০৩:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুজিববর্ষেই বঙ্গবন্ধুর এক খুনির ফাঁসি, ওয়াদা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার ওয়াদা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী রাশেদ চৌধুরী ও কানাডায় অবস্থানকারী নূর চৌধুরীকে দেশে আনার প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে।

শুক্রবার ‘জনতার প্রত্যাশা’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে। আমি ওয়াদা করছি, মুজিববর্ষের মধ্যে আরও একজন খুনিকে দেশে এনে শাস্তির মুখোমুখি করব। এটা এখন জনগণেরও প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর ১২ জন খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬ জনকে দেশে এনে শাস্তির সম্মুখীন করেছি। একজন তো আগেই মারা গেছেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে আই মাস্ট সে, আমাদের প্রার্থনা ছিল যে মুজিববর্ষের মধ্যে অ্যাট লিস্ট একজনকে দেশে এনে বিচারের সম্মুখীন করা।’

বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আমলে খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। পরে অনেকে দেশ ছেড়েছিলেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

সর্বশেষ বাকি পলাতক ছয় খুনির মধ্যে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জানা যায়, খুনি আব্দুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ বছর ভারতের কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি বিদেশে পালিয়ে আছেন। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। বাকি তিনজন কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই।

মোমেন বলেন, ‘পাঁচ জনের মধ্যে দুই জনের ঠিকানা আমরা জানি। এটার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কিছুটা অগ্রসর হয়েছি। তাদের শেষে ফেরত আনার বিষয়ে আগে তো কথাই শুনতে চায় নাই, এখন কথা শুনছে।’

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি রাশেদ চৌধুরৗ ও নূর চৌধুরৗ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন পেয়ে গেছিল, এখন সেটা রিভিউ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, আরেকজনকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারব। আরেকজনের (নূর চৌধুরী) বিরুদ্ধে আমরা কেইস করেছিলাম। কেইসে আমরা জয়লাভ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে সে দেশের আইনের কারণে তারা এখনও আটকে রেখেছে।’

বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন করার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের দেশের একটি আইনের কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী মিলে আমরা চেষ্টা করছি। আমি আপনাদের বলবো তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটা সিগনেচার ক্যাম্পেইন তৈরি করুন। যেখানে লাখ লাখ লোকের সিগনেচার থাকবে। সেটি দেখিয়ে বলতে পারব যে আমাদের এই খুনিকে ফিরিয়ে দিন।’

প্রবাসীদের মধ্যে জনমত গড়ে উঠলে কানাডার নাগরিকরাও সে দেশ থেকে খুনিকে বিতাড়িত করতে আন্দোলন শুরু করবেন বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষকে বাঁচাতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যেখান থেকে পাওয়া যায় সেখান থেকে আনতে। সে লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

আলোচনা সভায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমসহ আয়োজক সংগঠনের অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

মুজিববর্ষেই বঙ্গবন্ধুর এক খুনির ফাঁসি, ওয়াদা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

প্রকাশিত : ০৮:২০:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০

বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর করার ওয়াদা করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকারী রাশেদ চৌধুরী ও কানাডায় অবস্থানকারী নূর চৌধুরীকে দেশে আনার প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে।

শুক্রবার ‘জনতার প্রত্যাশা’ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এসব কথা বলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর পলাতক পাঁচ খুনির অন্তত একজনকে মুজিববর্ষের মধ্যেই দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর করা সম্ভব হবে। আমি ওয়াদা করছি, মুজিববর্ষের মধ্যে আরও একজন খুনিকে দেশে এনে শাস্তির মুখোমুখি করব। এটা এখন জনগণেরও প্রত্যাশা। বঙ্গবন্ধুর ১২ জন খুনির ফাঁসির আদেশ হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬ জনকে দেশে এনে শাস্তির সম্মুখীন করেছি। একজন তো আগেই মারা গেছেন। বাকি পাঁচজনের মধ্যে আই মাস্ট সে, আমাদের প্রার্থনা ছিল যে মুজিববর্ষের মধ্যে অ্যাট লিস্ট একজনকে দেশে এনে বিচারের সম্মুখীন করা।’

বঙ্গবন্ধু ও তার স্বজনদের হত্যার পর জিয়াউর রহমানের আমলে খুনিদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। পরে অনেকে দেশ ছেড়েছিলেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর ওই হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি। ’৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। তখন বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিচারের গতি শ্লথ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), এ কে বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিনের (আর্টিলারি)।

সর্বশেষ বাকি পলাতক ছয় খুনির মধ্যে চলতি বছরের ১১ এপ্রিল খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। জানা যায়, খুনি আব্দুল মাজেদ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ বছর ভারতের কলকাতায় লুকিয়ে ছিলেন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পাঁচ খুনি বিদেশে পালিয়ে আছেন। তারা হলেন খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, মোসলেম উদ্দিন, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী ও এ এম রাশেদ চৌধুরী। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে ও নূর চৌধুরী কানাডায় আছেন। বাকি তিনজন কোথায় আছেন, সে সম্পর্কে সরকারের কাছে নিশ্চিত তথ্য নেই।

মোমেন বলেন, ‘পাঁচ জনের মধ্যে দুই জনের ঠিকানা আমরা জানি। এটার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। কিছুটা অগ্রসর হয়েছি। তাদের শেষে ফেরত আনার বিষয়ে আগে তো কথাই শুনতে চায় নাই, এখন কথা শুনছে।’

যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় পলাতক বঙ্গবন্ধুর দুই খুনি রাশেদ চৌধুরৗ ও নূর চৌধুরৗ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ইমিগ্রেশন পেয়ে গেছিল, এখন সেটা রিভিউ হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, আরেকজনকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করতে পারব। আরেকজনের (নূর চৌধুরী) বিরুদ্ধে আমরা কেইস করেছিলাম। কেইসে আমরা জয়লাভ করেছি। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাতে সে দেশের আইনের কারণে তারা এখনও আটকে রেখেছে।’

বিদেশে পালিয়ে থাকা খুনিদের ফিরিয়ে আনতে সিগনেচার ক্যাম্পেইন করার আহ্বান জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বাইরের দেশের একটি আইনের কারণে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রী মিলে আমরা চেষ্টা করছি। আমি আপনাদের বলবো তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য একটা সিগনেচার ক্যাম্পেইন তৈরি করুন। যেখানে লাখ লাখ লোকের সিগনেচার থাকবে। সেটি দেখিয়ে বলতে পারব যে আমাদের এই খুনিকে ফিরিয়ে দিন।’

প্রবাসীদের মধ্যে জনমত গড়ে উঠলে কানাডার নাগরিকরাও সে দেশ থেকে খুনিকে বিতাড়িত করতে আন্দোলন শুরু করবেন বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

করোনা ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মোমেন জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দেশের মানুষকে বাঁচাতে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন যেখান থেকে পাওয়া যায় সেখান থেকে আনতে। সে লক্ষ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে।

আলোচনা সভায় পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীমসহ আয়োজক সংগঠনের অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস বাংলাদেশ/ প্রান্ত