রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় গত কয়েকদিন ধরে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে পুরো অঞ্চলজুড়ে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের দেখা না মেলায় প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও শীতের অনুভূতি অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের ও অতিদরিদ্র মানুষ।
উত্তরাঞ্চলের রংপুর, পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও গাইবান্ধা জেলায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে।ঘন কুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে জনজীবন কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে।সকালে ঘর থেকে বের হতে না পারায় কর্মজীবী মানুষ, বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের আয় কমে গেছে।
ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও অনেক স্থানে যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে।এতে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।বিশেষ করে ভোর ও সকালবেলায় দৃশ্যমানতা কম থাকায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
অতিরিক্ত ঠান্ডা ও কুয়াশার প্রভাবে শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।শীত নিবারণের জন্য মানুষ ছুটছে গরম কাপড়ের দোকানে।ফুটপাত ও ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোতে শীতের পোশাক কিনতে নিম্নআয়ের মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।একই সময় রংপুরে তাপমাত্রা ছিল ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১৩ দশমিক ০ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১৩ দশমিক ৬ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, নীলফামারীতে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ঠাকুরগাঁওয়ে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং গাইবান্ধায় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল প্রায় ৯৯ শতাংশ।
স্থানীয় রিকসা চালক বাবুল মিয়া বলেন, “দিনে যা আয় হয়, তাতে খাবার জোগাড় করাই কষ্ট। নতুন শীতের কাপড় কেনার সামর্থ্য নেই। পুরোনো একটা জ্যাকেট কিনেছি, তাতেই চলতে হচ্ছে।” একই কথা জানান দিনমজুর ও ভ্যানচালকরাও।
কাপড় ব্যবসায় জয়নাল,চান মিয়া,বলেন,এ বছর পাইকাররা পুরোনো কাপড়ের দাম বেশি নিচ্ছেন।ফলে তারাও বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।ব্যবসায়ীর দাবি, সরকার পুরোনো কাপড় আমদানির কোটা কমিয়ে দেওয়ায় বাজারে সরবরাহ কমেছে।এতে দাম বেড়েছে, যার চাপ গিয়ে পড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের ওপর।
এদিকে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন অতিদরিদ্র মানুষ।রাস্তায় বসবাসকারী, খেটে খাওয়া মানুষ ও বয়স্করা খড়কুটো, কাঠ কিংবা পরিত্যক্ত কাগজ জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।ভোর ও রাতের তীব্র শীতে কাজের সুযোগ কমে যাওয়ায় অনেক শ্রমজীবী মানুষের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে সংসার চালানো ও শীত মোকাবিলা-দুই দিকেই বেড়েছে তাদের দুর্ভোগ।
আবহাওয়াবিদরা জানান, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় কুয়াশা দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এবং সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে প্রকৃত তাপমাত্রা খুব কম না হলেও শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানান,গত কয়েকদিন ধরে রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
তিনি আরও জানান, বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় কুয়াশা কাটছে না এবং সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে শীতের অনুভূতি প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়েও বেশি হচ্ছে। এই পরিস্থিতি আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।শীত মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমান শৈত্যপ্রবাহের এই অবস্থা আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এ সময় ভোর ও সকাল বেলায় কুয়াশা ঘন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই শীতজনিত দুর্ভোগ কমাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি সড়কে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ডিএস./


























