০৬:২৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

দুবৃত্তের থাবায় বাংলার ফুসফুস

বিশ্ব ঐতিহ্য একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা-মায়া হরিণ, সুন্দরী ও গোলপাতা বৃক্ষ। বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশের পরিবেশ। এছাড়া আগুনে পুড়েও নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনের সৌন্দর্য। গত ১৯ বছরে সুন্দরবনে ৩১ বার আগুন লাগে। এসব আগুনে পুড়ে যায় প্রায় ৯০ একর বনভূমি।
চলমান করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে নদ-নদী ও রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ও চোরা শিকারিরা সুন্দরবনে মেতে উঠেছে হরিণ ও বাঘ শিকারে। শুধু বন্যপ্রাণীই নয়, বনের সুন্দরি, পশুর গাছ নিধনসহ বিষ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে বনের ভেতরের নদী-খালে। সুন্দরবনের বাঘের চামড়া ও হরিণের মাংসসহ চামড়া পাচার এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সংঘবদ্ধ বৃক্ষচোর, বিষ প্রয়োগকারী দুর্বৃত্ত ও চোরা শিকারিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে রেড এলার্ট জারি করে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত ঘোষনায় সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার কমে এসেছে বলে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন দাবী করলেও গত ছয় মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারীর ১০ তারিখ পর্যন্ত) বিভিন্ন সময় সুন্দরবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪ জন চোরা শিকারীকে। এসময় জব্দ করা হয়েছে ১টি বাঘের চামড়া, ১৫৩৪ কেজি হরিণের মাংস ও ৪৫ হাচোরা শিকারীদেরজীর ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ। জব্দ করা হয়েছে ৯টি নৌকা আর মামলা হয়েছে ১৮টি।

এটা শুধু সুন্দরবনে ধরা পরা চোরা শিকারীদের পরিসংখ্যান। এর বাইরে চোরা শিকারিরা কি পরিমাণ হরিণ হত্যা করে মাংস চালান করেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। তবে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলেছে, বিভিন্ন সময় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে পাশপারমিট নিয়ে ছদ্মবেশে থাকা এক শ্রেণির জেলে ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাই এই বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের সাথে জড়িত। তবে শরণখোলা উপজেলার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ শুধু জেলে বনজীবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা নয় বণ্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের সহযোগী হিসাবে বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষিরাও জড়িত।
বন বিভাগের তথ্য মতে, জেলে সেজে পূর্ব সুন্দরবন থেকে পাশপারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধে বিভিন্ন সময় জেলে ও বনজীবীদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া পাশপারমিট বাদেও সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধেও আটক হয়েছে অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একাধিক জেলে ও বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে হরিণ শিকার এখন তো নিত্যদিনের ব্যাপার। জেলে পরিচয়ে সুন্দরবনে পাস পারমিট নিয়ে প্রবেশ করা এক শ্রেণির চোরা শিকারী সুন্দরবনের হরিণ ও বাঘ হত্যার সাথে জড়িত। এদের সাথে বিভিন্ন সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জেলেরা জড়িত থাকে। ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করা চোরা শিকারীরা সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় অনুপ্রবেশ করে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে মাংস বিক্রি করে। বনরক্ষীরা যে পরিমাণ হরিণের মাংস উদ্ধার ও শিকারীদের আটক করেছে তার চেয়ে অনেক বেশিই হরিণের মৃত্যু হয়েছে শিকারি চক্রের হাতে। চড়া দামে গোপনে হরিণের মাংস বিক্রি হয়। ১ হাজার ৫শ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত।
কারা সুন্দরবনের হরিণের মাংসের ক্রেতা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা আরও জানান, হরিণের মাংসের ক্রেতার অভাব নেই। হরিণের মাংস এখন হোম ডেলিভারীও করা হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও খোদ প্রশাসনের লোকজনও এই মাংসের ক্রেতা। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা গুলোতে বসবাস করা ধনী পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির ফ্রিজে প্রায় সব সময়ই হরিণের মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা, বাগেরহাট, খুলনা ও পিরোজপুর জেলার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা চোরা শিকারীদের কাছ থেকে মাংস ক্রয় করে থাকে।
জানা যায়, সম্প্রতি সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণসহ বন্যপ্রাণী নিধন এবং পাচার বেড়ে যাওয়ায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে কঠোর নিদের্শনা দেয়া হয়েছে বনরক্ষীদের। এছাড়া বনের অভ্যন্তরে টহলও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনে ছোট ডিঙ্গি নৌকা চলাচলের উপরও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুন্দরবনে চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে বন বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
৩১টি অগ্নিকাণ্ড পুড়েছে ৯০ একর: চোরা শিকারি দমনে সুন্দরবন জুড়ে চলছে রেড এলার্ট। বন বিভাগের সর্বত্র কঠোর সতর্কতা রয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টের বনে আগুন লাগে। এতে প্রায় ২০০ বর্গ মিটার (প্রায় ৪ শতক) বনভূমি পুড়ে যায়। বন বিভাগ বলছে, বন কর্মীদের সতর্কতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে সুন্দরবন। বন বিভাগ প্রথমে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ বছরে সুন্দরবনে ৩১ বার আগুন লাগে। এসব আগুনে পুড়ে যায় প্রায় ৯০ একর বনভূমি।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন প্রকল্প: আবহাওয়া পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের রক্ষাকবজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিকূল হুমকির মুখে। বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বনের অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রাণি। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কম লবণসহিষ্ণু গাছ ও বণ্যপ্রাণীর ওপর। তাই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় এবার বনের ভেতরে ৮৮টি পুকুর খনন ও পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আবহাওয়া ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পুকুর খনন ও পুনঃখননে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণির অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিপন্ন প্রাণিসমূহের মাঝে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। এ ছাড়া সুন্দর বনের সুন্দরী গাছও এখন হুমকির মুখে। এ ছাড়া সুন্দরবন থেকে এরইমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের আগ্রাসনে চিরতরে হারিয়ে গেছে এক প্রজাতির বন্য মহিষ, দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গন্ডার ও এক প্রজাতির মিঠাপানির কুমির।
এক দশকে বাঘ কমেছে দুই তৃতীয়াংশ : পৃথিবীর অন্য অঞ্চলে বিপন্ন বাঘ সংরক্ষণে যেমন উদ্যোগই থাকুক না কেন, সুন্দরবনে এজন্য অনেক প্রকল্প হাতে নিয়ে এবং এক দশক ধরে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হলেও বাঘের সংখ্যার উন্নয়ন ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে আনুমানিক ধারণা ছিল সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ৩৭৫টি, ১৯৮৪ সালে গবেষণালব্ধ এই ধারণা ছিল ৪৫০টির মতো। আর ১৯৯২-৯৩ সালের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। তবে এখন সর্বশেষ গবেষণায় ১১৪টির বেশি বাঘের তথ্য নেই বন বিভাগের হাতে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ বনাঞ্চল বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। এ বনের জল-স্থলে বাঘের জন্য রয়েছে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য হরিণ, বানর, কাঠবিড়ালি, গিরগিটি, শুশুক, ভোঁদড়, কুমির ইত্যাদি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলছেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। এদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতিসহ খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী এবং সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এলাকা। জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বুবার্ট হেনড্রিকস সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার নমুনা ও সরেজমিন জরিপ চালিয়ে ৪২৫টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এর দুই বছর পর রেক্স জিটিন্স সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। সুন্দরবন এলাকায় কাজ করেন এমন লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিল বন বিভাগ। পরের বছর সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিলেন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের গবেষণায় সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়। এতে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাঘ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যামেরার সাহায্যে গণনা করা হয়। খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগ এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করে। যার ফলাফল ২০১৮ সালেই প্রকাশ করা হয়। ওই ফলাফলে সুন্দরবনের ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৩ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে ৮টি বাঘ বৃদ্ধির চিত্র ফুটে ওঠে। সর্বশেষ বাঘশুমারিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি পাওয়া যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সঙ্গে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯ দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলোতে বাঘের ২,৫০০টি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করেছেন। বাঘের প্রকৃত সংখ্যা বন বিভাগের কাছে নেই।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা দেশের সংরক্ষিত বন ভূমির ৫১ ভাগ। সুন্দরবনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ৩৭৫ প্রজাতির রয়েছে বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে রয়েছে বাঘ ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর ও কিং কোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখি। সংরক্ষিত এই বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। দিনে দুবার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের জলভাগে ছোটবড় সাড়ে ৪শ’ নদ-নদী ও খাল রয়েছে।

ট্যাগ :

৩০ নভেম্বরের মধ্যে সব কর্মচারীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে 

দুবৃত্তের থাবায় বাংলার ফুসফুস

প্রকাশিত : ১২:০০:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১

বিশ্ব ঐতিহ্য একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এবং বাংলাদেশের ফুসফুস খ্যাত সুন্দরবনের প্রধান আকর্ষণ রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা-মায়া হরিণ, সুন্দরী ও গোলপাতা বৃক্ষ। বনখেকোদের আগ্রাসনের ফলে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে। সুন্দরবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশের পরিবেশ। এছাড়া আগুনে পুড়েও নষ্ট হচ্ছে সুন্দরবনের সৌন্দর্য। গত ১৯ বছরে সুন্দরবনে ৩১ বার আগুন লাগে। এসব আগুনে পুড়ে যায় প্রায় ৯০ একর বনভূমি।
চলমান করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবে নদ-নদী ও রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে অসাধু ও চোরা শিকারিরা সুন্দরবনে মেতে উঠেছে হরিণ ও বাঘ শিকারে। শুধু বন্যপ্রাণীই নয়, বনের সুন্দরি, পশুর গাছ নিধনসহ বিষ দিয়ে মাছ শিকারের মহোৎসব চলছে বনের ভেতরের নদী-খালে। সুন্দরবনের বাঘের চামড়া ও হরিণের মাংসসহ চামড়া পাচার এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাড়িয়েছে। সংঘবদ্ধ বৃক্ষচোর, বিষ প্রয়োগকারী দুর্বৃত্ত ও চোরা শিকারিদের তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুন্দরবনে রেড এলার্ট জারি করে টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর সুন্দরবনকে দস্যু মুক্ত ঘোষনায় সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণ শিকার কমে এসেছে বলে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন দাবী করলেও গত ছয় মাসে (জুলাই ২০২০ থেকে ফেব্রুয়ারীর ১০ তারিখ পর্যন্ত) বিভিন্ন সময় সুন্দরবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৩৪ জন চোরা শিকারীকে। এসময় জব্দ করা হয়েছে ১টি বাঘের চামড়া, ১৫৩৪ কেজি হরিণের মাংস ও ৪৫ হাচোরা শিকারীদেরজীর ফুট হরিণ শিকারের ফাঁদ। জব্দ করা হয়েছে ৯টি নৌকা আর মামলা হয়েছে ১৮টি।

এটা শুধু সুন্দরবনে ধরা পরা চোরা শিকারীদের পরিসংখ্যান। এর বাইরে চোরা শিকারিরা কি পরিমাণ হরিণ হত্যা করে মাংস চালান করেছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই কারও কাছে। তবে বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলেছে, বিভিন্ন সময় পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ থেকে পাশপারমিট নিয়ে ছদ্মবেশে থাকা এক শ্রেণির জেলে ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারাই এই বন্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের সাথে জড়িত। তবে শরণখোলা উপজেলার জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় জেলেদের অভিযোগ শুধু জেলে বনজীবী ও স্থানীয় বাসিন্দারা নয় বণ্যপ্রাণী শিকার ও পাচারের সহযোগী হিসাবে বন কর্মকর্তা ও বনরক্ষিরাও জড়িত।
বন বিভাগের তথ্য মতে, জেলে সেজে পূর্ব সুন্দরবন থেকে পাশপারমিট নিয়ে বনে প্রবেশ করে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধে বিভিন্ন সময় জেলে ও বনজীবীদের আটক করা হয়েছে। এছাড়া পাশপারমিট বাদেও সুন্দরবনে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে হরিণ হত্যা ও পাচারের অপরাধেও আটক হয়েছে অনেকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শরণখোলা উপজেলার সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একাধিক জেলে ও বাসিন্দারা জানান, সুন্দরবনে হরিণ শিকার এখন তো নিত্যদিনের ব্যাপার। জেলে পরিচয়ে সুন্দরবনে পাস পারমিট নিয়ে প্রবেশ করা এক শ্রেণির চোরা শিকারী সুন্দরবনের হরিণ ও বাঘ হত্যার সাথে জড়িত। এদের সাথে বিভিন্ন সময় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও জেলেরা জড়িত থাকে। ছদ্মবেশে সুন্দরবনে প্রবেশ করা চোরা শিকারীরা সুন্দরবনের সংরক্ষিত এলাকায় অনুপ্রবেশ করে ফাঁদ পেতে হরিণ শিকার করে মাংস বিক্রি করে। বনরক্ষীরা যে পরিমাণ হরিণের মাংস উদ্ধার ও শিকারীদের আটক করেছে তার চেয়ে অনেক বেশিই হরিণের মৃত্যু হয়েছে শিকারি চক্রের হাতে। চড়া দামে গোপনে হরিণের মাংস বিক্রি হয়। ১ হাজার ৫শ টাকা থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা কেজি পর্যন্ত।
কারা সুন্দরবনের হরিণের মাংসের ক্রেতা এমন প্রশ্নের জবাবে তারা আরও জানান, হরিণের মাংসের ক্রেতার অভাব নেই। হরিণের মাংস এখন হোম ডেলিভারীও করা হয়। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও খোদ প্রশাসনের লোকজনও এই মাংসের ক্রেতা। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকা গুলোতে বসবাস করা ধনী পরিবার ও রাজনৈতিক নেতাদের বাড়ির ফ্রিজে প্রায় সব সময়ই হরিণের মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া সুন্দরবন সন্নিহিত জেলা, বাগেরহাট, খুলনা ও পিরোজপুর জেলার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা চোরা শিকারীদের কাছ থেকে মাংস ক্রয় করে থাকে।
জানা যায়, সম্প্রতি সুন্দরবনে বাঘ ও হরিণসহ বন্যপ্রাণী নিধন এবং পাচার বেড়ে যাওয়ায় রেড এলার্ট জারি করা হয়েছে। দায়িত্ব পালনে কঠোর নিদের্শনা দেয়া হয়েছে বনরক্ষীদের। এছাড়া বনের অভ্যন্তরে টহলও জোরদার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বনে ছোট ডিঙ্গি নৌকা চলাচলের উপরও সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সুন্দরবনে চোরা শিকারীদের তৎপরতা বন্ধে বন বিভাগ কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
৩১টি অগ্নিকাণ্ড পুড়েছে ৯০ একর: চোরা শিকারি দমনে সুন্দরবন জুড়ে চলছে রেড এলার্ট। বন বিভাগের সর্বত্র কঠোর সতর্কতা রয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কম্পার্টমেন্টের বনে আগুন লাগে। এতে প্রায় ২০০ বর্গ মিটার (প্রায় ৪ শতক) বনভূমি পুড়ে যায়। বন বিভাগ বলছে, বন কর্মীদের সতর্কতার কারণে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়েছে সুন্দরবন। বন বিভাগ প্রথমে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। পরে শরণখোলা ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট সেখানে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ বছরে সুন্দরবনে ৩১ বার আগুন লাগে। এসব আগুনে পুড়ে যায় প্রায় ৯০ একর বনভূমি।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নতুন প্রকল্প: আবহাওয়া পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে দক্ষিণাঞ্চলের রক্ষাকবজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে গাছপালা ও প্রাণিকূল হুমকির মুখে। বিরূপ আবহাওয়া ও পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে বনের অনেক প্রাণি বিলুপ্ত হতে চলেছে। অজ্ঞতা ও অবহেলার কারণে গত কয়েক দশকের ব্যবধানে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রাণি। সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীগুলোর লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে কম লবণসহিষ্ণু গাছ ও বণ্যপ্রাণীর ওপর। তাই ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে জীববৈচিত্র রক্ষায় এবার বনের ভেতরে ৮৮টি পুকুর খনন ও পুনঃখননের উদ্যোগ নিয়েছে বন বিভাগ। আবহাওয়া ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে পুকুর খনন ও পুনঃখননে ৪ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করার টার্গেট রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৩০টি প্রজাতির বন্যপ্রাণির অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। বিপন্ন প্রাণিসমূহের মাঝে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিতাবাঘ, হাতি, অজগর সাপ, কুমির, ঘড়িয়াল ইত্যাদি। এ ছাড়া সুন্দর বনের সুন্দরী গাছও এখন হুমকির মুখে। এ ছাড়া সুন্দরবন থেকে এরইমধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মানুষের আগ্রাসনে চিরতরে হারিয়ে গেছে এক প্রজাতির বন্য মহিষ, দুই প্রজাতির হরিণ, দুই প্রজাতির গন্ডার ও এক প্রজাতির মিঠাপানির কুমির।
এক দশকে বাঘ কমেছে দুই তৃতীয়াংশ : পৃথিবীর অন্য অঞ্চলে বিপন্ন বাঘ সংরক্ষণে যেমন উদ্যোগই থাকুক না কেন, সুন্দরবনে এজন্য অনেক প্রকল্প হাতে নিয়ে এবং এক দশক ধরে প্রচুর অর্থ ব্যয় করা হলেও বাঘের সংখ্যার উন্নয়ন ঘটেনি। ১৯৭৫ সালে আনুমানিক ধারণা ছিল সুন্দরবনে বাঘ রয়েছে ৩৭৫টি, ১৯৮৪ সালে গবেষণালব্ধ এই ধারণা ছিল ৪৫০টির মতো। আর ১৯৯২-৯৩ সালের জরিপে এই সংখ্যা ছিল ৩৬২টি। তবে এখন সর্বশেষ গবেষণায় ১১৪টির বেশি বাঘের তথ্য নেই বন বিভাগের হাতে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের সুন্দরবন হচ্ছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল। সুন্দরবনের ৬২ শতাংশ বনাঞ্চল বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। এ বনের জল-স্থলে বাঘের জন্য রয়েছে প্রচুর বৈচিত্র্যপূর্ণ খাদ্য হরিণ, বানর, কাঠবিড়ালি, গিরগিটি, শুশুক, ভোঁদড়, কুমির ইত্যাদি। বন বিভাগের কর্মকর্তারা জরিপের তথ্য উল্লেখ করে বলছেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারের মধ্যে ৪ হাজার ৮৩২ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বাঘ বিচরণ করে। এদের বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র বাগেরহাটের কটকা, কচিখালী ও সুপতিসহ খুলনার নীলকমল, পাটকোষ্টা ও গেওয়াখালী এবং সাতক্ষীরার মুন্সিগঞ্জ, দোবেকি ও কৈখালী এলাকা। জানা গেছে, ১৯৭৫ সালে বুবার্ট হেনড্রিকস সুন্দরবনে ৩৫০টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৮২ সালে মার্গারেট স্যালটার নমুনা ও সরেজমিন জরিপ চালিয়ে ৪২৫টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। এর দুই বছর পর রেক্স জিটিন্স সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন। সুন্দরবন এলাকায় কাজ করেন এমন লোকজনের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য দিয়েছিল বন বিভাগ। পরের বছর সুন্দরবনের ৩৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘের ব্যাপারে তথ্য দিয়েছিলেন।
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ সালের গবেষণায় সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৪৪০টি। ২০১৫ সালে ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনা করা হয়। এতে ১০৬টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ২০১৬ সালে আমেরিকার দাতা সংস্থা ইউএসএআইডির অর্থায়নে বাঘ প্রকল্পের মাধ্যমে ক্যামেরার সাহায্যে গণনা করা হয়। খুলনা বিভাগীয় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃত সংরক্ষণ বিভাগ এ প্রকল্পকে জনবল ও ৭০টি ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বাঘ প্রকল্প ক্যামেরা ট্রাপিংয়ের মাধ্যমে বাঘ গণনার কাজ শুরু করে। যার ফলাফল ২০১৮ সালেই প্রকাশ করা হয়। ওই ফলাফলে সুন্দরবনের ১১৪টি বাঘের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। ৩ বছরের ব্যবধানে সুন্দরবনে ৮টি বাঘ বৃদ্ধির চিত্র ফুটে ওঠে। সর্বশেষ বাঘশুমারিতে ক্যামেরার সামনে দিয়ে বাঘ চলাচল করলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার ছবি পাওয়া যায়। পরে এসব ছবি বিশ্লেষণ করে বাঘের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়। সর্বশেষ এই জরিপে সুন্দরবনের ২৩৯টি জায়গায় গাছের সঙ্গে ৪৯১টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছিল। ২৪৯ দিন ধরে চালু রাখা ক্যামেরাগুলোতে বাঘের ২,৫০০টি ছবি পাওয়া যায়। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা ১১৪টি বাঘ থাকার কথা অনুমান করেছেন। বাঘের প্রকৃত সংখ্যা বন বিভাগের কাছে নেই।
উল্লেখ্য, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা দেশের সংরক্ষিত বন ভূমির ৫১ ভাগ। সুন্দরবনে সুন্দরী, গেওয়া, গরান ও পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। ৩৭৫ প্রজাতির রয়েছে বন্যপ্রাণী। এদের মধ্যে রয়েছে বাঘ ও হরিণসহ ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, কুমির, গুইসাপ, কচ্ছপ, ডলফিন, অজগর ও কিং কোবরাসহ ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণী এবং ৩১৫ প্রজাতির পাখি। সংরক্ষিত এই বনের তিনটি এলাকাকে ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর জাতিসংঘের ইউনেস্কো ৭৯৮তম ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইড ঘোষণা করে, যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩০ ভাগ এলাকা। দিনে দুবার সমুদ্রের জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়া লবণাক্ত স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবনের জলভাগে ছোটবড় সাড়ে ৪শ’ নদ-নদী ও খাল রয়েছে।