সিপিবি নওগাঁ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট মহসীন রেজা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের প্রধান শিল্প পাটকলসমূহ রাষ্ট্রায়ত্তকরণ করা ছিল ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট্রের ২১-দফা ও ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র সমাজের ১১-দফার অন্যতম অঙ্গীকারের বাস্তবায়ন। গত ৪০ বছর ধরে ক্ষমতাসীন সরকারসমূহ এশিয়ার বৃহত্তম পাটকল আদমজীসহ সকল পাটকল বন্ধ বা বেসরকারিকরণ করে জাতি ও মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।
তিনি বলেন, ১৯৯২ সালে বিএনপি-জামাত সরকারের শিল্পমন্ত্রী রাজাকার নিজামীর হাত দিয়ে দেশের বৃহত্তম আদমজী পাটকল বন্ধ করে দেয়া হয়। আর আজ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার বর্তমান আওয়ামী সরকার মুক্তিযুদ্ধে খেতাবপ্রাপ্ত মন্ত্রীর হাত দিয়ে অবশিষ্ট ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ কাজের জন্য জাতি কখনও তাদের ক্ষমা করবে না।
রাষ্ট্রীয় ২৫টি পাটকল বন্ধে সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নওগাঁ জেলা শাখার উদ্যোগে শনিবার দুপুর ১২টায় নওগাঁ শহরের ব্রীজের মোড়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মহসীন রেজা বলেন, সরকার লোকসানের কথা বলে পাটকলসমূহ বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাটকলসমূহ রাষ্ট্রীয়করণের পর থেকে এ পর্যন্ত পুঞ্জীভূত লোকসানের পরিমাণ মাত্র ১০ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। আর এ সরকারই গত ৬ বছরে দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনের কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে ৬২ হাজার কোটি প্রদান করেছে। বাংলাদেশের পাট শিল্পকে ছোট করে ফেলা এবং সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিখাতে ছেড়ে দেয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের ফসল। তা না হলে মাত্র ১২শ’ কোটি টাকা দিয়ে আধুনিকায়ন না করে ৫ হাজার কোটি টাকা দিয়ে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক করে ২৫টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে কেন? এটি ক্ষমতাসীন লুটেরাগোষ্ঠীকে তোষামদ করার সরকারের দুরভিসন্ধি মাত্র। করোনা মহাবিপর্যয়কালে মানুষকে জীবিকাচ্যুত করার এ ধরনের মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সরকারের নৈতিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি প্রদ্যুৎ ফৌজদার, আদিবাসী নেত্রী রেবেকা সরেন, কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর রহমান, যুব নেতা অ্যাডভোকেট মমিনুল ইসলাম স্বপন, ছাত্র নেতা শামীম আহসান প্রমূখ।
বক্তরা বলেন, দেশের লাখ লাখ কৃষক পাট চাষের সাথে সম্পৃক্ত। এ সকল কৃষককে বেসরকারি পাটকল মালিকদের হাতে ছেড়ে দেয়া হবে। পাটের দাম নিয়ন্ত্রণ করার একছত্র ক্ষমতা পেয়ে যাবে বেসরকারি পাটকল মালিকরা। আর উৎপাদিত পাটের একটা বড় অংশ পাশের দেশে পাচার হয়ে যাবে তাদের পাটকলসমূহের কাঁচামাল হওয়ার জন্য। তিনি একশ শতাংশ দেশীয় পাট শিল্পকে ব্যক্তি মালিকানায় তুলে দেয়ার তীব্র নিন্দা ও রাষ্ট্রীয় পাটকলসমূহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করে তা প্রত্যাহরের দাবি জানান। তারা পাটকল বন্ধ করে পাট চাষ ও পাট শিল্পকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা না করে মাত্র ১২শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আধুনিকায়ন করার মাধ্যমে দেশীয় পাট শিল্প টিকিয়ে রাখতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ