০৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫

‘কালো গাড়ি দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফিরবেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন তাকে নিতে এসেছিল একটি ‘কালো গাড়ি’। জীবনের শেষ বিকালে কালো গাড়ি দেখে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গাড়ি দেখে বারবার একটি মন্তব্য করেন, ‘আজকে কালো গাড়ি’! আমার শোনা ওটাই তার শেষ মন্তব্য। আমরা তাকালাম। খুবই বিষন্ন মন নিয়ে বিদায় নিলেন বাঙালি জাতির পরম সুহৃদ শেখ মুজিবুর রহমান!’

একান্ত সচিব বলেন, ‘এটা একটা আশ্চর্য বিষয়! ওইদিন যে গাড়িটি তাকে নিতে আসে সেটি কালো রঙের ছিল। কালো রঙের গাড়িটি দেখে বঙ্গবন্ধু খুব মন খারাপ করেন।’

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু কোন দিন কোন গাড়িতে চড়বেন সেটা তার প্রটোকলের লোকরাই ঠিক করতো। তিনটি গাড়িতে যাতায়াত করতেন তিনি। তার মধ্যে একটি সাদা ও একটি কালো রঙের। বঙ্গবন্ধু যখন গণভবন থেকে চলে যান তখন আমরা কয়েকজন প্রতিদিনের মতোই তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম।’

বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব বলেন, ‘সেদিন গণভবন থেকে ঘরে ফেরার মুহূর্তে অন্যদিনের মতোই সচিবদের কাছ থেকে বিদায় নিলেও নিভৃতে এক বিষন্নতার সুরই যেন বেজে উঠেছিল সবার হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন আপসহীন ও অবিচল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও থমকে গিয়েছিলেন শেষবারের মতো গাড়িতে উঠতে গিয়ে!’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘তিনি জানতেন না, আরেকটি সন্ধ্যা তার জীবনে আসবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার সময় ফুরিয়ে আসছে?’ জীবনের শেষ দিনটি কী ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এমন প্রশ্নে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ বিকালটা অন্যান্য দিনের মতো রুটিন কাজ চললেও দুটি বিশেষ প্রস্তুতি চলছিল সেদিন গণভবনে। এক. পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি। দুই. রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, যুগ্ম সচিব এম মনোয়ারুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব শহীদ কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমদ-এর বিদায় সংবর্ধনা।’

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু গণভবন থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে তার একান্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং সামরিক সচিবের বিদায় সম্পর্কেও খানিকটা বিষন্ন ছিলেন বলেও জানান ফরাস উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মনোয়ার আর ফরাস দুদিন পরেই চলে যাবে; ছেলে দুটো মায়া লাগিয়ে যাচ্ছে। খারাপ লাগবে খুবই। ভাগ্যিস জামিল এখানেই থাকছে।’

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, এম মনোয়ারুল ইসলাম অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার অনুমতি নিয়ে ১৭ আগস্ট চলে যাওয়ার কথা ছিল। আর শহীদ কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমদের রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডাইরেক্টর ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিএফআই, বর্তমানে ডিজিএফআই) পদে যোগ দেয়ার কথা ছিল।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবদুল মতিন চৌধুরীর সঙ্গে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি, বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি খাবার নিয়েও কথা হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাকে ‘সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি দিতে যাচ্ছে, সেটি কতটা সুখকর হবে, সেটি নিয়েও বঙ্গবন্ধুর মনে সংশয় কাজ করেছিল।’

রাষ্ট্রপতির বিদায়ী একান্ত সচিব হিসেবে ফরাসউদ্দিন সেদিন বেশির ভাগ সময় বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছিই ছিলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন কাজ শেষে গণভবনের সামনের লনে একাকি পায়চারি, গাছেদের সঙ্গে কথা বলা, লেকের পানিতে মাছেদের সঙ্গে খেলা করা সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর নিয়মিত অভ্যাস।

তবে সেদিন সন্ধ্যায় গণভবনের বাইরে দলবল নিয়ে মুক্ত আলোচনার নিত্যকার আসর বসেনি। ওইদিন দুপুরে নোয়াখালীতে ভারতীয় একটি হেলিকপ্টার ভূপতিত হওয়ার ঘটনায় অন্যান্যরা ব্যস্ত ছিলেন। সূত্র: বাসস

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

‘কালো গাড়ি দেখে বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু’

প্রকাশিত : ০৮:২৫:৩২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ অগাস্ট ২০২০

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট। সারাদিনের কর্মব্যস্ততা শেষে সন্ধ্যায় গণভবন থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফিরবেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন তাকে নিতে এসেছিল একটি ‘কালো গাড়ি’। জীবনের শেষ বিকালে কালো গাড়ি দেখে অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধুর তৎকালীন একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু গাড়ি দেখে বারবার একটি মন্তব্য করেন, ‘আজকে কালো গাড়ি’! আমার শোনা ওটাই তার শেষ মন্তব্য। আমরা তাকালাম। খুবই বিষন্ন মন নিয়ে বিদায় নিলেন বাঙালি জাতির পরম সুহৃদ শেখ মুজিবুর রহমান!’

একান্ত সচিব বলেন, ‘এটা একটা আশ্চর্য বিষয়! ওইদিন যে গাড়িটি তাকে নিতে আসে সেটি কালো রঙের ছিল। কালো রঙের গাড়িটি দেখে বঙ্গবন্ধু খুব মন খারাপ করেন।’

ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার স্বার্থে বঙ্গবন্ধু কোন দিন কোন গাড়িতে চড়বেন সেটা তার প্রটোকলের লোকরাই ঠিক করতো। তিনটি গাড়িতে যাতায়াত করতেন তিনি। তার মধ্যে একটি সাদা ও একটি কালো রঙের। বঙ্গবন্ধু যখন গণভবন থেকে চলে যান তখন আমরা কয়েকজন প্রতিদিনের মতোই তাকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিতে গিয়েছিলাম।’

বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব বলেন, ‘সেদিন গণভবন থেকে ঘরে ফেরার মুহূর্তে অন্যদিনের মতোই সচিবদের কাছ থেকে বিদায় নিলেও নিভৃতে এক বিষন্নতার সুরই যেন বেজে উঠেছিল সবার হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন আপসহীন ও অবিচল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বও থমকে গিয়েছিলেন শেষবারের মতো গাড়িতে উঠতে গিয়ে!’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এ গভর্নর বলেন, ‘তিনি জানতেন না, আরেকটি সন্ধ্যা তার জীবনে আসবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কি বুঝতে পেরেছিলেন যে, তার সময় ফুরিয়ে আসছে?’ জীবনের শেষ দিনটি কী ধরনের কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত ছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এমন প্রশ্নে ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জীবনের শেষ বিকালটা অন্যান্য দিনের মতো রুটিন কাজ চললেও দুটি বিশেষ প্রস্তুতি চলছিল সেদিন গণভবনে। এক. পরদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার প্রস্তুতি। দুই. রাষ্ট্রপতির একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, যুগ্ম সচিব এম মনোয়ারুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব শহীদ কর্নেল জামিলউদ্দিন আহমদ-এর বিদায় সংবর্ধনা।’

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু গণভবন থেকে বিদায়ের প্রাক্কালে তার একান্ত সচিব, যুগ্ম সচিব এবং সামরিক সচিবের বিদায় সম্পর্কেও খানিকটা বিষন্ন ছিলেন বলেও জানান ফরাস উদ্দিন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘মনোয়ার আর ফরাস দুদিন পরেই চলে যাবে; ছেলে দুটো মায়া লাগিয়ে যাচ্ছে। খারাপ লাগবে খুবই। ভাগ্যিস জামিল এখানেই থাকছে।’

ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, এম মনোয়ারুল ইসলাম অর্থনীতিতে উচ্চতর ডিগ্রি লাভের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পড়ার অনুমতি নিয়ে ১৭ আগস্ট চলে যাওয়ার কথা ছিল। আর শহীদ কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমদের রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিবের পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে ডাইরেক্টর ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিএফআই, বর্তমানে ডিজিএফআই) পদে যোগ দেয়ার কথা ছিল।

ড. ফরাসউদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যাবেলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আবদুল মতিন চৌধুরীর সঙ্গে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি, বক্তব্যের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি খাবার নিয়েও কথা হয়। যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন সেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই তাকে ‘সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রি দিতে যাচ্ছে, সেটি কতটা সুখকর হবে, সেটি নিয়েও বঙ্গবন্ধুর মনে সংশয় কাজ করেছিল।’

রাষ্ট্রপতির বিদায়ী একান্ত সচিব হিসেবে ফরাসউদ্দিন সেদিন বেশির ভাগ সময় বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছিই ছিলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন কাজ শেষে গণভবনের সামনের লনে একাকি পায়চারি, গাছেদের সঙ্গে কথা বলা, লেকের পানিতে মাছেদের সঙ্গে খেলা করা সবই ছিল বঙ্গবন্ধুর নিয়মিত অভ্যাস।

তবে সেদিন সন্ধ্যায় গণভবনের বাইরে দলবল নিয়ে মুক্ত আলোচনার নিত্যকার আসর বসেনি। ওইদিন দুপুরে নোয়াখালীতে ভারতীয় একটি হেলিকপ্টার ভূপতিত হওয়ার ঘটনায় অন্যান্যরা ব্যস্ত ছিলেন। সূত্র: বাসস

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত