০৭:২৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫

রবীন্দ্রনাথের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস আজ

আজ ২২ শ্রাবণ, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস। মহাকালের চেনা পথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। বিশ্বব্যাপী রবিভক্তদের কাছে বাইশে শ্রাবণ দিনটি শোকের, শূন্যতার। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি মলীন হয়েছিলেন এদিন।

রবীন্দ্রকাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যুবন্ধনা করেছেন তিনি এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান ॥

বাংলা ১৩৪৮ সনের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় বর্ষণসিক্ত শ্রাবণে তিনি পরলোকগমন করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ লিখে ১৯১৩ সালে জয় করেছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। তবে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকারে প্রতিবাদে ওই উপাধি ত্যাগ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। এক কথায় সার্বভৌম লেখক তিনি। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান। সেই কবি প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সেদিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন : ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’

৮০ বছরের জীবনসাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অমরতার শাশ্বত বার্তায়। কলকাতায় জন্ম হলেও পৈতৃক জমিদারি দেখভালের জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বহুবার। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে জমিদারবাড়ি আজও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। বাংলাদেশের কৃষির সাথে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক সম্পর্ক। সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। তার কবিতা, গান ও গল্প ছুঁয়ে গেছে পাঠকহৃদয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে নিজস্ব ভঙিমায় উপস্থাপন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা)।

জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সাধের শান্তিনিকেতনে। সেদিন তার কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’।

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।

আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি।’ পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। অগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ে। ৬ অগস্ট রাখিপূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে জপ করা হলো ব্রাহ্মমন্ত্র ‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতমৃ’ ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ৃ’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যুপথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃতআলোকে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

জনপ্রিয়

হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন পেলেন সৈয়দ মোঃ ফয়সল

রবীন্দ্রনাথের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস আজ

প্রকাশিত : ০৪:৪১:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ অগাস্ট ২০২০

আজ ২২ শ্রাবণ, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৭৯তম প্রয়াণ দিবস। মহাকালের চেনা পথ ধরে প্রতিবছর বাইশে শ্রাবণ আসে। বিশ্বব্যাপী রবিভক্তদের কাছে বাইশে শ্রাবণ দিনটি শোকের, শূন্যতার। রবীন্দ্র কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি মলীন হয়েছিলেন এদিন।

রবীন্দ্রকাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে। জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যুবন্ধনা করেছেন তিনি এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান ॥

বাংলা ১৩৪৮ সনের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় বর্ষণসিক্ত শ্রাবণে তিনি পরলোকগমন করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ লিখে ১৯১৩ সালে জয় করেছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। তবে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকারে প্রতিবাদে ওই উপাধি ত্যাগ করেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। এক কথায় সার্বভৌম লেখক তিনি। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান। সেই কবি প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সেদিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন : ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’

৮০ বছরের জীবনসাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অমরতার শাশ্বত বার্তায়। কলকাতায় জন্ম হলেও পৈতৃক জমিদারি দেখভালের জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বহুবার। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে জমিদারবাড়ি আজও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। বাংলাদেশের কৃষির সাথে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক সম্পর্ক। সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। তার কবিতা, গান ও গল্প ছুঁয়ে গেছে পাঠকহৃদয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে নিজস্ব ভঙিমায় উপস্থাপন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা)।

জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সাধের শান্তিনিকেতনে। সেদিন তার কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’।

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনও তিনি শয্যাশায়ী, কখনও মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তিনিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূবের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।

আগস্টের প্রথম দিন দুপুরবেলা থেকেই রবীন্দ্রনাথের হিক্কা শুরু হয়। কবি কাতর স্বরে তখন উপস্থিত সবাইকে বলেছিলেন, ‘একটা কিছু করো, দেখতে পাচ্ছো না কী রকম কষ্ট পাচ্ছি।’ পরের দিন হিক্কা থামানোর জন্য ময়ূরের পালক পুড়িয়ে খাওয়ানো হলেও তাতে কিছুমাত্র লাঘব হল না। অগস্টের ৩ তারিখ থেকে কিডনিও নিঃসাড় হয়ে পড়ে। ৬ অগস্ট রাখিপূর্ণিমার দিন কবিকে পূবদিকে মাথা করে শোয়ানো হল। পরদিন ২২শে শ্রাবণ, ৭ আগস্ট রবীন্দ্রনাথের কানের কাছে জপ করা হলো ব্রাহ্মমন্ত্র ‘শান্তম, শিবম, অদ্বৈতমৃ’ ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়ৃ’।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তখন মৃত্যুপথযাত্রী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির ঘড়িতে তখন ২২শে শ্রাবণের বেলা ১২টা বেজে ১০ মিনিট। কবি চলে গেলেন অমৃতআলোকে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর