১২:৫৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

শিগগিরই গভর্নর পাচ্ছে অভিভাবকহীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। তবে আইনটি গত ৩ জুলাইয়ের আগে সংশোধন না হওয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতায় ফজলে কবিরকে গভর্নর পদ থেকে সরে যেত হয়। তাই ৩ জুলাইয়ের পরের দিন থেকেই গভর্নরহীন তথা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে ইতোমধ্যে গত ৯ জুলাই বিরোধীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির বিল সংসদে পাস হয়। এটির গেজেটও প্রকাশ করেছে সরকার। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়স এখন ৬৫ থেকে বেড়ে ৬৭ বছর হলো।

আর এ আইন অনুসারেই ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এটি অনুমোদিত হয়ে আগামীকালই (১৫ জুলাই) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, ইতোমধ্যেই ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এটি আগামীকালকের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে আসবে। তারপরই গভর্নর নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩ জুলাই। ৩ জুলাই শুক্রবার হওয়ায় গত ২ জুলাই গভর্নর হিসেবে ছিল তার শেষ কার্যদিবস। তারপর থেকেই গভর্নরহীন অবস্থায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গভর্নরের অবর্তমানে দুই ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে ডেপুটি গভর্নর-১ এস এম মনিরুজ্জামান ও ডেপুটি গভর্নর-২ আহমেদ জামাল দায়িত্ব পালন করবেন।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে গভর্নরের যোগদানের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মনিরুজ্জামান ও আহমেদ জামাল নিজ নিজ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এসএম মনিরুজ্জামান গভর্নরের দৈনিক ডাক দেখবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরকে ডেপুটি গভর্নরদ্বয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করবেন। প্রয়োজনে কার্যোত্তর অনুমোদন গ্রহণ করবেন।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সে সময়ও অল্প কয়েকদিন গভর্নরহীন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ দেশের ১১তম গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরকে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকাই ১৯ মার্চ যোগ দেন। অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময় গভর্নর ছাড়া ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইনে। তাই সরকার বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর রাখতে চায়।

তাই বিরোধীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির বিল গত ৯ জুলাই সংসদে পাস হয়েছে। সেদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২০’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিদের ওই বিলটির বিষয়ে সংসদে আপত্তি ছিল যে, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর এই পদে রেখে দেয়ার জন্যই বিল আনা হয়েছে। অথচ এই গভর্নরের কোনো অর্জন নেই। তিনি চুরি হয়ে যাওয়া রিজার্ভ ফিরিয়ে আনতে পারেননি। খেলাপি ঋণও আদায় করতে পারেননি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

শিগগিরই গভর্নর পাচ্ছে অভিভাবকহীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক

প্রকাশিত : ০৭:০০:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই ২০২০

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর জন্য আইন সংশোধন করা হয়েছে। তবে আইনটি গত ৩ জুলাইয়ের আগে সংশোধন না হওয়ায় আইনি বাধ্যবাধকতায় ফজলে কবিরকে গভর্নর পদ থেকে সরে যেত হয়। তাই ৩ জুলাইয়ের পরের দিন থেকেই গভর্নরহীন তথা অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তবে ইতোমধ্যে গত ৯ জুলাই বিরোধীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির বিল সংসদে পাস হয়। এটির গেজেটও প্রকাশ করেছে সরকার। এর ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বয়স এখন ৬৫ থেকে বেড়ে ৬৭ বছর হলো।

আর এ আইন অনুসারেই ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এটি অনুমোদিত হয়ে আগামীকালই (১৫ জুলাই) আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এরপরই অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মঙ্গলবার বলেন, ইতোমধ্যেই ফজলে কবিরকে পুনরায় গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, এটি আগামীকালকের মধ্যেই অনুমোদন হয়ে আসবে। তারপরই গভর্নর নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের মেয়াদ শেষ হয় গত ৩ জুলাই। ৩ জুলাই শুক্রবার হওয়ায় গত ২ জুলাই গভর্নর হিসেবে ছিল তার শেষ কার্যদিবস। তারপর থেকেই গভর্নরহীন অবস্থায় রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে গভর্নরের অবর্তমানে দুই ডেপুটি গভর্নরকে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। গত ২ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মো. জেহাদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে ডেপুটি গভর্নর-১ এস এম মনিরুজ্জামান ও ডেপুটি গভর্নর-২ আহমেদ জামাল দায়িত্ব পালন করবেন।

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের অবর্তমানে দৈনন্দিন কার্যক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে গভর্নরের যোগদানের আগ পর্যন্ত ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর মনিরুজ্জামান ও আহমেদ জামাল নিজ নিজ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এসএম মনিরুজ্জামান গভর্নরের দৈনিক ডাক দেখবেন এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে পাঠাবেন। পরে নিয়োগপ্রাপ্ত গভর্নরকে ডেপুটি গভর্নরদ্বয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবহিত করবেন। প্রয়োজনে কার্যোত্তর অনুমোদন গ্রহণ করবেন।

রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ পদত্যাগে বাধ্য হন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। সে সময়ও অল্প কয়েকদিন গভর্নরহীন ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

২০১৬ সালের ১৫ মার্চ দেশের ১১তম গভর্নর হিসেবে ফজলে কবিরকে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকাই ১৯ মার্চ যোগ দেন। অর্থাৎ ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ থেকে ১৮ মার্চ পর্যন্ত সময় গভর্নর ছাড়া ছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এক লাখ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এ প্যাকেজ বাস্তবায়ন হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গাইডলাইনে। তাই সরকার বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর রাখতে চায়।

তাই বিরোধীদের আপত্তির মুখে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের চাকরির মেয়াদ দুই বছর বৃদ্ধির বিল গত ৯ জুলাই সংসদে পাস হয়েছে। সেদিন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের পক্ষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাতীয় সংসদে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০২০’ পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

তবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিদের ওই বিলটির বিষয়ে সংসদে আপত্তি ছিল যে, মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর ফজলে কবিরকে আরও দুই বছর এই পদে রেখে দেয়ার জন্যই বিল আনা হয়েছে। অথচ এই গভর্নরের কোনো অর্জন নেই। তিনি চুরি হয়ে যাওয়া রিজার্ভ ফিরিয়ে আনতে পারেননি। খেলাপি ঋণও আদায় করতে পারেননি।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত