০৪:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

করোনা ভাইরাসের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে লালমনিহাটের কৃষি অর্থনীতি

করোনা ভাইরাসের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে লালমনিরহাটে কৃষি অর্থনীতি। এ অঞ্চলে কৃষকের লাভজনক চাষাবাদ হচ্ছে সবজি। ফলন ভাল হলেও পরিবহন ও বাহিরের পাইকার নেই। তাই কৃষকরা নিজেরাই দোকান সাজিয়ে বসছেন বাজারে। সেখানেও ক্রেতা নেই। উৎপাদন খরচ তোলতে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষিপণ্য। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় ৩৮ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে সবজির চাষাবাদ হয়েছে। যা এই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৯ হেক্টর জমিতে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেগুন, করলা, বরবটি, পুইশাক, পটোল, ঝিঙ্গা, সিম, কাঁচা মরিচ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটোসহ নানা ফল ও শাকসবজি।

এসব সবজি লালমনিরহাট অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্যক ট্রাকযোগে সরবরাহ করা হতো। বেশির ভাগ সবজি চাষীর বৃহৎ বাজার ছিল ঢাকার রাজধানী। কিন্তু এবার করোনা প্রভাবে পরিবহন সংকট ও বাজারে পাইকারি ক্রেতা না থাকায় সবজি চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতার অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন সবজি।

করোনা প্রভাবে সৃষ্ট সংকটে লালমনিরহাটের কৃষি উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবহন সংকটের কারণে শাকসবজি ও উৎপাদিত ফল লালমনিরহাট থেকে বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ তুলতে নিজেরাই হাট-বাজারে দোকান সাজিয়ে বসছেন অনেক সবজি চাষি কৃষক। সেখানেও ক্রেতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। করোনা আতঙ্কে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসাও এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় মাঠ ভরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষেতেই সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা মিলছে না। যদিও বাজারে কিছু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। চলতি মৌসুমের কৃষি ফসল উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিনির্ভর গৃহস্থপরিবার ও কৃষি শ্রমিকরা। কৃষকদের জীবনযাপনে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরবর্তী কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।

ফলে কৃষকরা এখন নিজেরাই বেগুন, করলা, বরবটি, পুইশাক, পটোল, ঝিঙ্গা, সিম, কাঁচা মরিচ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো ও শাক-সবজির দোকান সাজিয়ে বসছেন বিভিন্ন হাটবাজারে।
বুধবার (১০ জুন) সদর উপজেলার বিভিন্ন  বাজারে এচিত্র দেখা গেছে।

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের ঝিঙ্গা চাষী ছব্বুল হোসেন বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আগামীতে কৃষি উৎপাদনে অশনি সংকেত বলে মনে করছেন। কৃষি শ্রমিক ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় কৃষি পন্য বিক্রি হচ্ছে না। আর সময় মত ফসল বিক্রি না হলে তা জমিতে নষ্ট হচ্ছে। পাইকারী বাজারে দামও নেই। তাই নিজে দোকান দিয়ে খুচরা বিক্রি করে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।

তার পাশের দোকানদ্বার একই ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের কুমড়া চাষী মজিবর রহমান বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ১৫ শতক জমিতে কুমড়া বর্গা হিসেবে চাষ করেছি। প্রায় ২৫০/৩০০ পিচ কুমড়া পেয়েছি। খরচ উঠিয়ে লাভ এর জায়গা লোকসান গুনতে হচ্ছে। পাইকারী বাজারে চাহিদা নেই। তাই নিজে দোকান দিয়ে খুচরা বিক্রি করছি প্রতিপিচ ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। অনেক দিন থেকে কুমড়া ঘরে পরে থাকতে থাকতে পচে যাচ্ছে। কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভুষন রায় বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, করোনার কারণে ক্রেতাসহ পরিবহন সংকটে সবজির দাম কিছুটা কম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। দুর্যোগ কেটে গেলে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ ইমরান মাসুদ

জনপ্রিয়

করোনা ভাইরাসের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে লালমনিহাটের কৃষি অর্থনীতি

প্রকাশিত : ০৪:৩১:৫২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জুন ২০২০

করোনা ভাইরাসের কারণে ভেঙ্গে পড়েছে লালমনিরহাটে কৃষি অর্থনীতি। এ অঞ্চলে কৃষকের লাভজনক চাষাবাদ হচ্ছে সবজি। ফলন ভাল হলেও পরিবহন ও বাহিরের পাইকার নেই। তাই কৃষকরা নিজেরাই দোকান সাজিয়ে বসছেন বাজারে। সেখানেও ক্রেতা নেই। উৎপাদন খরচ তোলতে পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষিপণ্য। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় ৩৮ হাজার ৭৩৬ হেক্টর জমিতে সবজির চাষাবাদ হয়েছে। যা এই মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ২৯ হেক্টর জমিতে বেশি সবজি চাষাবাদ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি পরিমাণে বেগুন, করলা, বরবটি, পুইশাক, পটোল, ঝিঙ্গা, সিম, কাঁচা মরিচ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটোসহ নানা ফল ও শাকসবজি।

এসব সবজি লালমনিরহাট অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসংখ্যক ট্রাকযোগে সরবরাহ করা হতো। বেশির ভাগ সবজি চাষীর বৃহৎ বাজার ছিল ঢাকার রাজধানী। কিন্তু এবার করোনা প্রভাবে পরিবহন সংকট ও বাজারে পাইকারি ক্রেতা না থাকায় সবজি চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। ক্রেতার অভাবে পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন সবজি।

করোনা প্রভাবে সৃষ্ট সংকটে লালমনিরহাটের কৃষি উৎপাদন স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিবহন সংকটের কারণে শাকসবজি ও উৎপাদিত ফল লালমনিরহাট থেকে বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। উৎপাদন খরচ তুলতে নিজেরাই হাট-বাজারে দোকান সাজিয়ে বসছেন অনেক সবজি চাষি কৃষক। সেখানেও ক্রেতা নেই। এমন পরিস্থিতিতে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। করোনা আতঙ্কে এখন ক্রেতা-বিক্রেতার পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসাও এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় মাঠ ভরা সবজি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষেতেই সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ক্রেতা মিলছে না। যদিও বাজারে কিছু বিক্রি হচ্ছে পানির দামে। চলতি মৌসুমের কৃষি ফসল উৎপাদন ও বিপণন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষিনির্ভর গৃহস্থপরিবার ও কৃষি শ্রমিকরা। কৃষকদের জীবনযাপনে মারাত্মক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরবর্তী কৃষি উৎপাদন নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।

ফলে কৃষকরা এখন নিজেরাই বেগুন, করলা, বরবটি, পুইশাক, পটোল, ঝিঙ্গা, সিম, কাঁচা মরিচ, শশা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো ও শাক-সবজির দোকান সাজিয়ে বসছেন বিভিন্ন হাটবাজারে।
বুধবার (১০ জুন) সদর উপজেলার বিভিন্ন  বাজারে এচিত্র দেখা গেছে।

মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের তেলীপাড়া গ্রামের ঝিঙ্গা চাষী ছব্বুল হোসেন বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, আগামীতে কৃষি উৎপাদনে অশনি সংকেত বলে মনে করছেন। কৃষি শ্রমিক ও দোকানপাট বন্ধ থাকায় কৃষি পন্য বিক্রি হচ্ছে না। আর সময় মত ফসল বিক্রি না হলে তা জমিতে নষ্ট হচ্ছে। পাইকারী বাজারে দামও নেই। তাই নিজে দোকান দিয়ে খুচরা বিক্রি করে কিছু ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছি।

তার পাশের দোকানদ্বার একই ইউনিয়নের চিনিপাড়া গ্রামের কুমড়া চাষী মজিবর রহমান বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ১৫ শতক জমিতে কুমড়া বর্গা হিসেবে চাষ করেছি। প্রায় ২৫০/৩০০ পিচ কুমড়া পেয়েছি। খরচ উঠিয়ে লাভ এর জায়গা লোকসান গুনতে হচ্ছে। পাইকারী বাজারে চাহিদা নেই। তাই নিজে দোকান দিয়ে খুচরা বিক্রি করছি প্রতিপিচ ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। অনেক দিন থেকে কুমড়া ঘরে পরে থাকতে থাকতে পচে যাচ্ছে। কম দামে তা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক বিধু ভুষন রায় বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, করোনার কারণে ক্রেতাসহ পরিবহন সংকটে সবজির দাম কিছুটা কম। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা। দুর্যোগ কেটে গেলে কৃষকরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন বলে মনে করি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ ইমরান মাসুদ