০৯:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

জার্মানিতে ১০০ বাড়ির মালিক বাংলাদেশি যুবরাজ

মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ শুরু করেন যুবরাজ তালুকদার। ২১ বছর বয়সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনেন প্রথম বাড়ি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। জার্মানিতে শতাধিক বাড়ির মালিক এই বাংলাদেশ-আবাসন খাতে এক সফল ব্যবসায়ী।

যুবরাজ তালুকদার, জার্মানির বন শহরের এই বাসিন্দা জার্মানির আবাসন খাতে এক পরিচিত মুখ। ১০০ টিরও বেশি বাড়ির মালিক তিনি। তবে বড় কোনো বিনিয়োগ নিয়ে এই খাতে ব্যবসা শুরু করেননি তালুকদার। নিজের সাম্রাজ্য গড়েছেন পুরোটাই নিজের চেষ্টায়, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। ১৯৯১ সালে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ১৬ বছর বয়স থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি হোটেলে কাজ করতাম। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে চাকুরি করে যে বেতন পেয়েছিলাম সেগুলো আমার বাবাকে দিতে হয়নি। আমি সেগুলো সেভ করেছি। আব্বা কখনো বলেননি যে, আমার রোজগার থেকে তাকে খরচের টাকা দিতে হবে। টাকা জমা করে প্রথমে একটা বাড়ি নিলামে কিনি মাত্র সাড়ে ছয় হাজার ইউরো দিয়ে। মানে ১৯৯১ সালের তের হাজার মার্ক। সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করি।

পুরনো বাড়ি কিনে সংস্কার

আবাসন খাতে যুবরাজ তালুকদারের ব্যবসার ধরন কিছুটা ভিন্ন। তিনি মূলত পুরনো ঘরবাড়ি বিভিন্ন ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিলামে কেনেন। কেনার পর সেগুলো সংস্কার করে ভাড়া দেন। তার কর্মী সংখ্যা ৬ জন। তিনি বলেন, সাধারণত ১৯৬০-১৯৭০ সালে বানানো, মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বানানো বাড়িগুলো কিনি আমি। সেসব ভবনে টাইলস, বেসিন, কমোড, বিদ্যুতের লাইন এসব পুরনো থাকে। আপনি যদি কোনো কম্পানিকে দিয়ে এগুলো ঠিক করতে যান তাহলে উদাহরণস্বরূপ এক হাজার বর্গফুটের বাড়িতে নূন্যতম ৪০ হাজার ইউরো খরচ হবে। আর সেই কাজ আমি যদি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিজে করি, তাহলে আমি অর্ধেক খরচে সেটা করতে পারবো।

কখনো কখনো দু’তিনশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাড়িও কেনেন যুবরাজ। সেগুলো অবশ্য সংস্কার করতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে। এ ধরনের বাড়ির বাইরের অংশের ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় না, তবে ভেতরটা নিজেদের মতো করে বদলে নেয়া যায়।

কেনার পর বিক্রি নয়, ভাড়া

জার্মানিতে একটি বাড়ি কেনার পর তা দশ বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিলে অনেক কর দিতে হয়। মূলত এই খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তালুকদার তাই বাড়ি কিনে সংস্কার করে ভাড়া দেন। বর্তমানে তার মালিকানায় থাকা সব ঘর-বাড়িই জার্মানির বন-কোলন অঞ্চলে অবস্থিত।

আবাসন খাতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি আরো কিছু খাতে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তিনি। সম্প্রতি কোলন-বন বিমানবন্দরের কাছে চালু করেছেন একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ। তিনি বলেন, এই বিল্ডিংটা যখন বিক্রি হলো, তখন রেস্তোরাঁ নয়, একটি অ্যাসেট হিসেবে এটি কিনেছিলাম। তখন এটি একটি চীনা রেস্তোরাঁ ছিল। আমার এক বন্ধু তখন বলল এখানে একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ করা যায়৷ গতবছর আমরা এটি চালু করি।

নিজের ব্যবসা দেখাশোনার জন্য সারাদিনই বন-কোলন অঞ্চলে ঘুরতে হয় যুবরাজ তালুকদারকে। সম্প্রতি কোলনের একটি আদালতে ‘অনারারি জাজ’ হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, আমাকে জার্মান সরকার অনারারি জাজ হিসেবে কোলনের ফাইনান্স কোর্টে দায়িত্ব দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। সেখানে কোনো কেস এলে তিনজন সরকারি জজ এবং দু’জন অনারারি জজ বসে কেসটা তদন্ত করা হয়। সবকিছু বোঝার পরে আমাদের পাঁচজন বসে অন্তত তিনজন যেদিকে রায়টা দিতে চায়, সেদিকে রায় দেয়া হয়।

জার্মানিতে সফল এই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। তবে নানা আইনি ও দাপ্তরিক জটিলতায় সেখানে সুবিধা করতে পারেননি। এখন অবশ্য জানালায় ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ এক ধরনের নেট তিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করছেন।

জার্মানিতে নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত আছেন যুবরাজ তালুকদার। বন শহরে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়ে সমাজসেবায় আরো মনোযোগী হতে চান এই বাংলাদেশি-জার্মান ব্যবসায়ী।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর

ট্যাগ :

সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ট্রমা সেন্টার না থাকায় দুর্ঘটনায় আহত অনেকেই মারা যান

জার্মানিতে ১০০ বাড়ির মালিক বাংলাদেশি যুবরাজ

প্রকাশিত : ০৩:১৬:২৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ অক্টোবর ২০২০

মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ শুরু করেন যুবরাজ তালুকদার। ২১ বছর বয়সে নিজের জমানো টাকা দিয়ে কেনেন প্রথম বাড়ি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। জার্মানিতে শতাধিক বাড়ির মালিক এই বাংলাদেশ-আবাসন খাতে এক সফল ব্যবসায়ী।

যুবরাজ তালুকদার, জার্মানির বন শহরের এই বাসিন্দা জার্মানির আবাসন খাতে এক পরিচিত মুখ। ১০০ টিরও বেশি বাড়ির মালিক তিনি। তবে বড় কোনো বিনিয়োগ নিয়ে এই খাতে ব্যবসা শুরু করেননি তালুকদার। নিজের সাম্রাজ্য গড়েছেন পুরোটাই নিজের চেষ্টায়, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে। ১৯৯১ সালে আবাসন ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, ১৬ বছর বয়স থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি আমি হোটেলে কাজ করতাম। পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে চাকুরি করে যে বেতন পেয়েছিলাম সেগুলো আমার বাবাকে দিতে হয়নি। আমি সেগুলো সেভ করেছি। আব্বা কখনো বলেননি যে, আমার রোজগার থেকে তাকে খরচের টাকা দিতে হবে। টাকা জমা করে প্রথমে একটা বাড়ি নিলামে কিনি মাত্র সাড়ে ছয় হাজার ইউরো দিয়ে। মানে ১৯৯১ সালের তের হাজার মার্ক। সেই টাকা দিয়েই ব্যবসা শুরু করি।

পুরনো বাড়ি কিনে সংস্কার

আবাসন খাতে যুবরাজ তালুকদারের ব্যবসার ধরন কিছুটা ভিন্ন। তিনি মূলত পুরনো ঘরবাড়ি বিভিন্ন ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিলামে কেনেন। কেনার পর সেগুলো সংস্কার করে ভাড়া দেন। তার কর্মী সংখ্যা ৬ জন। তিনি বলেন, সাধারণত ১৯৬০-১৯৭০ সালে বানানো, মানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বানানো বাড়িগুলো কিনি আমি। সেসব ভবনে টাইলস, বেসিন, কমোড, বিদ্যুতের লাইন এসব পুরনো থাকে। আপনি যদি কোনো কম্পানিকে দিয়ে এগুলো ঠিক করতে যান তাহলে উদাহরণস্বরূপ এক হাজার বর্গফুটের বাড়িতে নূন্যতম ৪০ হাজার ইউরো খরচ হবে। আর সেই কাজ আমি যদি কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নিজে করি, তাহলে আমি অর্ধেক খরচে সেটা করতে পারবো।

কখনো কখনো দু’তিনশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাড়িও কেনেন যুবরাজ। সেগুলো অবশ্য সংস্কার করতে হয় বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে। এ ধরনের বাড়ির বাইরের অংশের ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন করা যায় না, তবে ভেতরটা নিজেদের মতো করে বদলে নেয়া যায়।

কেনার পর বিক্রি নয়, ভাড়া

জার্মানিতে একটি বাড়ি কেনার পর তা দশ বছরের মধ্যে বিক্রি করে দিলে অনেক কর দিতে হয়। মূলত এই খাতে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তালুকদার তাই বাড়ি কিনে সংস্কার করে ভাড়া দেন। বর্তমানে তার মালিকানায় থাকা সব ঘর-বাড়িই জার্মানির বন-কোলন অঞ্চলে অবস্থিত।

আবাসন খাতে নতুন বিনিয়োগের পাশাপাশি আরো কিছু খাতে ব্যবসা শুরুর চেষ্টা করছেন তিনি। সম্প্রতি কোলন-বন বিমানবন্দরের কাছে চালু করেছেন একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ। তিনি বলেন, এই বিল্ডিংটা যখন বিক্রি হলো, তখন রেস্তোরাঁ নয়, একটি অ্যাসেট হিসেবে এটি কিনেছিলাম। তখন এটি একটি চীনা রেস্তোরাঁ ছিল। আমার এক বন্ধু তখন বলল এখানে একটি ইটালীয় রেস্তোরাঁ করা যায়৷ গতবছর আমরা এটি চালু করি।

নিজের ব্যবসা দেখাশোনার জন্য সারাদিনই বন-কোলন অঞ্চলে ঘুরতে হয় যুবরাজ তালুকদারকে। সম্প্রতি কোলনের একটি আদালতে ‘অনারারি জাজ’ হিসেবেও নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। এই বিষয়ে তালুকদার বলেন, আমাকে জার্মান সরকার অনারারি জাজ হিসেবে কোলনের ফাইনান্স কোর্টে দায়িত্ব দিয়েছে পাঁচ বছরের জন্য। সেখানে কোনো কেস এলে তিনজন সরকারি জজ এবং দু’জন অনারারি জজ বসে কেসটা তদন্ত করা হয়। সবকিছু বোঝার পরে আমাদের পাঁচজন বসে অন্তত তিনজন যেদিকে রায়টা দিতে চায়, সেদিকে রায় দেয়া হয়।

জার্মানিতে সফল এই ব্যবসায়ী বাংলাদেশের আবাসন খাতেও বিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। তবে নানা আইনি ও দাপ্তরিক জটিলতায় সেখানে সুবিধা করতে পারেননি। এখন অবশ্য জানালায় ব্যবহারের উপযোগী বিশেষ এক ধরনের নেট তিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করছেন।

জার্মানিতে নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ডেও যুক্ত আছেন যুবরাজ তালুকদার। বন শহরে একটি মসজিদ তৈরি করেছেন তিনি। ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য সন্তানদের বুঝিয়ে দিয়ে সমাজসেবায় আরো মনোযোগী হতে চান এই বাংলাদেশি-জার্মান ব্যবসায়ী।

সূত্র: ডয়চে ভেলে

বিজনেস বাংলাদেশ/ এ আর