেবা-চিকিৎসা। তাই আমরা উদ্যোগ নিয়েছি এ সংকটে আক্রান্তদের সেবা হিসেবে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার। আমরা ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকায় ৬ তলা বিশিষ্ট হাসপাতাল তৈরী করি। যেখানে রয়েছে ৭০ টি জেনারেল বেড এবং প্রক্রিয়াধীন ২০ টির মতো সেন্ট্রাল আইসিইউ বেড। ০১ জুলাই এ হাসপাতাল উদ্বোধনের কথা রয়েছে।

এছাড়া সংগঠনটির সিনিয়র পরিচালক মাওলানা শিহাব উদ্দিন বলেন, এসব সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর সন্তুষ্ঠি অর্জন। সেবা দেওয়া মানুষের নৈতিক দায়িত্ব, সেবা পাওয়া মানুষের অধিকার।

সংগঠনটির পরিচালনা পর্ষদ জানায়, সেবা দিতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন রকম আর্থিক সংকটে পড়ি। এসব কাজ করতে গিয়ে আমাদের সতর্ক ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস ইত্যাদি।

এছাড়া হালিশহরে কভিড আক্রান্তরোগীদের সেবায় নির্মিত হাসপাতালের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন অনেক অর্থ।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর