০১:২৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

করোনার চিকিৎসায় ডক্টর সেফটি চেম্বার, সেফটি কার চালু

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করোনায় আক্রান্ত রোগীসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও সতর্কতার সঙ্গে সেবা দেওয়া, করোনার ঝুঁকিমুক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করা এবং করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়মিত রাউন্ড দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে অর্থ সহায়তা করেছে কালিহাতী উপজেলা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার স্পেশালাইজড সেফটি কার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী।

করোনার বিশেষ ব্যবস্থা সম্পর্কে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা জানান, এক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে চলে যাবার পর তার দেহে প্রথম (কালিহাতী উপজেলায় প্রথম) করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এজন্য সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিভাবে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এ নিয়ে অনেক ভাবনার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে চার কক্ষ বিশিষ্ট ডক্টর সেফটি চেম্বারের ব্যবস্থা করা হয়। এ কক্ষগুলো সম্পূর্ণ কাঁচে ঘেরা এবং এসি করা। ভেতর থেকে মাইকের মাধ্যমে বাইরের রোগীদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা যায়। রোগীর টিকেট, ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ পেতে কারো সংস্পর্শে যেতে হয় না। আধুনিক পদ্ধতিতে এ ব্যবস্থাগুলো করা হয়েছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান, করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য স্পেশালাইজড সেফটি কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ওয়ার্কশপে এটি তৈরি করা হয়েছে। কাঁচে ঘেরা এ গাড়ির ভেতর থেকে বাইরে থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এতে স্বাস্থ্যকর্মী বা টেকনিশিয়ানের করোনার ঝুঁকি থাকবে না। এ গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে। কাউকে করোনার নমুনা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আসতে হবে না। তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর দিলে ওই কার সেখানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার আদলে এ কার তৈরি করা হয়েছে। এ কারের মাধ্যমে প্রতিদিন অন্তত ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এছাড়া ডাক্তারদের ঝুঁকিমুক্তভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য ‘ডক্টর সেফটি কার্ট’ নামে একটি বিশেষ গাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কার্টের মাধ্যমে একজন ডাক্তার নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে করোনা ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে সেবা দিতে পারবেন। এজন্য তিনি তার স্বামী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলম, তার সহকর্মী মুহাম্মদ তালুত, কালিহাতীর কলেজ ছাত্র আল আমিনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। ছোট আকারের এ গাড়ির ভেতরে থেকেই ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে রোগীর তাপমাত্রা মাপা, স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা করা এবং ডিজিটাল পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে রোগীর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ও পালস মাপা যাবে। গাড়িতে থাকা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনের এ রকম উদ্যোগ নেওয়ায় রোগী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা খুশি। মো. সিয়াম তরফদার নামে এক রোগী বলেন, গাড়ির ভেতর থেকে নমুনা নেওয়া হলো। এটা ভালো ব্যবস্থা। নমুনা সংগ্রাহক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) আনিসুর রহমান বলেন, আগে নমুনা সংগ্রহ করতে ঝুঁকি থাকতো। এখন নিরাপদ থাকা যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরেও নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এতে আমাদের ব্যস্ততা বাড়লেও রোগীদের কষ্ট কম হবে।

কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে চিকিৎসার এ বিশেষ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসক ও রোগী নিরাপদ থাকবে। রোগীদের স্পর্শ ছাড়াই একজন চিকিৎসক সেবা দিতে পারবেন। রোগীও স্পর্শ ছাড়াই সেবা ও ওষুধ নিতে পারবেন। করোনা ওয়ার্ডে সেফটি কারের মাধ্যমে ডাক্তার সুরক্ষা থেকে রাউন্ড দিতে পারবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা বলেন, একের পর এক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত ও মারা গেলে রোগীদের সেবা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে। এ ভাবনা থেকেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে ডাক্তার ও রোগী নিরাপদ থাকবেন। বিশেষায়িত এ গাড়ির ব্যবস্থা যদি অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও করা যায় তাহলে করোনার ভয় ও ঝুঁকিমুক্ত থেকে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী  বলেন, উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। এজন্য তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ /ইমরান মাসুদ

জনপ্রিয়

করোনার চিকিৎসায় ডক্টর সেফটি চেম্বার, সেফটি কার চালু

প্রকাশিত : ০৩:৫০:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৭ জুন ২০২০

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে করোনায় আক্রান্ত রোগীসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদেরও সতর্কতার সঙ্গে সেবা দেওয়া, করোনার ঝুঁকিমুক্ত থেকে নমুনা সংগ্রহ করা এবং করোনায় আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন সেন্টারে নিয়মিত রাউন্ড দেওয়ার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা ও উদ্যোগে এটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে অর্থ সহায়তা করেছে কালিহাতী উপজেলা পরিষদ। গত বৃহস্পতিবার স্পেশালাইজড সেফটি কার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী।

করোনার বিশেষ ব্যবস্থা সম্পর্কে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা জানান, এক রোগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাধারণ চিকিৎসা নিয়ে চলে যাবার পর তার দেহে প্রথম (কালিহাতী উপজেলায় প্রথম) করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এজন্য সাধারণ রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, কিভাবে ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। এ নিয়ে অনেক ভাবনার পর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোরে চার কক্ষ বিশিষ্ট ডক্টর সেফটি চেম্বারের ব্যবস্থা করা হয়। এ কক্ষগুলো সম্পূর্ণ কাঁচে ঘেরা এবং এসি করা। ভেতর থেকে মাইকের মাধ্যমে বাইরের রোগীদের সঙ্গে কথা বলা যায়, তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা যায়। রোগীর টিকেট, ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ পেতে কারো সংস্পর্শে যেতে হয় না। আধুনিক পদ্ধতিতে এ ব্যবস্থাগুলো করা হয়েছে।

নির্বাহী কর্মকর্তা আরো জানান, করোনার নমুনা সংগ্রহের জন্য স্পেশালাইজড সেফটি কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয়ভাবে ওয়ার্কশপে এটি তৈরি করা হয়েছে। কাঁচে ঘেরা এ গাড়ির ভেতর থেকে বাইরে থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এতে স্বাস্থ্যকর্মী বা টেকনিশিয়ানের করোনার ঝুঁকি থাকবে না। এ গাড়ি উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে নমুনা সংগ্রহ করতে পারবে। কাউকে করোনার নমুনা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও আসতে হবে না। তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খবর দিলে ওই কার সেখানে গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের চিকিৎসা ব্যবস্থার আদলে এ কার তৈরি করা হয়েছে। এ কারের মাধ্যমে প্রতিদিন অন্তত ৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা যাবে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

এছাড়া ডাক্তারদের ঝুঁকিমুক্তভাবে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার জন্য ‘ডক্টর সেফটি কার্ট’ নামে একটি বিশেষ গাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ কার্টের মাধ্যমে একজন ডাক্তার নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করে করোনা ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে সেবা দিতে পারবেন। এজন্য তিনি তার স্বামী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শাহ আলম, তার সহকর্মী মুহাম্মদ তালুত, কালিহাতীর কলেজ ছাত্র আল আমিনের পরামর্শ ও সহযোগিতা নিয়ে থাকেন। ছোট আকারের এ গাড়ির ভেতরে থেকেই ডিজিটাল থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে রোগীর তাপমাত্রা মাপা, স্টেথোস্কোপের মাধ্যমে রোগীকে পরীক্ষা করা এবং ডিজিটাল পালস অক্সিমিটারের সাহায্যে রোগীর শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ও পালস মাপা যাবে। গাড়িতে থাকা মাইক্রোফোনের মাধ্যমে রোগীর সঙ্গে কথা বলে ডাক্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে কালিহাতী উপজেলা প্রশাসনের এ রকম উদ্যোগ নেওয়ায় রোগী ও চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা খুশি। মো. সিয়াম তরফদার নামে এক রোগী বলেন, গাড়ির ভেতর থেকে নমুনা নেওয়া হলো। এটা ভালো ব্যবস্থা। নমুনা সংগ্রাহক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) আনিসুর রহমান বলেন, আগে নমুনা সংগ্রহ করতে ঝুঁকি থাকতো। এখন নিরাপদ থাকা যাবে। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরে ঘুরেও নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এতে আমাদের ব্যস্ততা বাড়লেও রোগীদের কষ্ট কম হবে।

কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণকালে চিকিৎসার এ বিশেষ ব্যবস্থার কারণে চিকিৎসক ও রোগী নিরাপদ থাকবে। রোগীদের স্পর্শ ছাড়াই একজন চিকিৎসক সেবা দিতে পারবেন। রোগীও স্পর্শ ছাড়াই সেবা ও ওষুধ নিতে পারবেন। করোনা ওয়ার্ডে সেফটি কারের মাধ্যমে ডাক্তার সুরক্ষা থেকে রাউন্ড দিতে পারবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা বলেন, একের পর এক ডাক্তার করোনায় আক্রান্ত ও মারা গেলে রোগীদের সেবা কিভাবে নিশ্চিত করা যাবে। এ ভাবনা থেকেই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এতে ডাক্তার ও রোগী নিরাপদ থাকবেন। বিশেষায়িত এ গাড়ির ব্যবস্থা যদি অন্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও করা যায় তাহলে করোনার ভয় ও ঝুঁকিমুক্ত থেকে চিকিৎসা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারী  বলেন, উপজেলা প্রশাসনের এ উদ্যোগ অবশ্যই ভালো। এজন্য তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

বিজনেস বাংলাদেশ /ইমরান মাসুদ