১১:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়ায় দরপতন হলেও বাংলাদেশে হল্টেড রবি

  • তাকী জোবায়ের
  • প্রকাশিত : ১১:৫৯:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১
  • 26

মালয়েশিয়ার বহুজাতিক টেলিকম কোম্পানি আজিয়াটার বিনিয়োগ রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যে মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি আজিয়াটা। কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগও এই দুই দেশে। দুটি দেশেরই শেয়ারবাজারে গত এক বছর ধরে উত্থান-পতনের মধ্যে আছে এই কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে নিজের দেশ মালয়শিয়াতেই গত এক বছরে কোম্পানিটি দর হারিয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশের বেশি। ইন্দোনেশিয়ার বাজারে গত এক বছরে দর হারিয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে উল্টো চিত্র দুই বছর ৯ মাসে মাত্র ৩৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করা কোম্পানিটির। মাত্র ২৫ পয়সা ইপিএসে’র কোম্পানিটির ১৩ কার্যদিবসে শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৬৩২ শতাংশ। কোম্পানিটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার যে দামে শেয়ার উঠেছে সেই দামে কেউ যদি রবিতে বিনিয়োগ করে তবে তাকে বিনিয়োগ ফিরে পেতে ১৯১ বছর সময় লাগবে।

শেয়ারবাজারে আসার পর গত ১৩ কার্যদিবসেই একের পর এক রেকর্ড করেছে রবি। সর্বশেষ ১৩তম কার্যদিবসে লেনদেন শুরু হতেই দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে ‘হল্টেড’ (লেনদেন বন্ধ) হয়েছে রবি আজিয়াটার শেয়ার। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানি লেনদেন শুরুর প্রথম ১৩ কার্যদিবস টানা দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করতে পারেনি।
রবির আগে টানা দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার রেকর্ড ছিল ওয়ালটনের। ওয়ালটনের শেয়ার দাম লেনদেন শুরুর প্রথম ৮ কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
নতুন তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটার শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি সতর্কবার্তাও প্রকাশ করেছে ডিএসই। ডিএসই জানিয়েছে, রবির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ৪ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়। জবাবে তারা জানিয়েছে, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

গ্রামীণফোনের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েও দূর্বল ব্যবসার কারনে রবি আজিয়াটা শুধুমাত্র অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় শেয়ার ইস্যু করতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ১০ টাকা পাওয়ার যোগ্য মনে করলেও বিনিয়োগকারীরা সেটাকে ৫০ টাকার উপরে নিয়ে গেছে। যাতে করে শেয়ারটি এখন অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে পৌছে গেছে। অথচ ১১ বছর আগে গ্রামীণফোন ৬০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার ৭০ টাকা করে ইস্যু করার সক্ষমতা অর্জন করেছিল।

অনেক বিনিয়োগকারী রবিকে গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে তুলনা করে বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। দুইটি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের যেখানে ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০২০) শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ১৯ টাকা ৮৯ পয়সা সেখানে রবির ইপিএস ২৫ পয়সা।
অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন তালিকাভুক্তির কারনে কর সুবিধা পেয়ে রবির মুনাফায় বড় উল্লম্ফন হবে। কিন্তু কোম্পানিটির পুরো কর মওকুফ করা হলেও ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৮০ পয়সা। আর গ্রামীণফোনের সমহারে কর দিলে ইপিএস হয় ৪৮ পয়সা।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিশ্লেষণ একটি অন্যতম হাতিয়ার। যার মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় বিনিয়োগ ফেরত পেতে কত সময় লাগবে। এই পদ্ধতিতে রবি আজিয়াটা থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে লাগবে ১৯১ বছর ৬ মাস।

দেখা গেছে, ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শেষে রবি আজিয়াটার শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৬৩.২০ টাকা। আর কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২৫ পয়সা। এই হারে মুনাফা করলে বছর শেষে রবির ইপিএস হবে পয়সা। এই হিসাবে ৬৩ টাকা ২০ পয়সার বিনিয়োগ ফেরত পেতে সময় লাগবে ১৯১ বছর ৬ মাস।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘যারা উচ্চ দামে শেয়ার কিনছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা কেন এত দামে শেয়ার কিনছে। রবির শেয়ার বর্তমানে কেউ বিক্রি করছে না। মাত্র আইপিও করে রবি বাজারে এসেছে। আইন অনুযায়ী আমরা এখনই এখানে কিছু বলতে পারছি না।’

রবির শেয়ারের বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

রবির শেয়ারের এত দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে কি না জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক না হলে আসলে কারও কিছু করার নেই।’

বিজনেস বাংলাদেশ

 

জনপ্রিয়

মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়ায় দরপতন হলেও বাংলাদেশে হল্টেড রবি

প্রকাশিত : ১১:৫৯:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী ২০২১

মালয়েশিয়ার বহুজাতিক টেলিকম কোম্পানি আজিয়াটার বিনিয়োগ রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যে মালয়শিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি আজিয়াটা। কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় বিনিয়োগও এই দুই দেশে। দুটি দেশেরই শেয়ারবাজারে গত এক বছর ধরে উত্থান-পতনের মধ্যে আছে এই কোম্পানির শেয়ার। এর মধ্যে নিজের দেশ মালয়শিয়াতেই গত এক বছরে কোম্পানিটি দর হারিয়েছে সাড়ে ১০ শতাংশের বেশি। ইন্দোনেশিয়ার বাজারে গত এক বছরে দর হারিয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ। সেখানে বাংলাদেশে উল্টো চিত্র দুই বছর ৯ মাসে মাত্র ৩৪৮ কোটি টাকা মুনাফা করা কোম্পানিটির। মাত্র ২৫ পয়সা ইপিএসে’র কোম্পানিটির ১৩ কার্যদিবসে শেয়ারমূল্য বেড়েছে ৬৩২ শতাংশ। কোম্পানিটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মঙ্গলবার যে দামে শেয়ার উঠেছে সেই দামে কেউ যদি রবিতে বিনিয়োগ করে তবে তাকে বিনিয়োগ ফিরে পেতে ১৯১ বছর সময় লাগবে।

শেয়ারবাজারে আসার পর গত ১৩ কার্যদিবসেই একের পর এক রেকর্ড করেছে রবি। সর্বশেষ ১৩তম কার্যদিবসে লেনদেন শুরু হতেই দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে ‘হল্টেড’ (লেনদেন বন্ধ) হয়েছে রবি আজিয়াটার শেয়ার। দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এর আগে কোনো কোম্পানি লেনদেন শুরুর প্রথম ১৩ কার্যদিবস টানা দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করতে পারেনি।
রবির আগে টানা দাম বৃদ্ধির সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করার রেকর্ড ছিল ওয়ালটনের। ওয়ালটনের শেয়ার দাম লেনদেন শুরুর প্রথম ৮ কার্যদিবস দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করে।
নতুন তালিকাভুক্ত রবি আজিয়াটার শেয়ার দাম এভাবে বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। এজন্য বিনিয়োগকারীদের প্রতি সতর্কবার্তাও প্রকাশ করেছে ডিএসই। ডিএসই জানিয়েছে, রবির শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে ৪ জানুয়ারি কোম্পানিটিকে নোটিশ করা হয়। জবাবে তারা জানিয়েছে, শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির পেছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই।

গ্রামীণফোনের আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েও দূর্বল ব্যবসার কারনে রবি আজিয়াটা শুধুমাত্র অভিহিত মূল্য ১০ টাকায় শেয়ার ইস্যু করতে বাধ্য হয়েছে। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ১০ টাকা পাওয়ার যোগ্য মনে করলেও বিনিয়োগকারীরা সেটাকে ৫০ টাকার উপরে নিয়ে গেছে। যাতে করে শেয়ারটি এখন অতিমাত্রায় ঝুঁকিতে পৌছে গেছে। অথচ ১১ বছর আগে গ্রামীণফোন ৬০ টাকা প্রিমিয়ামসহ প্রতিটি শেয়ার ৭০ টাকা করে ইস্যু করার সক্ষমতা অর্জন করেছিল।

অনেক বিনিয়োগকারী রবিকে গ্রামীণ ফোনের সঙ্গে তুলনা করে বিনিয়োগে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। দুইটি কোম্পানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গ্রামীণফোনের যেখানে ৯ মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর ২০২০) শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছে ১৯ টাকা ৮৯ পয়সা সেখানে রবির ইপিএস ২৫ পয়সা।
অনেক বিনিয়োগকারী মনে করছেন তালিকাভুক্তির কারনে কর সুবিধা পেয়ে রবির মুনাফায় বড় উল্লম্ফন হবে। কিন্তু কোম্পানিটির পুরো কর মওকুফ করা হলেও ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয় ৮০ পয়সা। আর গ্রামীণফোনের সমহারে কর দিলে ইপিএস হয় ৪৮ পয়সা।

বিনিয়োগকারীদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মূল্য-আয় অনুপাত (পিই রেশিও) বিশ্লেষণ একটি অন্যতম হাতিয়ার। যার মাধ্যমে সহজেই বোঝা যায় বিনিয়োগ ফেরত পেতে কত সময় লাগবে। এই পদ্ধতিতে রবি আজিয়াটা থেকে বিনিয়োগ ফেরত পেতে লাগবে ১৯১ বছর ৬ মাস।

দেখা গেছে, ১৩ জানুয়ারি লেনদেন শেষে রবি আজিয়াটার শেয়ার দর দাড়িঁয়েছে ৬৩.২০ টাকা। আর কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ২৫ পয়সা। এই হারে মুনাফা করলে বছর শেষে রবির ইপিএস হবে পয়সা। এই হিসাবে ৬৩ টাকা ২০ পয়সার বিনিয়োগ ফেরত পেতে সময় লাগবে ১৯১ বছর ৬ মাস।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মুখপাত্র মো. রেজাউল করিম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘যারা উচ্চ দামে শেয়ার কিনছে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা কেন এত দামে শেয়ার কিনছে। রবির শেয়ার বর্তমানে কেউ বিক্রি করছে না। মাত্র আইপিও করে রবি বাজারে এসেছে। আইন অনুযায়ী আমরা এখনই এখানে কিছু বলতে পারছি না।’

রবির শেয়ারের বিষয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করলে বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

রবির শেয়ারের এত দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা আছে কি না জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘বিনিয়োগকারীদের সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগকারীরা সতর্ক না হলে আসলে কারও কিছু করার নেই।’

বিজনেস বাংলাদেশ