এই প্রথম জীবনের ওপারে দাঁড়িয়ে আপনি। আর আমরা এপারে দাঁড়িয়ে আপনাকে স্মরণ করছি। হে কিংবদন্তি, আপনি আছেন বাংলার মানুষের হৃদয় জুড়ে। ’
বুধবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশের প্লেব্যাক সম্রাট, দেশের সংগীতাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র এন্ড্রু কিশোরের ৬৬তম জন্মদিন। প্রিয় শিল্পীর জন্মদিনে এমন আবেগঘন কথা লিখেই ফেসবুকের পাতায় চোখের অশ্রু ঝরাচ্ছেন তার অগণিত ভক্তরা।
সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গত ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫মিনিটে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। মৃত্যুর পর এটিই তার প্রথম জন্মদিবস। এজন্য অনাড়ম্বরভাবে হলেও দিবসটি পালনের চেষ্টা চলছে শিল্পীর জন্ম ও মৃত্যুর শহর রাজশাহীতে। শিল্পীকে স্মরণ করে পরিবার, প্রিয়জন, ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের হৃদয়ে হচ্ছে রক্তক্ষরণ।
ভক্তদের হৃদয়ে রেখে যাওয়া বহু কালজয়ী গানের জাদুকর তার অসাধারণ গায়কির জন্য পেয়েছেন কণ্ঠরাজ উপাধি। তার পুরো নাম এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। তবে এন্ড্রু কিশোর হিসেবেই তিনি দেশ-বিদেশে সমাদৃত হন। ১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বর রাজশাহী শহরে জন্মগ্রহণ করেন গুণী ওই শিল্পী।
বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী শহরের বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনায় হাতেখড়ি। শৈশব-কৈশোর ও তারুণ্য কেটেছে রাজশাহী শহরে। ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী।
এন্ড্রু কিশোরের মা ছিলেন সংগীতানুরাগী। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই তিনি মাত্র ছয় বছর বয়সে সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন। সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন ওস্তাদ আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে। পরে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল গীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান শাখায় তালিকাভুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই’ প্রকাশ পায় ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে।
এরপর ১৯৮২ সালে এন্ড্রু কিশোর ‘বড় ভাল লোক ছিল’ চলচ্চিত্রের ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি সারেন্ডার, ১৯৮৯ সালে ক্ষতিপূরণ, ১৯৯১ সালে পদ্মা মেঘনা যমুনা, ১৯৯৬ সালে কবুল, ২০০০ সালে আজ গায়ে হলুদ, ২০০৭ সালে সাজঘর ও ২০০৮ সালে কি যাদু করিলা চলচ্চিত্রের গানের জন্য আরও সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি জীবদ্দশায় পাঁচবার বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার ও দুইবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।
সংগীতের টানে রাজশাহী ছেড়ে তিনি পাড়ি জমিয়ে ছিলেন রাজধানীতে। কিন্তু কখনও জন্মস্থান রাজশাহীর কথা ভোলেননি। ছিলেন রাজশাহীর মাটি ও মানুষের সংস্পর্শেই। যখনই সময় পেয়েছেন, ছুঁটে গেছেন রাজশাহীতে। তার শেষ ইচ্ছে ছিল, এই রাজশাহীর মাটিই যেন তার শেষ ঠিকানা হয়। তাই সেখানেই চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়েছে ওই কিংবদন্তিকে।
শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে রাজশাহীতে তার নিজ হাতে গড়া ‘ওস্তাদ আবদুল আজিজ স্মৃতি সংসদ’ দিনব্যাপী উৎসবের আয়োজন করেছে। রাজশাহীর স্থানীয় একটি রেস্তোরাঁয় রয়েছে জন্মোৎসবের কেক কাটা, তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ ও তার গাওয়া গান নিয়ে সঙ্গীতানুষ্ঠান। আয়োজনে সংগঠনের সদস্যসহ এন্ড্রু কিশোর ভক্তরা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে মৃত্যুর পর এন্ড্রু কিশোরের এটাই প্রথম জন্মদিন হলেও প্রয়াত এ শিল্পীর জন্মদিন উপলক্ষে পরিবারের কোনো আয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী লিপিকা অ্যান্ড্রু।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, তার জন্য সবাই দোয়া করবেন, এটাই আমাদের চাওয়া। এর চেয়ে আর বেশি কিছু চাওয়ার নেই।
বিজনেস বাংলাদেশ / আতিক


























