০৮:১৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ইন্টারনেট বিহীন ঢাকার ৫ দিন যেমন ছিল

মহাখালির ডেটা সার্ভারে আগুন লাগার কারণে গত ৫ দিন ধরে দেশে সবধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ঢাকায় অবস্থানরত লোকজন যাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা গ্রামে অবস্থান করছে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে তাদের যোগাযোগের একমাত্র পন্থা ছিলো অফলাইনে ফোনকল যার জন্য তাদের একটা বড় অংকের রিচার্জ খরচ গুনতে হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে টিভি দেখার লোক খুব কমে গেলেও, এখন সবাই পুরনো যুগের মতো দোকানে বা কারো বাসায় টিভি দেখার জন্য একত্রিত হচ্ছে। মোবাইলের রিচার্জের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কখনো পত্রিকা না পড়া লোকটিও পাশের বাসায় পত্রিকা খুঁজেছেন। নিয়মিত দেশের খোঁজখবর রাখা সচেতন নাগরিকরা সাংবাদিক বা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আত্মীয়সজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। মোবাইল থেকে এফএম রেডিওতে খবর শুনছেন অনেকেই।

ইন্টারনেটে ছাড়া এন্ড্রয়েড ফোন গুলো কার্যত অচল। ফলে এই কয়দিন বেশিরভাগ ফোন ব্যবহার ছাড়াই পড়েছিলো। কখনো বই ধরে না দেখা লোকটিও দুই-একটা বই পড়েছেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাহিরে বের হওয়া কঠিন হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময় বাসায় কাটাতে হয়েছে সবার। সারাদিন টিভি দেখা এবং ঘুমানোই বেশিরভাগ লোকের একমাত্র কাজ ছিলো। তুলনামূলক শহরের ভিতরে থাকা লোকজনের একটু চলাফেরা বা খেলাধুলা করতে পারলেও, মহাসড়ক গুলোর আশেপাশের লোকজন বেশি ঝামেলায় পড়েছেন। পুলিশ, বিজিবি এবং আর্মির টানা টহলের কারণে তারা চাইলেও রাস্তায় বের হতে পারেনি। মেয়েরা সারাদিন লুডু/কেরাম খেলেই কাটিয়ে দিচ্ছে।

ঢাকার ইসলামবাগের বাসিন্দা নিক্সন খান(২৮) বলেন, ইন্টারনেট না থাকার কারণে সারাদিন খুব বিরক্তিকর অবস্থাতেই কেটেছে। আগে থেকে জানতে পারলে কিছু মুভি ডাউনলোড করে রাখতাম। সারাদিন অফিস শেষে রাতে ফেসবুকে কিছু সময় আর মুভি দেখেই ঘুমাতে যেতাম। এখন অফিস বন্ধ থাকায় সারাদিন বাসাতেই কাটাতে হয়। বিকেলের সময় বুড়িগঙ্গার পাড়ে কিছু সময় থাকলেও, পুলিশের টহলের কারণে আতঙ্কিত থাকতে হয়েছে।

বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুল (৩০) বলেন, অন্য সময়ে অফিস বন্ধের দিনে ক্রিকেট বা ফুটবলেই সারাদিন কাটতো। কিন্তু এখন বাহিরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, বের হওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কারফিউ এর কারণে পুলিশের নিয়মিত টহলে, বাহিরে থাকাটা অনিরাপদ হয়ে গেছিলো। বাড্ডা-রামপুরা মহাসড়কের পাশেই আমার বাসা হওয়ার কারণে, আমি রাস্তায় একদমই বের হতে পারিনি।

কেরানীগঞ্জের হুমায়রা জান্নাত (২২) বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া খুবই বিরক্তিকর সময় কাটছে। ফেসবুকে এবং ইউটিউবে অনেক সময় ই দেওয়া হয়। তাছাড়া নিয়মিত দেশের খোঁজখবর ও রাখা হয়। কিন্তু নেট না থাকার কারণে কয়েকদিন ধরেই দেশের কোনো খোঁজ খবর নিতে পারছি না। নানান গুজব ছড়িয়ে পড়লেও, সত্যতা যাচাই করতে পারছি না। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে লুডু বা ক্যারাম খেলেই কাটিয়ে দিচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, আমার দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে। কিন্তু এখন আমি ঢাকার নতুন বাজারে ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছি। মোবাইলের আসক্তি না থাকায়, নেটের অনুপস্থিতি আমাকে খুব একটা সমস্যায় ফেলেছে না। তবে আমি পড়াশোনায় যথাযথ সময় দিতে পারছি না। বিশেষ করে দেশের খোঁজ খবর নিতে না পারায় খুবই অস্তিত্ব লাগছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক

জনপ্রিয়

দশম গ্রেড বাস্তবায়নে সার্ভে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের স্মারকলিপি

ইন্টারনেট বিহীন ঢাকার ৫ দিন যেমন ছিল

প্রকাশিত : ০৪:১৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

মহাখালির ডেটা সার্ভারে আগুন লাগার কারণে গত ৫ দিন ধরে দেশে সবধরনের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ আছে। দেশে চলমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছে ঢাকায় অবস্থানরত লোকজন যাদের পরিবারের বাকি সদস্যরা গ্রামে অবস্থান করছে। ইন্টারনেট না থাকার কারণে তাদের যোগাযোগের একমাত্র পন্থা ছিলো অফলাইনে ফোনকল যার জন্য তাদের একটা বড় অংকের রিচার্জ খরচ গুনতে হচ্ছে।

বর্তমান সময়ে টিভি দেখার লোক খুব কমে গেলেও, এখন সবাই পুরনো যুগের মতো দোকানে বা কারো বাসায় টিভি দেখার জন্য একত্রিত হচ্ছে। মোবাইলের রিচার্জের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কখনো পত্রিকা না পড়া লোকটিও পাশের বাসায় পত্রিকা খুঁজেছেন। নিয়মিত দেশের খোঁজখবর রাখা সচেতন নাগরিকরা সাংবাদিক বা প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা আত্মীয়সজনদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করছেন। মোবাইল থেকে এফএম রেডিওতে খবর শুনছেন অনেকেই।

ইন্টারনেটে ছাড়া এন্ড্রয়েড ফোন গুলো কার্যত অচল। ফলে এই কয়দিন বেশিরভাগ ফোন ব্যবহার ছাড়াই পড়েছিলো। কখনো বই ধরে না দেখা লোকটিও দুই-একটা বই পড়েছেন। অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে বাহিরে বের হওয়া কঠিন হওয়ার কারণে বেশিরভাগ সময় বাসায় কাটাতে হয়েছে সবার। সারাদিন টিভি দেখা এবং ঘুমানোই বেশিরভাগ লোকের একমাত্র কাজ ছিলো। তুলনামূলক শহরের ভিতরে থাকা লোকজনের একটু চলাফেরা বা খেলাধুলা করতে পারলেও, মহাসড়ক গুলোর আশেপাশের লোকজন বেশি ঝামেলায় পড়েছেন। পুলিশ, বিজিবি এবং আর্মির টানা টহলের কারণে তারা চাইলেও রাস্তায় বের হতে পারেনি। মেয়েরা সারাদিন লুডু/কেরাম খেলেই কাটিয়ে দিচ্ছে।

ঢাকার ইসলামবাগের বাসিন্দা নিক্সন খান(২৮) বলেন, ইন্টারনেট না থাকার কারণে সারাদিন খুব বিরক্তিকর অবস্থাতেই কেটেছে। আগে থেকে জানতে পারলে কিছু মুভি ডাউনলোড করে রাখতাম। সারাদিন অফিস শেষে রাতে ফেসবুকে কিছু সময় আর মুভি দেখেই ঘুমাতে যেতাম। এখন অফিস বন্ধ থাকায় সারাদিন বাসাতেই কাটাতে হয়। বিকেলের সময় বুড়িগঙ্গার পাড়ে কিছু সময় থাকলেও, পুলিশের টহলের কারণে আতঙ্কিত থাকতে হয়েছে।

বাড্ডার বাসিন্দা সাইফুল (৩০) বলেন, অন্য সময়ে অফিস বন্ধের দিনে ক্রিকেট বা ফুটবলেই সারাদিন কাটতো। কিন্তু এখন বাহিরের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে, বের হওয়াটা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কারফিউ এর কারণে পুলিশের নিয়মিত টহলে, বাহিরে থাকাটা অনিরাপদ হয়ে গেছিলো। বাড্ডা-রামপুরা মহাসড়কের পাশেই আমার বাসা হওয়ার কারণে, আমি রাস্তায় একদমই বের হতে পারিনি।

কেরানীগঞ্জের হুমায়রা জান্নাত (২২) বলেন, ইন্টারনেট ছাড়া খুবই বিরক্তিকর সময় কাটছে। ফেসবুকে এবং ইউটিউবে অনেক সময় ই দেওয়া হয়। তাছাড়া নিয়মিত দেশের খোঁজখবর ও রাখা হয়। কিন্তু নেট না থাকার কারণে কয়েকদিন ধরেই দেশের কোনো খোঁজ খবর নিতে পারছি না। নানান গুজব ছড়িয়ে পড়লেও, সত্যতা যাচাই করতে পারছি না। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে লুডু বা ক্যারাম খেলেই কাটিয়ে দিচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোবারক হোসেন বলেন, আমার দিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে। কিন্তু এখন আমি ঢাকার নতুন বাজারে ভাইয়ের বাসায় অবস্থান করছি। মোবাইলের আসক্তি না থাকায়, নেটের অনুপস্থিতি আমাকে খুব একটা সমস্যায় ফেলেছে না। তবে আমি পড়াশোনায় যথাযথ সময় দিতে পারছি না। বিশেষ করে দেশের খোঁজ খবর নিতে না পারায় খুবই অস্তিত্ব লাগছে।

 

বিজনেস বাংলাদেশ/ফারুক