০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

খুললো থিয়েটার, জ্বললো নাট্যপ্রেমীদের মনের আলো

টানা সাড়ে ৫ মাস পর দরজা খুললো ঢাকার কোনও থিয়েটারের। মঞ্চে জ্বলে উঠলো নানা রঙের আলো। মঞ্চ থেকে হলজুড়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো সংলাপ। গ্যালারি থেকে ভেসে এলো মুহুর্মুহু করতালি।

করোনাকালের সব দ্বিধা অতিক্রম করে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় নাটক সরণির (বেইলী রোড) থিয়েটার হল মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এদিন ঠিক সোয়া সাতটায় আলো জ্বলে ওঠে মঞ্চের। শূন্যন রেপার্টরির নাটক ‘লালজমিন’ নিয়ে মঞ্চে হাজির হন মোমেনা চৌধুরী।

মান্নান হীরার রচনা এবং সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় একক অভিনয়ের এই বিশেষ নাটকটির ২৪৪তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এদিন। যার মধ্য দিয়ে টানা সাড়ে ৫ মাস পর দেশের কোনও থিয়েটারে ফিরলো নাটক ও নাট্যপ্রেমীরা। আগত দর্শকদের অভিমত এমন, এটা শুধু মঞ্চের আলো জ্বলা নয়, জ্বললো নাট্যপ্রেমীদের নিভু নিভু মনের আলোটাও।

অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম যেদিন মঞ্চে উঠেছিলাম, ঠিক সেদিনের মতোই মনে হচ্ছে আজকের অনুভূতিটা। গেল সাড়ে পাঁচ মাসে গোটা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ চলে গেছেন, বড় অসময়ে। এই মহামারির কবলে পড়ে আমিও চলে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি, বেঁচে আছি এবং আবারও মঞ্চে উঠেছি। এরচেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!’

এদিকে সন্ধ্যার আয়োজনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শকদের প্রবেশ করানো হয়েছে হলরুমে। নিয়ম করা হয়েছে, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার। হলরুমের প্রবেশমুখে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে এবং শরীরে জীবাণুনাশক দেওয়া হয়েছে দর্শকদের। হলের ভেতরে দুই আসন পর পর একজন করে দর্শক বসানো হয়েছে।

‘নিউ নরমাল’ নিয়মে এই মঞ্চায়ন সম্পর্কে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক মঞ্চায়ন আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমার সামনে বসা দর্শকদের মুখে মাস্ক পরা, যার জন্য চিরাচরিত এক্সপ্রেশন দেখা হয়নি। কিন্তু এটাও তো বড় আনন্দের বিষয়, ফের আমরা থিয়েটার খুলেছি, মঞ্চে উঠেছি, করতালি পাচ্ছি।’

হলের প্রবেশ মুখে জীবাণুনাশক নিয়ে অপেক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরাএদিকে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে নাটক ওঠার খবরে নাট্যাঙ্গন ছিল উৎসব মুখর। ঢাকার বাইরে থেকেও নাটক দেখতে এসেছেন দর্শকরা। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মঞ্চকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা।

যুদ্ধ ও যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে এক সংগ্রামী নারীর জীবন অভিজ্ঞতার নাট্যপ্রকাশ ‘লাল জমিন’। কিশোরী একটি মেয়েকে ঘিরে এর গল্প আবর্তিত হয়েছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, তারপর আরও কয়েকটি দশক। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে চৌদ্দ বছর বয়সী এক কিশোরীর অংশগ্রহণ, লক্ষ্যে পৌঁছবার আগেই পুরুষ যোদ্ধাদের শহীদ হওয়া, নারী সদস্যদের ওপর নেমে আসা ভয়াবহ নির্যাতন, কিশোরীর ত্যাগ। শেষে স্বাধীনতা অর্জন দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় ‘লালজমিন’।

স্বাধীনতা অর্জনই কেবল ‘লালজমিন’-এর সমাপ্তি দৃশ্য নয়, এরপরে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধোত্তর ঘাতক দালালদের বৃত্তান্ত ও একজন মুক্তিযোদ্ধা নারীর উপলব্ধি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘লালজমিন’ দেখতে আসা সুবচন নাট্যদলের প্রধান আহমেদ গিয়াস বলেন, ‘খুব ভালো ব্যবস্থা হয়েছে। দুটি সিট বেঁধে রেখে পরের সিটে বসতে দিচ্ছে। আমি যতদূর জানি মহিলা সমিতিতে প্রদর্শনীর জন্য আরও তিনটি দল আবেদন করেছে। এগুলো হবে সেপ্টেম্বরে। মানে মোমেনা আপার এ উদ্যোগটি খুবই যথাযথ। ধন্যবাদ আয়োজকদের।’

এদিকে গত ১৫ আগস্ট দেশের প্রধান মঞ্চকেন্দ্র রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। তবে এখনও মঞ্চ দলের জন্য একাডেমির তালা খুলে দেওয়া হয়নি। জাতীয় নাট্যশালা’সহ সারা দেশের মিলনায়তনগুলো খুলে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে অনেকে।

তবে নাট্যশালা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের অর্থনৈতিক দিকটি দেখতে হয় না। কিন্তু মহিলা সমিতিসহ দেশের এমন অনেক মিলনায়তনে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। মঞ্চের মানুষগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। মনে রাখতে হবে, এখানে সৃজনশীলতার পাশাপাশি মানবিক দিকটিও যুক্ত’- অনতিবিলম্বে দেশের থিয়েটারগুলো খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন মোমেনা চৌধুরী।

২৮ আগস্টের মঞ্চে মোমেনা চৌধুরীকরোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। তবে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) মহিলা সমিতিতে ‘লালজমিন’-এর সফল মঞ্চায়ন শেষে দেশের অন্যান্য থিয়েটার কেন্দ্রগুলো চালু করার বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

পথনাট্য পরিষদের অন্যতম সংগঠক আহমেদ গিয়াস বলেন, ‘‘আসলে এখন সবই খুলে যাচ্ছে। তাই আমাদেরও ফেরার প্রস্তুতি নিতে হবে। ‘লালজমিন’ দিয়ে শুরুটা ভালোই হলো। আশা করি অনেকেই এখন মঞ্চে ফিরতে আগ্রহী হবেন। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঞ্চায়ন সম্ভব, সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে।’’

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

খুললো থিয়েটার, জ্বললো নাট্যপ্রেমীদের মনের আলো

প্রকাশিত : ০৯:৪২:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ অগাস্ট ২০২০

টানা সাড়ে ৫ মাস পর দরজা খুললো ঢাকার কোনও থিয়েটারের। মঞ্চে জ্বলে উঠলো নানা রঙের আলো। মঞ্চ থেকে হলজুড়ে কেঁপে কেঁপে উঠলো সংলাপ। গ্যালারি থেকে ভেসে এলো মুহুর্মুহু করতালি।

করোনাকালের সব দ্বিধা অতিক্রম করে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় নাটক সরণির (বেইলী রোড) থিয়েটার হল মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহীম মিলনায়তনে এমন দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। এদিন ঠিক সোয়া সাতটায় আলো জ্বলে ওঠে মঞ্চের। শূন্যন রেপার্টরির নাটক ‘লালজমিন’ নিয়ে মঞ্চে হাজির হন মোমেনা চৌধুরী।

মান্নান হীরার রচনা এবং সুদীপ চক্রবর্তীর নির্দেশনায় একক অভিনয়ের এই বিশেষ নাটকটির ২৪৪তম প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় এদিন। যার মধ্য দিয়ে টানা সাড়ে ৫ মাস পর দেশের কোনও থিয়েটারে ফিরলো নাটক ও নাট্যপ্রেমীরা। আগত দর্শকদের অভিমত এমন, এটা শুধু মঞ্চের আলো জ্বলা নয়, জ্বললো নাট্যপ্রেমীদের নিভু নিভু মনের আলোটাও।

অভিনেত্রী মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘প্রথম যেদিন মঞ্চে উঠেছিলাম, ঠিক সেদিনের মতোই মনে হচ্ছে আজকের অনুভূতিটা। গেল সাড়ে পাঁচ মাসে গোটা পৃথিবী থেকে বহু মানুষ চলে গেছেন, বড় অসময়ে। এই মহামারির কবলে পড়ে আমিও চলে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি, বেঁচে আছি এবং আবারও মঞ্চে উঠেছি। এরচেয়ে বড় আনন্দ আর কী হতে পারে!’

এদিকে সন্ধ্যার আয়োজনে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শকদের প্রবেশ করানো হয়েছে হলরুমে। নিয়ম করা হয়েছে, বাধ্যতামূলক মাস্ক পরার। হলরুমের প্রবেশমুখে শরীরের তাপমাত্রা মাপা হয়েছে এবং শরীরে জীবাণুনাশক দেওয়া হয়েছে দর্শকদের। হলের ভেতরে দুই আসন পর পর একজন করে দর্শক বসানো হয়েছে।

‘নিউ নরমাল’ নিয়মে এই মঞ্চায়ন সম্পর্কে মোমেনা চৌধুরী বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে নাটক মঞ্চায়ন আমাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা। আমার সামনে বসা দর্শকদের মুখে মাস্ক পরা, যার জন্য চিরাচরিত এক্সপ্রেশন দেখা হয়নি। কিন্তু এটাও তো বড় আনন্দের বিষয়, ফের আমরা থিয়েটার খুলেছি, মঞ্চে উঠেছি, করতালি পাচ্ছি।’

হলের প্রবেশ মুখে জীবাণুনাশক নিয়ে অপেক্ষায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যরাএদিকে দীর্ঘদিন পর মঞ্চে নাটক ওঠার খবরে নাট্যাঙ্গন ছিল উৎসব মুখর। ঢাকার বাইরে থেকেও নাটক দেখতে এসেছেন দর্শকরা। অংশ নিয়েছেন বিভিন্ন মঞ্চকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠকরা।

যুদ্ধ ও যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশে এক সংগ্রামী নারীর জীবন অভিজ্ঞতার নাট্যপ্রকাশ ‘লাল জমিন’। কিশোরী একটি মেয়েকে ঘিরে এর গল্প আবর্তিত হয়েছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধ নয়, তারপর আরও কয়েকটি দশক। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধে চৌদ্দ বছর বয়সী এক কিশোরীর অংশগ্রহণ, লক্ষ্যে পৌঁছবার আগেই পুরুষ যোদ্ধাদের শহীদ হওয়া, নারী সদস্যদের ওপর নেমে আসা ভয়াবহ নির্যাতন, কিশোরীর ত্যাগ। শেষে স্বাধীনতা অর্জন দর্শকদের এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয় ‘লালজমিন’।

স্বাধীনতা অর্জনই কেবল ‘লালজমিন’-এর সমাপ্তি দৃশ্য নয়, এরপরে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের যুদ্ধোত্তর ঘাতক দালালদের বৃত্তান্ত ও একজন মুক্তিযোদ্ধা নারীর উপলব্ধি।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ‘লালজমিন’ দেখতে আসা সুবচন নাট্যদলের প্রধান আহমেদ গিয়াস বলেন, ‘খুব ভালো ব্যবস্থা হয়েছে। দুটি সিট বেঁধে রেখে পরের সিটে বসতে দিচ্ছে। আমি যতদূর জানি মহিলা সমিতিতে প্রদর্শনীর জন্য আরও তিনটি দল আবেদন করেছে। এগুলো হবে সেপ্টেম্বরে। মানে মোমেনা আপার এ উদ্যোগটি খুবই যথাযথ। ধন্যবাদ আয়োজকদের।’

এদিকে গত ১৫ আগস্ট দেশের প্রধান মঞ্চকেন্দ্র রাজধানীর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শোক দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। তবে এখনও মঞ্চ দলের জন্য একাডেমির তালা খুলে দেওয়া হয়নি। জাতীয় নাট্যশালা’সহ সারা দেশের মিলনায়তনগুলো খুলে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে অনেকে।

তবে নাট্যশালা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি বলে শিল্পকলা একাডেমির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের অর্থনৈতিক দিকটি দেখতে হয় না। কিন্তু মহিলা সমিতিসহ দেশের এমন অনেক মিলনায়তনে কর্মীদের বেতন দিতে হচ্ছে। মঞ্চের মানুষগুলোর অবস্থাও ভালো নয়। মনে রাখতে হবে, এখানে সৃজনশীলতার পাশাপাশি মানবিক দিকটিও যুক্ত’- অনতিবিলম্বে দেশের থিয়েটারগুলো খুলে দেওয়া প্রসঙ্গে বলেন মোমেনা চৌধুরী।

২৮ আগস্টের মঞ্চে মোমেনা চৌধুরীকরোনা পরিস্থিতির কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে সারা দেশে নাট্য প্রদর্শনী বন্ধ ঘোষণা করে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন। তবে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) মহিলা সমিতিতে ‘লালজমিন’-এর সফল মঞ্চায়ন শেষে দেশের অন্যান্য থিয়েটার কেন্দ্রগুলো চালু করার বিষয়ে আগ্রহ দেখা যায় সংশ্লিষ্টদের মধ্যে।

পথনাট্য পরিষদের অন্যতম সংগঠক আহমেদ গিয়াস বলেন, ‘‘আসলে এখন সবই খুলে যাচ্ছে। তাই আমাদেরও ফেরার প্রস্তুতি নিতে হবে। ‘লালজমিন’ দিয়ে শুরুটা ভালোই হলো। আশা করি অনেকেই এখন মঞ্চে ফিরতে আগ্রহী হবেন। কারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঞ্চায়ন সম্ভব, সেটি প্রমাণ হয়ে গেছে।’’

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত