করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেকার বাড়ি বসে না থেকে কৃষিতে মনোনিবেশ করেছেন ইসতিয়াক আহমেদ ইমন। তিনি রাজশাহী ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড সার্ভেয়ারিং ইনস্টিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। ‘ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব্ল্যাকবেবী’ জাতের তরমুজের চাষ করে সাফল্যের মুখ দেখছেন। তার বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামে।
মাচার ওপর সবুজ পাতা ছেয়ে আছে। আর নিচের দিকে ঝুলছে কালো ও সোনালী রঙের ছোট-বড় তরমুজ। গাছ থেকে যেন ছিড়ে না যায় জন্য প্রতিটি তরমুজ নেটের মধ্যে রাখা হয়েছে। এমন দৃশ্য পাকুড়িয়া গ্রামের মাঠে তরমুজের ক্ষেত। ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন (সোনালী) ও ব্ল্যাকবেবী (কালো) জাতের তরমুজ।
জানা গেছে, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হলে বাড়ি চলে আসেন ইমন। এ সময়কে কাজে লাগাতে তিনি বিভিন্ন অনলাইনে সম্ভাবনাময় কৃষি প্রতিবেদনগুলো দেখেন। স্বল্প সময়ে সম্ভাবনাময় নতুন জাতের তরমুজ চাষে উদ্বৃদ্ধ হন। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে ভিয়েতনামের গোল্ডেন ক্রাউন ও ব¬্যাকবেবী বীজ সংগ্রহ করে। বীজ নিয়ে আসার পর বাড়িতে পলিব্যাগে করে চারা তৈরী করেন। এরপর নিজেদের দেড় বিঘাতে জমিতে উর্বর করতে গোবর, পরিমাণ মতো ডিএপি, পটাশ, জিপসাম ও দানাদার সার ব্যবহার করেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষের জন্য ১১টি বেড তৈরী করেন। নির্দিষ্ট দুরুত্বে রোপন করা হয় তরমুজের চারা। এরপর মাচা তৈরী করে দেয়া হয়। রোগ বালাই দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় ফেরোমন ফাঁদ। যেখানে খরচ হয়েছে প্রায় লক্ষাধিক টাকা।
ফেব্রুয়ারি মাসে ১৮ তারিখে চাষাবাদ শুরু হয়। মার্চ মাসের শেষের দিকে গাছে ফুল আসা শুরু করে। এরপর ফল দেখা দেয়। ক্ষেতে প্রায় ২ হাজারের মতো তরমুজ আছে। ইতোমধ্যে পাইকারি ৮০ টাকা কেজি দরে ১০০ পিস বিক্রি করা হয়েছে। গোল্ডেন ক্রাউন এবং ব্ল্যাকবেবী তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
উদ্যোক্তা ইসতিয়াক আহমেদ ইমন বলেন, করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এ সময়কে কাজে লাগাতে কৃষি ওপর মনোনিবেশ করি এবং কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ তৈরী হয়। বিভিন্ন অনলাইনে কৃষি প্রতিবেদন দেখার পর উন্নত জাতের তরমুজ চাষে উদ্বৃদ্ধ হয়। চুয়াডাঙ্গা জেলা থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষাবাদ শুরু করি। বীজ, সিডলিং ট্রে ও মালচিং পেপারসহ আনুষঙ্গিক প্রায় ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে মাচা, শ্রমিক, সার ও কীটনাশকে খরচ করতে হয়েছে। যেখানে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মতো খরচ হয়েছে। বর্তমানে গাছের বয়স প্রায় ৭০ দিন। ইতোমধ্যে বিক্রিও শুরু হয়েছে।
তিনি বলেন, গোল্ডেন ক্রাউন এবং ব্ল্যাকবেবী ফল সুস্বাদু হওয়ায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিকেজি ৮০ টাকা পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুরচা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি। প্রতিপিস তরমুজ প্রায় দেড় থেকে তিন কেজি ওজন হয়ে থাকে। আর কয়েক দিনের মধ্যে সবগুলো পুষ্ট হলে বিক্রি করা হবে। বাজারে দাম মোটামুটি ভাল আছে। ধারনা করা হচ্ছে প্রায় ২লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। তবে কোন ধরণের প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে লাভবান হতো পারবো। প্রথমবার তেমন ধারনা না থাকায় খরচটা একটু বেশি পড়েছে। তবে দ্বিতীয়বার আবাদ করলে খরচের পরিমাণ কিছুটা কমবে। আর এ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগীতা পেয়েছি পার্শ্ববতী বালাইনাশক ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন (চাচা) নিকট থেকে।
ইমনের চাচা আলম হোসেন বলেন, ইমন নিজেই ক্ষেতে পরিচর্চা করে থাকে। ক্ষেতে প্রায় ২ হাজারের মতো তরমুজ আসছে। এর মধ্যে গত কয়েকদিন আগে ১০০ পিস বিক্রি করা হয়েছে। আরো প্রায় ১৯শ পিস আছে। বাজারে দাম ভাল পাওয়া যাচ্ছে। এ ফসলে ছত্রাকের পরিমাণ একটু বেশি। আশপাশে এ ধরনের কোন আবাদ না থাকায় পোকামাড়কের আক্রমনটা বেশি দেখা যাচ্ছে।
বালাইনাশক ব্যবসায়ী দুলাল হোসেন বলেন, বীজ নিয়ে আসার পর আমার কাছ থেকে পরামর্শ নেয় ইমন। একটি গাছের যে অনুখাদ্য প্রয়োজনে সে অনুযায়ী একটি তালিকা প্রস্তুত করে দেয়। এরপর সে অনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহন করে। তরমুজের ফলন দেখে মনে হচ্ছে প্রথমবার চাষেই লাভবান হবে।
মান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, এটা একটা নতুন ফসল। উদ্যোক্তা ইসতিয়াক আহমেদ ইমন নিজের চেষ্টায় চাষ করেছেন। বর্তমানে তরমুজ চাষে কোন বরাদ্দ নাই। তিনি যদি লাভবান হতে পারেন তাহলে আগামীতে সরকারি ভাবে বরাদ্দ চাওয়া হবে। পরবর্তিতে যারা আগ্রহ দেখাবে তখন তাদের উৎসাহ দেয়া হবে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ বিএইচ


























