০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সামিনা হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম ও রোকেয়া’ গ্রেফতার

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম ও রোকেয়া’ গ্রেফতার

চাঞ্চল্যকর সামিনা হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম ও রোকেয়া’চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব-৪ এর আওতাধীন সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিনিয়ত।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২২ অগাস্ট ২০২২ র‍্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের চাঞ্চল্যকর নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে গৃহবধু সামিনা হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম (৬৪) এবং রোকেয়া (৫০)’কে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানাধীন নারায়নপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে,গত ২০০৩ সালে সাভারের কাউন্দিয়া নিবাসী ভিকটিম সামিনা (১৮) এর সাথে সাভারের বক্তারপুরের গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়ার ছোট ভাই মামলার মূল আসামী জাফরের পারিবারিকভাবে বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় কন্যা পক্ষ সাধ্য অনুযায়ী নগদ টাকা পয়সা, আসবাসপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী প্রদান করে। কিন্তু অত্যান্ত লোভী, ধুর্ত, উগ্র এবং বদমেজাজী ভিকটিমের স্বামী জাফর বিয়ের পর হতেই যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধূকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। দাবীকৃত যৌতুকের ষোল হাজার টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও ভিকটিমের দরিদ্র বাবা জুরা মিয়া ছয় হাজার টাকা জাফর ও তার পরিবারকে প্রদান করেন এবং বাকি দশ হাজার টাকা পরে দিবে বলে আসামীর পরিবারকে জানায়।

কিন্তু ভিকটিমের পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় তাদের পক্ষে বাকী টাকা দিতে আপাদত প্রকাশ করে যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভিকটিমের স্বামী জাফর, গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া, রোকেয়ার স্বামী আঃ রহিম এবং অন্যান্যরা ভিকটিমকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতে থাকে।

ঘটনার দিন অর্থাৎ ৭ জুন ২০০৫ তারিখ পূর্ব পরিকল্পনা মতে ভিকটিমকে ফুসলিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া ও আঃ রহিম এর ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন সৈয়দপুর তাদের ভাড়া বাড়িতে স্বামী জাফর দাওয়াত করে নিয়ে আসে। সেখানে গ্রেফতারকৃত আঃ রহিম, রোকেয়া, ভিকটিম এবং ভিকটিমের স্বামী জাফরের উপস্থিতিতে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা সেই যৌতুকের বাকি টাকা দাবি করলে ভিকটিম সামিনা জানায় যে তার পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় আপাদত টাকা দিতে পারবেনা।

ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে নয়ারহাট গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি দেখলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ ই জুন ২০০৫ তারিখ ভিকটিম সামিনা মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর আগে ভিকটিম আসামীদের নাম উল্লেখ করে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি প্রদান করে।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা মোসাঃ নাজমা বেগম ০৯ জুন ২০০৫ বাদী হয়ে ভিকটিমের স্বামী জাফরকে মূল অভিযুক্ত, জাফরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর, সালেক, জাফরের বড় বোন রোকেয়া ও তার স্বামী আঃ রহিম এবং জাফরের মামা ফেলানিয়া ও মোট ০৬ জনকে আসামী করে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৭(৬)০৫; ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (সংশোধনী ২০০৩) এর ৪ (১)/৩০। এই ঘটনায় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ হতে ঘটনার তথ্যানুসন্ধান, ঘটনার শিকার পরিবারের পাশে দাড়ানো, চিকিৎসা সহায়তা, মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে চিঠি প্রেরণ করে।

সে শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন এবং পেশায় একজন তালার নকল চাবি তৈরি কারক। সে ব্যক্তিগত জীবনে ০২ টি বিবাহ করেছে। ১৯৮৮ সালের দিকে সে প্রথম বিবাহ করে। বিবাহের কয়েক বছর পরে প্রথম স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। প্রথম সংসারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে আসামী রোকেয়ার সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দ্বিতীয় সংসারে তার চার সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়ে রিংকি এবং পিংকি বর্তমানে বিবাহিত।সে কখনোই এক জায়গায় বসবাস করত না। কিছুদিন পর পরই বাসস্থান পরিবর্তন করত।গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব

জনপ্রিয়

গাজাজুড়ে ইসরায়েলের নৃশংস হামলা, নারী-শিশুসহ নিহত ২৮

সামিনা হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম ও রোকেয়া’ গ্রেফতার

প্রকাশিত : ০৩:৪৭:৪৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ অগাস্ট ২০২২

চাঞ্চল্যকর সামিনা হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম ও রোকেয়া’চাঁদপুর থেকে গ্রেফতার। র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‍্যাব-৪ এর আওতাধীন সকল নাগরিকের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে প্রতিনিয়ত।

এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত ২২ অগাস্ট ২০২২ র‍্যাব-৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের চাঞ্চল্যকর নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে গৃহবধু সামিনা হত্যা মামলায় দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে পলাতক মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামী আঃ রহিম (৬৪) এবং রোকেয়া (৫০)’কে চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ থানাধীন নারায়নপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার বিবরণে জানা যায় যে,গত ২০০৩ সালে সাভারের কাউন্দিয়া নিবাসী ভিকটিম সামিনা (১৮) এর সাথে সাভারের বক্তারপুরের গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়ার ছোট ভাই মামলার মূল আসামী জাফরের পারিবারিকভাবে বিয়ে সুসম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় কন্যা পক্ষ সাধ্য অনুযায়ী নগদ টাকা পয়সা, আসবাসপত্র এবং ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী প্রদান করে। কিন্তু অত্যান্ত লোভী, ধুর্ত, উগ্র এবং বদমেজাজী ভিকটিমের স্বামী জাফর বিয়ের পর হতেই যৌতুকের টাকার জন্য গৃহবধূকে নানাভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতে থাকে। দাবীকৃত যৌতুকের ষোল হাজার টাকা প্রদান করার কথা থাকলেও ভিকটিমের দরিদ্র বাবা জুরা মিয়া ছয় হাজার টাকা জাফর ও তার পরিবারকে প্রদান করেন এবং বাকি দশ হাজার টাকা পরে দিবে বলে আসামীর পরিবারকে জানায়।

কিন্তু ভিকটিমের পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় তাদের পক্ষে বাকী টাকা দিতে আপাদত প্রকাশ করে যার প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ভিকটিমের স্বামী জাফর, গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া, রোকেয়ার স্বামী আঃ রহিম এবং অন্যান্যরা ভিকটিমকে বিভিন্ন সময়ে যৌতুকের টাকা দেওয়ার জন্য শারীরিকভাবে নির্যাতনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসতে থাকে।

ঘটনার দিন অর্থাৎ ৭ জুন ২০০৫ তারিখ পূর্ব পরিকল্পনা মতে ভিকটিমকে ফুসলিয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী রোকেয়া ও আঃ রহিম এর ঢাকা জেলার ধামরাই থানাধীন সৈয়দপুর তাদের ভাড়া বাড়িতে স্বামী জাফর দাওয়াত করে নিয়ে আসে। সেখানে গ্রেফতারকৃত আঃ রহিম, রোকেয়া, ভিকটিম এবং ভিকটিমের স্বামী জাফরের উপস্থিতিতে কথাবার্তার এক পর্যায়ে তারা সেই যৌতুকের বাকি টাকা দাবি করলে ভিকটিম সামিনা জানায় যে তার পরিবার হতদরিদ্র হওয়ায় আপাদত টাকা দিতে পারবেনা।

ভিকটিমের চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভিকটিমকে উদ্ধার করে প্রথমে নয়ারহাট গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে এবং সেখানে অবস্থার অবনতি দেখলে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ ই জুন ২০০৫ তারিখ ভিকটিম সামিনা মৃত্যুবরণ করে। মৃত্যুর আগে ভিকটিম আসামীদের নাম উল্লেখ করে মৃত্যুকালীন জবানবন্দি প্রদান করে।

উক্ত ঘটনায় ভিকটিমের মা মোসাঃ নাজমা বেগম ০৯ জুন ২০০৫ বাদী হয়ে ভিকটিমের স্বামী জাফরকে মূল অভিযুক্ত, জাফরের বড় ভাই জাহাঙ্গীর, সালেক, জাফরের বড় বোন রোকেয়া ও তার স্বামী আঃ রহিম এবং জাফরের মামা ফেলানিয়া ও মোট ০৬ জনকে আসামী করে ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করেন যার মামলা নং-৭(৬)০৫; ধারা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ এর (সংশোধনী ২০০৩) এর ৪ (১)/৩০। এই ঘটনায় বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়াসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পক্ষ হতে ঘটনার তথ্যানুসন্ধান, ঘটনার শিকার পরিবারের পাশে দাড়ানো, চিকিৎসা সহায়তা, মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণের বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ, ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তির লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে চিঠি প্রেরণ করে।

সে শুধুমাত্র স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন এবং পেশায় একজন তালার নকল চাবি তৈরি কারক। সে ব্যক্তিগত জীবনে ০২ টি বিবাহ করেছে। ১৯৮৮ সালের দিকে সে প্রথম বিবাহ করে। বিবাহের কয়েক বছর পরে প্রথম স্ত্রীর সাথে পারিবারিক কারনে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। প্রথম সংসারে তার একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে আসামী রোকেয়ার সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দ্বিতীয় সংসারে তার চার সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে রয়েছে। দুই মেয়ে রিংকি এবং পিংকি বর্তমানে বিবাহিত।সে কখনোই এক জায়গায় বসবাস করত না। কিছুদিন পর পরই বাসস্থান পরিবর্তন করত।গ্রেফতারকৃত আসামীকে সংশ্লিষ্ট থানায় হন্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব