০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

সৌমিত্রের চলে যাওয়ায় ব্যথিত শোবিজ তারকারা

  • বাবুল হৃদয়
  • প্রকাশিত : ০৮:০৮:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০
  • 104

ববিতা-জয়া, ঈশিতা

কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর ভাবে ব্যথিত শোবিজ তারকারা। তারা এই কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সৌমিত্র মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, ‘সৌমিত্রদাকে আমি চিনি হাজার বছর ধরে, তিনি আপন নন তো কি? ঢাকা কি কলকাতা যেখানেই দেখা হতো জড়িয়ে ধরতাম, চলচ্চিত্রের শুরুতে তিনি তোই আমার অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন আপনজনের মৃত্যুতে কষ্টের কথা কিভাবে বর্ণনা করবো?’ কলকাতার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে এমনটাই জানালেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ফরিদা আক্তার ববিতা।

১৯৭৩ সালে ববিতা অভিনীত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা মুক্তি পায়। এই সিনেমায় তিনি সৌমিত্র চ্যাটার্জির স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রশংসিত হন দেশ-বিদেশে।

উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় চল্ললিশ দিনের লড়াই শেষে আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ৮৬ বছরে শেষ হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রবিবার ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি জীবনের কাছে পরাস্ত হন। একাধারে তিনি অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি ও চিত্রকর।

ববিতা বলেন, ‘এই করোনা আমাদের সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলছি আমরা। করোনার কারণে সৌমিত্রদা চলে গেলেন, এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। যদিও সৌমিত্রদা আরো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমরা যখন ঘরবন্দী তিনি তখন মানসিক শক্তির জেরে বাইরে বেরিয়েছিলেন। এটা ভেবেই খারাপ লাগছে যে সৌমিত্রদা হেরে গেলেন।’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সৌমিত্রদা আমার অনেক আপন। একটা সিনেমা করেছি বলে নয়, ওই একটা সিনেমায় সৌমিত্রদা যা দিয়েছেন আমাকে তার জন্য আমি আজীবন তাঁকে কৃতজ্ঞতাভরে মনে রাখবো। মাত্র একটা কি দু’টা সিনেমা করেছি, এরমধ্যে অশনি সংকেতের শুটিঙে অংশ নেই। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ভয়টা আমার কাটিয়েছেন সৌমিত্রদা, আমার একক শট নেওয়ার তিনি ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। শুটিং সেট যে আপন জায়গা হতে পারে সেটা সৌমিত্র’দার কাছ থেকেই বুঝেছি। শুটিং সেটেই তিনি ব্যায়াম করছেন। জিজ্ঞেস করি দাদা এখানে কেন? হেসে বলেন, এখানেই সব করতে হবে। সময় কোথায়, সময় তো পাই না। সেই সৌমিত্র দা চলে গেলেন, আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি কি হারালাম।’

শুধু অশনি সংকেত ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করলেও যোগাযোগ থেকে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই ঢাকা কলকাতা কিংবা অন্য কোনো শহরে দেখা হলেই কথা হতো। সময়টা অনেক গড়িয়ে গেলেও সৌমিত্র কাছের মানুষ হয়েই ছিলেন ববিতার কাছে।

জয়া আহসান:

পর্দায় তিনি যখন অভিনয়ের গরিমা ঝেড়ে ফেলে চরিত্রের আচরণ ফুটিয়ে তুলেছিলেন, ভারতবর্ষের শিল্পভুবনে সেটা শুধু বিস্ময়কর একটা ঘটনাই ছিল না, ছিল এক নতুন যুগের শুরু। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অভিনয়ের প্রথম সারিতেই তার স্থান। কিন্তু অমন যে ইতিহাসের স্রষ্টা, অমন যে শিখরে ওঠা শিল্পী, মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন এক মহাসাগর। যে মহাসাগর অতলান্ত, কিন্তু শান্ত। তার মৃত্যু নেই!

রুমানা রশিদ ঈশিতা:

২০১৮ সালের দিকে কথা। ‘কাঠপেন্সিল’ নামে একটি টেলিছবিতে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। এর আগে, প্রায় ৫ বছরের বিরতিতে ছিলাম। নানা কারণে অভিনয় করা হয়নি। যখন ‘কাঠপেন্সিল’র স্ক্রিপ্ট হাতে পেলাম আর জানতে পারলাম এতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করবেন। তখন আমি আর বেশি কিছু ভাবিনি। সঙ্গে সঙ্গে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাই।

আমার এখনো মনে হয়, সেই সিদ্ধান্তটা আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি হয়ে আছে। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। আমাদের শুটিং হয়েছিল কলকাতায়। উনার বয়স তখন ৮৩ বছর। সেই বয়সেও তার সময়-নিয়মানুবর্তিতা, পেশাদারিত্ব আমাকে মুগ্ধ করত।

শুধু সময় মতোই নয়, তিনি সব সময়ই প্রস্তুতি নিয়ে সেটে আসতেন। কখনো দেখিনি তাকে একটা সংলাপ ভুল বলতে। সবকিছুই মুখস্থ ও আত্মস্থ করেই সেটে ঢুকতেন। আমরা তখনো জানতাম না, তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন। কিংবা তার কাজেও তেমন কোনো ছাপ ছিল না।

সেটে আমরা সবাই উনার অনেক ছোট। আমার চেয়েও বয়সে ছোট টেলিফিল্মের পরিচালক রাফায়েল আহসানের। কিন্তু সৌমিত্র কখনোই ডিরেক্টরের কথার বাইরে কিছু করতে না এবং নির্দেশনাগুলো শুনে বুঝে নিতেন।

প্রায় প্রতি শট দেওয়ার পরই আমাদের জিজ্ঞেস করতেন, কোনো কিছু মিস হলো কিনা? পরিচালককে বলতেন, আবার শট দিতে হবে কি-না! তার মতো বিখ্যাত মানুষের তো অন্যের কাছে মতামত নেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। কিন্তু তিনি তা করতেন। বিনয়ের সঙ্গেই তা করতেন। সৌমিত্র একটা প্রতিষ্ঠান। যার পাশে থাকলেও অনেক কিছু শেখা যায়। আমার সৌভাগ্য, আমি সেই দু’দিন সুযোগটা পেয়েছি। ভালো থাকবেন প্রিয় অভিনেতা।

রোববার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

জনপ্রিয়

সৌমিত্রের চলে যাওয়ায় ব্যথিত শোবিজ তারকারা

প্রকাশিত : ০৮:০৮:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২০

কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর ভাবে ব্যথিত শোবিজ তারকারা। তারা এই কিংবদন্তি অভিনেতার মৃত্যুতে শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন।

সৌমিত্র মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ববিতা বলেন, ‘সৌমিত্রদাকে আমি চিনি হাজার বছর ধরে, তিনি আপন নন তো কি? ঢাকা কি কলকাতা যেখানেই দেখা হতো জড়িয়ে ধরতাম, চলচ্চিত্রের শুরুতে তিনি তোই আমার অভিভাবকের মতো দায়িত্ব পালন করেছেন। এমন আপনজনের মৃত্যুতে কষ্টের কথা কিভাবে বর্ণনা করবো?’ কলকাতার কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে এমনটাই জানালেন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রনায়িকা ফরিদা আক্তার ববিতা।

১৯৭৩ সালে ববিতা অভিনীত অস্কারজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ সিনেমা মুক্তি পায়। এই সিনেমায় তিনি সৌমিত্র চ্যাটার্জির স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন। প্রশংসিত হন দেশ-বিদেশে।

উপমহাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায় চল্ললিশ দিনের লড়াই শেষে আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। ৮৬ বছরে শেষ হলো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কর্মময় পথচলা। হাসপাতালে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর রবিবার ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি জীবনের কাছে পরাস্ত হন। একাধারে তিনি অভিনেতা-নাট্যকার-বাচিকশিল্পী-কবি ও চিত্রকর।

ববিতা বলেন, ‘এই করোনা আমাদের সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। কাছের মানুষদের হারিয়ে ফেলছি আমরা। করোনার কারণে সৌমিত্রদা চলে গেলেন, এটা ভাবতেই খারাপ লাগছে। যদিও সৌমিত্রদা আরো নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। আমরা যখন ঘরবন্দী তিনি তখন মানসিক শক্তির জেরে বাইরে বেরিয়েছিলেন। এটা ভেবেই খারাপ লাগছে যে সৌমিত্রদা হেরে গেলেন।’

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

খ্যাতিমান এই অভিনেত্রী বলেন, ‘সৌমিত্রদা আমার অনেক আপন। একটা সিনেমা করেছি বলে নয়, ওই একটা সিনেমায় সৌমিত্রদা যা দিয়েছেন আমাকে তার জন্য আমি আজীবন তাঁকে কৃতজ্ঞতাভরে মনে রাখবো। মাত্র একটা কি দু’টা সিনেমা করেছি, এরমধ্যে অশনি সংকেতের শুটিঙে অংশ নেই। ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ভয়টা আমার কাটিয়েছেন সৌমিত্রদা, আমার একক শট নেওয়ার তিনি ক্যামেরার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতেন। শুটিং সেট যে আপন জায়গা হতে পারে সেটা সৌমিত্র’দার কাছ থেকেই বুঝেছি। শুটিং সেটেই তিনি ব্যায়াম করছেন। জিজ্ঞেস করি দাদা এখানে কেন? হেসে বলেন, এখানেই সব করতে হবে। সময় কোথায়, সময় তো পাই না। সেই সৌমিত্র দা চলে গেলেন, আমি বলে বোঝাতে পারবো না আমি কি হারালাম।’

শুধু অশনি সংকেত ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করলেও যোগাযোগ থেকে গিয়েছিল। মাঝেমধ্যেই ঢাকা কলকাতা কিংবা অন্য কোনো শহরে দেখা হলেই কথা হতো। সময়টা অনেক গড়িয়ে গেলেও সৌমিত্র কাছের মানুষ হয়েই ছিলেন ববিতার কাছে।

জয়া আহসান:

পর্দায় তিনি যখন অভিনয়ের গরিমা ঝেড়ে ফেলে চরিত্রের আচরণ ফুটিয়ে তুলেছিলেন, ভারতবর্ষের শিল্পভুবনে সেটা শুধু বিস্ময়কর একটা ঘটনাই ছিল না, ছিল এক নতুন যুগের শুরু। বিশ্ব চলচ্চিত্রের অভিনয়ের প্রথম সারিতেই তার স্থান। কিন্তু অমন যে ইতিহাসের স্রষ্টা, অমন যে শিখরে ওঠা শিল্পী, মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন এক মহাসাগর। যে মহাসাগর অতলান্ত, কিন্তু শান্ত। তার মৃত্যু নেই!

রুমানা রশিদ ঈশিতা:

২০১৮ সালের দিকে কথা। ‘কাঠপেন্সিল’ নামে একটি টেলিছবিতে আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছিলাম। এর আগে, প্রায় ৫ বছরের বিরতিতে ছিলাম। নানা কারণে অভিনয় করা হয়নি। যখন ‘কাঠপেন্সিল’র স্ক্রিপ্ট হাতে পেলাম আর জানতে পারলাম এতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অভিনয় করবেন। তখন আমি আর বেশি কিছু ভাবিনি। সঙ্গে সঙ্গে অভিনয় করতে রাজি হয়ে যাই।

আমার এখনো মনে হয়, সেই সিদ্ধান্তটা আমার জীবনের অন্যতম প্রাপ্তি হয়ে আছে। আমি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো মানুষের সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি। আমাদের শুটিং হয়েছিল কলকাতায়। উনার বয়স তখন ৮৩ বছর। সেই বয়সেও তার সময়-নিয়মানুবর্তিতা, পেশাদারিত্ব আমাকে মুগ্ধ করত।

শুধু সময় মতোই নয়, তিনি সব সময়ই প্রস্তুতি নিয়ে সেটে আসতেন। কখনো দেখিনি তাকে একটা সংলাপ ভুল বলতে। সবকিছুই মুখস্থ ও আত্মস্থ করেই সেটে ঢুকতেন। আমরা তখনো জানতাম না, তিনি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন। কিংবা তার কাজেও তেমন কোনো ছাপ ছিল না।

সেটে আমরা সবাই উনার অনেক ছোট। আমার চেয়েও বয়সে ছোট টেলিফিল্মের পরিচালক রাফায়েল আহসানের। কিন্তু সৌমিত্র কখনোই ডিরেক্টরের কথার বাইরে কিছু করতে না এবং নির্দেশনাগুলো শুনে বুঝে নিতেন।

প্রায় প্রতি শট দেওয়ার পরই আমাদের জিজ্ঞেস করতেন, কোনো কিছু মিস হলো কিনা? পরিচালককে বলতেন, আবার শট দিতে হবে কি-না! তার মতো বিখ্যাত মানুষের তো অন্যের কাছে মতামত নেওয়ার প্রয়োজনও পড়ে না। কিন্তু তিনি তা করতেন। বিনয়ের সঙ্গেই তা করতেন। সৌমিত্র একটা প্রতিষ্ঠান। যার পাশে থাকলেও অনেক কিছু শেখা যায়। আমার সৌভাগ্য, আমি সেই দু’দিন সুযোগটা পেয়েছি। ভালো থাকবেন প্রিয় অভিনেতা।

রোববার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে কলকাতার একটি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি জন্ম নেওয়া এ অভিনেতার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ