চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্তের কাজে ল্যাবে সহযোগিতা করেন বিশ বাইশজন শিক্ষক শিক্ষার্থী। প্রতিদিন সকাল বিকাল দুই শিফটে উনাদের আনা নেওয়া করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ড্রাইভার মো. আমীর। ঝুঁকি জেনেও এ কাজ করে যাচ্ছেন নিয়মিত। হাসি মুখে কথা বলেন সবার সাথে। অল্প দিনে ল্যাবে কাজ করা সকলের মন জয় করে নিয়েছেন পঞ্চাশোর্ধ মানুষটি। করোনার দুঃসময়ে এমন সহযোগিতা সত্যিই প্রশংসার। করোনা কেটে গেলেও এসব লোকদের অবদান স্বরণ রাখবে সবাই।
গত ২৯ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের গাড়ি চালাচ্ছেন মো. আমীর। গ্রামের বাড়ি ফেনী হলেও চাকরির সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কর্মচারি কলোনিতে থাকেন। করোনা শুরু থেকেই অন্যান্যদের ছুটি থাকলেও কমই ছুটি মিলত তার। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে করোনার নমুনা পরীক্ষার ল্যাব চালু হলে দায়িত্ব পড়ে সেখানে।
চার পাঁচজন শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পনেরো ষোলোজন সাবেক-বর্তমান শিক্ষার্থীকে সকাল বিকাল দুই শিফটে আনা নেওয়া করেন তিনি। কয়েকদিন পর পর ড্রাইভার পরিবর্তন হওয়ার নিয়ম থাকলেও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সাথে হৃদ্যতা বেড়ে যাওয়াই তারাই ড্রাইভার পরিবর্তন করতে না করে দেন পরিবহন দপ্তরকে।
ঝুঁকি জেনেও নিয়মিত সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন কেন? আপনি চায়লে তো কর্তৃপক্ষকে বলে ছুটি নিতে পারেন – এমন প্রশ্ন করলে হেসে দিয়ে মো. আমীর বলেন, সবাই যদি ঝুঁকির বলে ঘরে বসে থাকে, তাহলে হবে না। কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতে হবে। ল্যাবে যারা কাজ করে তারা তো ভাইরাসটা হাতে নিয়ে পরীক্ষা করছে। এতে তাদের সংক্রমণ হওয়ার সম্ভবনা আরও বেশি। আমি তো এর থেকে কম ঝুঁকিতে আছি।
এছাড়া আমাদের ল্যাবে চীন থেকে কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী এসে নমুনার পরীক্ষার কাজে সহযোগিতা করছেন। এটা তো উনারা দেশকে ভালবেসে করছে। এটাও তো ঝুঁকির। আমার ভালো লাগে উনাদের আনা নেওয়া করতে। আমি মনে করি এটাও একটা যুদ্ধের মত। আর আমার পেশাটাকে আমি জনসেবা মনে করি। এ সেবা করতে আমার ভালো লাগে। আমি এটাতে উপভোগ করি।
এ কাজে পরিবারের কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন- এমন প্রশ্নে মো. আমীর বলেন, আমার পরিবার আমাকে সব সময় উৎসাহ দেয় কাজটি করার জন্য। প্রতিদিন নিয়ম করে পানি গরম করে দেওয়া, আদা ও লেবুর রস করে দেওয়া এবং মানসিক সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সময় বাসার গাছপাকা কাঁঠাল ও আম দিয়ে দেয় শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীদের অনেকেও মো. আমীরের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে দেখা যায়। অনেকে আবার ভালবাসা মাখা আবেগি স্ট্যাটাসও দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক


























