বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান যাত্রাবাড়িতে থাকেন। তার অফিস কারওয়ান বাজারে। অন্যান্য দিনের মতো মঙ্গলবারও তিনি গণপরিবহন ব্যবহার করে অফিসে যাতায়াত করেছেন।
পথের অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভাড়া আগের জায়গায় ফিরেছে সত্যি। কিন্তু বাসে দাঁড়িয়েও যাত্রী নেওয়া হয়েছে। ঠেলাঠেলি করে অফিসে এসেছি। স্বাস্থ্যবিধির কোনো বালাই ছিলো না। পথের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বা পুলিশ কেউই খোঁজ নেয়নি।
ইমরুল হাসান থাকেন আগারগাঁওয়ে। অফিস উত্তরায়। একটি বায়িং হাউজের এই কর্মকর্তা বলছিলেন, আগে ভাড়া ছিলো ৩০ টাকা। ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির পর ভাড়া নিতো ৫০ টাকা। মঙ্গলবার অফিসে যাওয়ার সময় তাকে ৪০ টাকা দিতে হয়েছে। এ নিয়ে বাসের মধ্যে যাত্রীদের সঙ্গে হেলপারের তর্কাতর্কি, এমনকি ধাক্কাধাক্কিও হয়েছে। ইমরুলের প্রশ্ন- দাঁড়িয়ে লোক নিলে ভাড়া বেশি হবে কেন?
পুরানো ভাড়ায় ফেরার প্রথম দিন মঙ্গলবার রাজধানীজুড়েই ছিলো এমন চিত্র। যাত্রীদের সবচেয়ে বড় শঙ্কার জায়গা, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না। নতুন করে তারা কি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন কি-না? বাসচালক-হেলপার কেউ স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। মেহেদী হাসানের কথায়, নতুন পরিস্থিতিতে ঝুঁকে বেড়েই গেল।
অবশ্য যাত্রীদের এই অভিযোগ মানতে রাজি নন বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি বলেন, আমি সকাল থেকেই মাঠে ছিলাম। অনেক বাস থামিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। এমনকি কোনো পরিবহনেই দাঁড়িয়ে যাত্রী নেওয়ার দৃশ্যও আমার চোখে পড়েনি। ঢাকা শহরে আটটি মোবাইল কোর্ট সকাল থেকে কাজ করেছে। যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, কেউ যদি এমন অভিযোগ করে থাকে সেটা ঠিক না। আর যদি কারো সঙ্গে ঘটে থাকে তাহলে তিনি লিখিত অভিযোগ করতে পারেন। আমরা ব্যবস্থা নেবো।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান অস্বীকার করলেও পরিবহন মালিক সমিতির নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে খানিকটা স্বীকার করেছেন। ডয়চে ভেলের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব বলেন, কিছু জায়গায় আমরাও অভিযোগ পেয়েছি। আগামী দুই চারদিনের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে। তবে অধিকাংশ পরিবহনেই ভাড়ার নির্দেশনা মানা হয়েছে। সবার সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি, আশা করি সমস্যা থাকবে না। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যতটা সম্ভব চেষ্টা করছি।
করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২৬ মার্চ থেকে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে ১ জুন থেকে সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলার অনুমতি দেয় সরকার। এতদিন অর্ধেক সিটে যাত্রী পরিবহন করেছে গণপরিবহনগুলো। যাত্রীদের এই সময়ে গুনতে হয়েছে কাগজে-কলমে ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া। যাদিও বাস্তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আগের তুলনায় দ্বিগুণ ভাড়া নিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা।
পরিবহন যাত্রীদের নিয়ে কাজ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের মহাসচিব খন্দকার মোজ্জামেল হক চৌধুরী বলেন,আমাদের হটলাইনে ফোন করে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। আমরাও মাঠে থেকে দেখেছি, স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না, নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। এগুলো দেখভালের জন্য বিআরটিএ’র পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিলো না। ফলে রিবহন শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন যাত্রীরা। অনেকেই ঝামেলা এড়াতে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে গিয়েছেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মঙ্গরবার সাংবাদিকদের বলেছেন, কেউ যদি অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরপুরের কাজীপাড়া থেকে ফার্মগেইটে অফিস করেন শহীদুল ইসলাম। আগে ১০ টাকা দিয়ে আসা-যাওয়া করলেও ৬০ শতাংশ বৃদ্ধির ফলে তাকে ১৮ টাকা দিয়ে আসা যাওয়া করতে হতো। মঙ্গলবার দাঁড়িয়ে যাত্রী নেবে না এই শর্তে শেকড় পরিবহনের সুপারভাইজার ১৫ টাকা করে ভাড়া আদায় করেছে। শহীদুল বলছিলেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা চিন্তা করে বাসের সবাই অতিরিক্ত পাঁচ টাকা দিতে রাজি হয়েছে। তারপরও তো নিরাপদে অফিসে পৌঁছা গেছে তাতেই শান্তি। অবশ্য তার মতে, এভাবে তো প্রতিদিন চলতে পারে না। সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিজনেস বাংলাদেশ/এসএম