করোনা সংক্রমন বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার সারাদেশে কঠোর লকডাউন ও সাধারণ ছুটি দিতে যাচ্ছে। এ কারণে পিছিয়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফবিসিসিআই) সাধারণ নির্বাচন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এফবিসিসিআই’র নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে। এক্ষেত্রে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত শেখ ফজলে ফাহিমের নেতৃত্বাধীন বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।
এফবিসিসিআই’র নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের তফসিল অনুযায়ী আগামি ৫ মে সংগঠনটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৬ এপ্রিল প্রজ্ঞাপন জারি করে এফবিসিসিআই সহ সকল বাণিজ্য সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) ও নির্বাচন চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এর পরের দিনই এই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল যাতে উল্লেখ করা হয়, বাণিজ্য সংগঠনগুলো চাইলে স্বস্থ্যবিধি মেনে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারবে। তবে বর্তমানে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে সরকার কঠোর লকডাউন ও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে যাচ্ছে। এই প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন এফবিসিসিআই’র নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি। তিনি আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত সংগঠনটির মেমোরেন্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন অনুযায়ী বর্তমান কমিটি দায়িত্ব পালন করে যাবেন।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা আজকের বিজনেস বাংলাদেশকে বলেছেন, ‘দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সহ সামগ্রিক অর্থনীতিতে এফবিসিসিআই’র শক্তিশালী ভূমিকা রয়েছে। করোনা মহামারির কারণে অর্থনীতিতে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবেলায় এফবিসিসিআই’র নেতৃত্বের ভূমিকা অনেক বড়। দেশে এখন করোনা মহামারির দ্বিতীয় ওয়েভ চলছে। অর্থনীতিতে এই দ্বিতীয় ওয়েভের অভিঘাত মোকাবেলায় এফবিসিসিআই’কে স্ট্রং রোল প্লে করতে হবে। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এই মুহূর্তে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে ব্যবসায়ী সমাজকে ক্ষতির মুখে ফেলতে চাইছেনা। কারণ, করোনা সংক্রমণ মোকাবেলা করা এবং অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনাই এখন সরকারের বড় লক্ষ্য। তবে নির্বাচনের বিষয়ে এফবিসিসিআই’র নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই’র নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলী আশরাফ এমপি বলেন, ‘বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড এবং এফবিসিসিআই’র কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ নির্বাচন পরিচালনার বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা হলে এবং এটা প্রলম্বিত হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসেও আনা যাবে না। এছাড়া করোনা মহামারির মধ্যে তাদেরকে অফিসে আসতে বাধ্য করতেও আগ্রহী নন নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। কারণ, নির্বাচন পরিচালনা করতে গিয়ে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হয়ে পড়লে তার দায়-দায়িত্ব বোর্ড নিতে চাচ্ছে না।’ তিনি আইনের ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে নির্ধারিত সময়ে যদি নির্বাচন না হয় সেক্ষেত্রে বর্তমান কমিটিই দায়িত্ব পালন করে যাবে। যখন নির্বাচন হবে এবং নতুন নেতৃত্ব আসবে তখন কমিটি দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক, যারা ঋণ খেলাপি রয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে কিংবা যাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে তারা কেউ এফবিসিসিআই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
গত ১৪ ফেব্রয়ারি এফবিসিসিআই’র নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড। এফবিসিসিআই’র ৬০ পরিচালক পদের মধ্যে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে ১৮টি করে মোট ৩৬টি পরিচালক পদে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাকি ২৪টি পদে কোনো নির্বাচন ছাড়াই মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দেশের শীর্ষ ১২টি চেম্বার থেকে ১২ জন ও ১২টি অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১২ জন এফবিসিসিঅইয়ের পরিচালক হবেন।

























