০২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অবিণাশী বর্নমালা

  • বাবুল হৃদয়
  • প্রকাশিত : ১২:০০:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১
  • 26

পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে সরকারি কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার একমাত্র ভাষা এবং সেই সঙ্গে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার অব্যাহত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে আরবি হরফে প্রচলন করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা হরফকে হিন্দু বর্ণ আখ্যা দিয়ে বাংলাকে আরবি হরফে লেখা প্রচলন করা। এই লক্ষ্যে ৯ মার্চ ১৯৪৯ সালে মৌলানা আকরম খাঁকে চেয়ারম্যান করে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার একটি বড় তহবিল গঠন করে এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্লামেন্টে এর সপক্ষে আরবিতে বাংলা লেখার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ সব ভাষাতত্ত্ববিদ আরবি হরফে বাংলা লেখার এই উদ্ভট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার তাদের মনোভাবের ব্যাপারে অনড় থাকে। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন ন্যায্য দাবি-দাওয়া পূরণে অস্বীকৃতি এবং ভাষার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ সরকারের নীতির বিরোধিতায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আহ্বায়ক হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ভাসানী ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত আট বছর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী মুসলিম লীগ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রাজপথের আন্দোলন সংগঠনের পাশাপাশি পার্লামেন্টেও রাষ্ট্রভাষা ভাষার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ কমিউনিস্ট ভাবধারার ছাত্র নেতা আবদুল মতিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট কমিটি। এই কমিটি ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে আরবি হরফে বাংলা লেখার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পাকিস্তান গণ পরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন সোচ্চার হয়ে ওঠে।

 

ট্যাগ :

অবিণাশী বর্নমালা

প্রকাশিত : ১২:০০:০৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২১

পূর্ব পাকিস্তানে বাংলাকে সরকারি কর্মকাণ্ড ও শিক্ষার একমাত্র ভাষা এবং সেই সঙ্গে উর্দুর পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার অব্যাহত আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে খাজা নাজিমুদ্দিনের উদ্যোগে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে আরবি হরফে প্রচলন করার ব্যাপারে একটি প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের মূল উদ্দেশ্য ছিল, বাংলা হরফকে হিন্দু বর্ণ আখ্যা দিয়ে বাংলাকে আরবি হরফে লেখা প্রচলন করা। এই লক্ষ্যে ৯ মার্চ ১৯৪৯ সালে মৌলানা আকরম খাঁকে চেয়ারম্যান করে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই লক্ষ্যে পাকিস্তান সরকার একটি বড় তহবিল গঠন করে এবং তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্লামেন্টে এর সপক্ষে আরবিতে বাংলা লেখার পক্ষে বক্তব্য রাখেন। কিন্তু ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহসহ সব ভাষাতত্ত্ববিদ আরবি হরফে বাংলা লেখার এই উদ্ভট প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তা সত্ত্বেও পাকিস্তান সরকার তাদের মনোভাবের ব্যাপারে অনড় থাকে। ২৩ জুন ১৯৪৯ সালে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অব্যাহত উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন ন্যায্য দাবি-দাওয়া পূরণে অস্বীকৃতি এবং ভাষার ক্ষেত্রে মুসলিম লীগ সরকারের নীতির বিরোধিতায় মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে গঠিত হয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের আহ্বায়ক হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ভাসানী ১৯৪৯ থেকে ১৯৫৭ পর্যন্ত আট বছর আওয়ামী মুসলিম লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এবং ভাষা আন্দোলনসহ পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেন। পাকিস্তানে প্রথম বিরোধী দল হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানি রাজনৈতিক নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আওয়ামী মুসলিম লীগ ভাষা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং রাজপথের আন্দোলন সংগঠনের পাশাপাশি পার্লামেন্টেও রাষ্ট্রভাষা ভাষার দাবিতে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে। ১৯৫০ সালের ১১ মার্চ কমিউনিস্ট ভাবধারার ছাত্র নেতা আবদুল মতিনের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গঠিত হয় ঢাকা ইউনিভার্সিটি স্টেট ল্যাঙ্গুয়েজ মুভমেন্ট কমিটি। এই কমিটি ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৫০ সালের এপ্রিল মাসে পার্লামেন্টে আরবি হরফে বাংলা লেখার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পাকিস্তান গণ পরিষদের সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং নবগঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের নেতারা এর তীব্র প্রতিবাদ জানান। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন সোচ্চার হয়ে ওঠে।