০৮:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫

প্রধান অভিযুক্তসহ গ্রেফতার ৪, দুই আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্বামীকে বেধেঁ রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা, বিবস্ত্রের পর নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি কিশোরগ্যাং সদস্য নূর হোসেন ওরফে বাদলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। কিশোরগ্যাং প্রধান বাদলের সহযোগী মো. দেলোয়ার হোসেনও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে মামলার দ্বিতীয় নাম্বার আসামী মো. আবদুর রহিম ও নয় নাম্বার আসামী রহমত উল্যা। পুলিশি হেফাজতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে দুই আসামী আবদুর রহিম ও রহমত উল্যার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামিকে ঢাকা থেকে ও স্থানীয় কিশোরগ্যাং প্রধান দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে র‌্যাব-১১। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে। এরআগে রোববার বিকালে ও রাতে বেগমগঞ্জ থানা পলিশ মামলার আসামি আবদুর রহিম ও রহত উল্যাকে গ্রেফতার করে। বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো.হারুন উর রশীদ দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতরা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্যম এখলাশপুর গ্রামের রহমত উল্যার ছেলে বাদল। সে মামলার প্রধান আসামি এবং কিশোরগ্যাং সদস্য। পূর্ব এখলাশপুর গ্রামের ছায়েদল হকের ছেলে কিশোরগ্যাং প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন, জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদের ছেলে মো. আবদুর রহিম, মধ্যম এখলাশপুর গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে রহমত উল্যা।
এদিকে সোমবার রাতে জেলা শহরের মাইজদীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতা তাকে ধর্ষনের চেষ্টা ও বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারন করা ও বেদম পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় নিজেই বাদি হয়ে সোমবার রাতে নয় জনকে আসামি করে এবং ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় নাশিনী আইনের ২০০৩ এর ৯(৪)খ, ১০/৩০ তৎসহ পেনাল কোড এর ৪৪৭/৪৪৮/৩৪২/৩২৩ ৪২৭/৫০৬/৩৪ ধারায় এবং পর্ণোগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮ (১), ৮(২) ও ৮(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু ঘটনার মুলনায়ক ও এলাকার কিশোরগ্যাং প্রধান দেলোয়ারের নাম মামলার এজাহারে আসেনি বলে এলাকাবাসী হতবাক হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূ (৩৫) এর বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় দোয়ার, বাদল ও তাদের সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক দল। ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে তার লজ্জাস্থানে হাত ডুকিয়ে দেয় ওবেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে। তাদের হাত থেকে বেঁচে সে তার স্বামীকে নিয়ে মাইজদী শহরের হাউজিং এলাকায় তার বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়। রোববার দুপুরে ওই সন্ত্রাসীরা তাকে ফোন করে আবারও কুপ্রস্তাব দেয় এবং হুমকি দেয় তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে তারা মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দিবে। নির্যাতিতা রাজি না হওয়ায় রোববার তারা ওই নারীর বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দেয়। এ ছবি ও ভিডিও পেয়ে সাংবাদিকরা খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে।
ওসি মো.হারুন উর রশীদ জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। আটককৃত আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সোমবার বেগমগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদের আবেদনে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের ম্যজিষ্টেট নবনীতা গুহ ভিকটিমের ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে দেয়ার সময় ভিকটিম বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিকালে আদালতে দুই আসামী আবদুর রহিম ও রহমত উল্যার সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাশফিকুল হক আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের বিষয়টি নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের পিপি গুলজার আহম্মেদ জুয়েল নিশ্চিত করেছেন।
দুপুরে নোয়াখালী জেলা আইনজীবি সমিতির এক জরুরি সভায় এ মামলায় আসামিদের পক্ষে আদালতে কোন আইনজীবি দাঁড়াবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সোমবার দুপুরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গৃহবধূর শারীরিক পরিক্ষা সম্পন্ন হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম ভিকটিমের শারীরিক পরিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
অপরদিকে ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকাল থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়ক, প্রেসক্লাবের সামনে ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃকিত সংগঠন।
পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানায়, এ পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামিসহ ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধার করে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ইমরান মাসুদ

ট্যাগ :

বকেয়া পরিশোধের আশ্বাসে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখল আদানি

প্রধান অভিযুক্তসহ গ্রেফতার ৪, দুই আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

প্রকাশিত : ০৮:০৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ অক্টোবর ২০২০

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুরের জয়কৃষ্ণপুর গ্রামে স্বামীকে বেধেঁ রেখে গৃহবধূকে ধর্ষণ চেষ্টা, বিবস্ত্রের পর নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি কিশোরগ্যাং সদস্য নূর হোসেন ওরফে বাদলকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। কিশোরগ্যাং প্রধান বাদলের সহযোগী মো. দেলোয়ার হোসেনও অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে মামলার দ্বিতীয় নাম্বার আসামী মো. আবদুর রহিম ও নয় নাম্বার আসামী রহমত উল্যা। পুলিশি হেফাজতে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ওই গৃহবধূর ডাক্তারি পরিক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এদিকে দুই আসামী আবদুর রহিম ও রহমত উল্যার তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
সোমবার সকালে মামলার প্রধান আসামিকে ঢাকা থেকে ও স্থানীয় কিশোরগ্যাং প্রধান দেলোয়ার বাহিনীর প্রধান দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করে র‌্যাব-১১। র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে। এরআগে রোববার বিকালে ও রাতে বেগমগঞ্জ থানা পলিশ মামলার আসামি আবদুর রহিম ও রহত উল্যাকে গ্রেফতার করে। বেগমগঞ্জ থানার ওসি মো.হারুন উর রশীদ দুইজনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আটককৃতরা হলেন, বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্যম এখলাশপুর গ্রামের রহমত উল্যার ছেলে বাদল। সে মামলার প্রধান আসামি এবং কিশোরগ্যাং সদস্য। পূর্ব এখলাশপুর গ্রামের ছায়েদল হকের ছেলে কিশোরগ্যাং প্রধান মো. দেলোয়ার হোসেন, জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের শেখ আহম্মদের ছেলে মো. আবদুর রহিম, মধ্যম এখলাশপুর গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে রহমত উল্যা।
এদিকে সোমবার রাতে জেলা শহরের মাইজদীর এক আত্মীয়ের বাসা থেকে উদ্ধার হওয়া নির্যাতিতা তাকে ধর্ষনের চেষ্টা ও বিবস্ত্র করে মোবাইলে ভিডিও ধারন করা ও বেদম পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় নিজেই বাদি হয়ে সোমবার রাতে নয় জনকে আসামি করে এবং ৭/৮ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে বেগমগঞ্জ থানায় নাশিনী আইনের ২০০৩ এর ৯(৪)খ, ১০/৩০ তৎসহ পেনাল কোড এর ৪৪৭/৪৪৮/৩৪২/৩২৩ ৪২৭/৫০৬/৩৪ ধারায় এবং পর্ণোগ্রাফি আইন ২০১২ এর ৮ (১), ৮(২) ও ৮(৩) ধারায় মামলা দায়ের করেছে। কিন্তু ঘটনার মুলনায়ক ও এলাকার কিশোরগ্যাং প্রধান দেলোয়ারের নাম মামলার এজাহারে আসেনি বলে এলাকাবাসী হতবাক হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে উপজেলার একলাশপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূ (৩৫) এর বসত ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রেখে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে শ্লীলতাহানি করে স্থানীয় দোয়ার, বাদল ও তাদের সংঘবদ্ধ বখাটে যুবক দল। ওই সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তারা তাকে বিবস্ত্র করে তার লজ্জাস্থানে হাত ডুকিয়ে দেয় ওবেধড়ক মারধর করে মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে। তাদের হাত থেকে বেঁচে সে তার স্বামীকে নিয়ে মাইজদী শহরের হাউজিং এলাকায় তার বোনের বাসায় আশ্রয় নেয়। রোববার দুপুরে ওই সন্ত্রাসীরা তাকে ফোন করে আবারও কুপ্রস্তাব দেয় এবং হুমকি দেয় তাদের প্রস্তাবে রাজি না হলে তারা মোবাইলে ধারনকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দিবে। নির্যাতিতা রাজি না হওয়ায় রোববার তারা ওই নারীর বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ভাইরাল করে দেয়। এ ছবি ও ভিডিও পেয়ে সাংবাদিকরা খোঁজ খবর নেয়া শুরু করলে পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ে।
ওসি মো.হারুন উর রশীদ জানান, পুলিশ অভিযুক্ত অপর আসামিদের গ্রেফতারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে। আটককৃত আসামিদের বিচারিক আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে সোমবার বেগমগঞ্জ থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদের আবেদনে নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল আদালতের ম্যজিষ্টেট নবনীতা গুহ ভিকটিমের ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে দেয়ার সময় ভিকটিম বারবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। বিকালে আদালতে দুই আসামী আবদুর রহিম ও রহমত উল্যার সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ। আবেদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মাশফিকুল হক আসামিদের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডের বিষয়টি নোয়াখালী জেলা জজ আদালতের পিপি গুলজার আহম্মেদ জুয়েল নিশ্চিত করেছেন।
দুপুরে নোয়াখালী জেলা আইনজীবি সমিতির এক জরুরি সভায় এ মামলায় আসামিদের পক্ষে আদালতে কোন আইনজীবি দাঁড়াবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়।
সোমবার দুপুরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে গৃহবধূর শারীরিক পরিক্ষা সম্পন্ন হয়। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম ভিকটিমের শারীরিক পরিক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রিপোর্ট হাতে পেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।
অপরদিকে ঘটনায় জড়িত আসামিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সকাল থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়ক, প্রেসক্লাবের সামনে ও জেলার গুরুত্বপূর্ণ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃকিত সংগঠন।
পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন জানায়, এ পর্যন্ত মামলার প্রধান আসামিসহ ৪জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভিকটিমকে উদ্ধার করে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের বিশেষ টিম অভিযান অব্যাহত রেখেছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/ইমরান মাসুদ