মুজিব বর্ষ উপলক্ষ্যে সোনালী ব্যাংক তাদের স্লোগান নির্ধারণ করেছিলÑ ‘দৃপ্ত শপথে মুজিব বর্ষে, আমরা যাবো সবার শীর্ষে’। কিন্তু মুজিব বর্ষের শুরুতেই হানা দেয় করোনা মহামারি যা ওলট-পালট করে দেয় সকল হিসাব নিকাশ। এর মধ্যেও লক্ষ্যে অবিচল থাকে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড। ব্যাংকটির বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ও পর্ষদের কর্মকৌশল ও প্রচেষ্টায় মহামারির বছরেও পরিচালন মুনাফায় সবার শীর্ষে উঠে আসে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড।
অতিমারীর মাঝেও সোনালী ব্যাংক গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করেছে। এই সময়ে কৃষকদের মাঝে বিনা সুদে ঋণ বিতরণ অব্যাহত রাখা, প্রণোদনা প্যাকেজ শতভাগ বাস্তবায়ন, অ্যাপসভিত্তিক অ্যাকাউন্ট, এজেন্ট ব্যাংকিং, ডেবিট, ক্রেডিট কার্ড চালুসহ আধুনিক সব সেবা চালু করে রাষ্ট্রীয় ব্যাংকটিকে ঢেলে সাজিয়েছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি সেবায় বৈচিত্র্যতা আনতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
২০২০ সালে সর্বোচ্চ পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে সোনালী ব্যাংক। গত বছর ২ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা অর্জন করেছে যা সোনালী ব্যাংকের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ২০১৯ ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা ছিল ১ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। করোনা অতিমারীর মধ্যেও সোনালী ব্যাংকের মুনাফা বেড়েছে ৪৬৫ কোটি টাকা। মুনাফার এই প্রবৃদ্ধির হার ২৭ দশমিক ১৯ শতাংশ। এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটি মুনাফা করেছিল ৪৯১ কোটি টাকা। সেই হিসেবে, ১৫ মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির মুনাফা বেড়েছে ১ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা।
২০১৯ সালে সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংকের আমানত ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আমানত বেড়েছে সোনালী ব্যাংকের। একই সাথে বেড়েছে ঋণ ও অগ্রিম। ২০১৯ সালের আগস্টে সোনালীর ঋণ ও অগ্রিমের পরিমাণ ছিল ৪৮ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। গত বছরের শেষে তা বেড়ে হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা। ১৫ মাসে ১০ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বেশি বিনিয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকটি। ঋণ বাড়ায় অগ্রিম-আমানতের অনুপাতও বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি।
শুধু আমানত কিংবা ঋণ বিতরণই নয়। সোনালী ব্যাংক সাফল্য দেখিয়েছে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও। ২০১৯ সালের আগস্টে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা কমে ১০ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। যে কারণে খেলাপি ঋণের হার ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে কমে ১৮ দশমিক ৩৭ শতাংশ হয়েছে। খেলাপির হার কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। ২০২০ সালে খেলাপি ঋণ থেকে আদায় হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। রাইট অফ ঋণ থেকেও আদায় হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।
করোনা মহামারির মধ্যেও রফতানি বাণিজ্যে বিপ্লব হয়েছে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে। যেখানে সারাদেশে রফতানি বাণিজ্য স্থবির ছিল সেখানে ২০২০ সালে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। রেমিট্যান্স আহরণেও চমক দেখিয়েছে সোনালী। গত বছর ১২ হাজার ৯০৬ কোটি টাকা রেমিট্যান্স এসেছে ব্যাংকটির মাধ্যমে। এছাড়া ২০১৯ সালের আগস্টের তুলনায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে সোনালী ব্যাংকের লোকসানি শাখা কমেছে ৩৮টি, লাভজনক শাখা বেড়েছে ৫১টি এবং শতভাগ শাখা কোর ব্যাংকিং সল্যুশনের (অনলাইন ব্যাংকিং) আওতায় চলে এসেছে।
ইন্টারনেট ও অ্যাপসভিত্তিক ব্যাংকিং সেবায় জোর দিয়েছে সোনালী। করোনার মধ্যেও প্রতি সপ্তাহে পর্ষদ সভা করেছে ব্যাংকটি। যুগান্তকারী ও সময়োপযোগী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত পর্ষদ সভায় গৃহীত হয়েছে। করোনার সময় ‘সোনালী সেবা’ অ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসে অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগ করে দিয়েছে ব্যাংকটি। এর মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১ লাখের বেশি হিসাব খোলা হয়েছে যার বেশিরভাগই গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। এই সেবার জন্য বড় অঙ্কের আমানত বেড়েছে ব্যাংকটির।
হিসাব-নিকাশেও আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে সোনালী ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক ও ইন্টালেক্ট ডিজাইন এ্যারেনা লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় আর্থিক প্রযুক্তি সল্যুশন প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সোনালী ইন্টালেক্ট লিমিটেডের সহায়তায় সোনালী ব্যাংক একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জন করেছে। ২ কোটিরও বেশি গ্রাহকের ব্যাংকটি মাত্র ৮ ঘণ্টার মধ্যে ‘ক্লোজিং ইয়ার এন্ড’ অর্থাৎ ব্যাংকের অর্থ বছরের হিসাব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছে। সোনালী ইন্টালেক্ট লিমিটেড সোনালী ব্যাংকের প্রথাগত ব্যাংকিং সেবাগুলোকে আলাদা আলাদা ভেন্ডরের মাধ্যমে প্রদানের পরিবর্তে কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত ইন্টালেক্ট ‘কোর ব্যাংকিং ‘প্ল্যাটফর্মে রূপান্তরিত করেছে। এর ফলে ব্যাংকটি জিরো ডাউনটাইম-এ অর্থাৎ নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক মানের ব্যাংকিং সেবা প্রদান করতে সক্ষম হচ্ছে।
দেশের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে করোনা মহামারির মাঝেও সোনালী ব্যাংকের ১১ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। এ পর্যন্ত সোনালী ব্যাংকে ২ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যে ১৬ জন মারাও গেছেন। বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আগামী এক বছরের মধ্যে ক্যাশলেস লেনদেন ব্যবস্থার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। সোনালী সেবা অ্যাপের মাধ্যমে হিসাব খোলার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন সেবামূল্য পরিশোধ করা যাচ্ছে।
সরকারের মেগা প্রকল্পগুলোর সঙ্গেও সংযুক্ত হয়েছে সোনালী ব্যাংক। সরকারের সবচেয়ে বড় মেগা প্রজেক্ট রূপপুর প্রকল্পের ৯৪ হাজার কোটি টাকার এলসি খোলায় সহায়তা করেছে ব্যাংকটি। এতে ন্যূনতম ৫ হাজার কোটি টাকা কমিশন আসলেও প্রকল্পের ব্যয় কমানোর স্বার্থে সেই কমিশন নেয়নি ব্যাংকটি। এছাড়া বাংলাদেশ বিমানকেও সাতটি বিমান কিনতে দীর্ঘমেয়াদে মাত্র শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদহারে ৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সরকারি চিনিকলসহ অনেক লোকসানি প্রতিষ্ঠানকেও অর্থায়ন করেছে সোনালী ব্যাংক। সকল সংকট পেছনে ফেলে গত পনেরো মাসে সার্বিক সূচকেই এগিয়েছে সোনালী ব্যাংক লিমিটেড এবং প্রতিষ্ঠানটি সবার শীর্ষে যাওয়ার যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিল তা বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছে। এখন সময় শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার।
০৭:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম :
দৃপ্ত শপথে সবার শীর্ষে
-
নিজস্ব প্রতিবেদক
- প্রকাশিত : ০১:১৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১
- 78
ট্যাগ :
জনপ্রিয়