০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫

পাংশায় দুর্নীতির দায়ে দুই চেয়ারম্যান বরখাস্ত

রাজবাড়ী পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল। গত বছর দরিদ্র মানুষদের করোনাকালীন সহায়তার সরকারি চাল চুরির দায়ে বরখাস্ত হন। তার ভাই ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডল, পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-উপজেলা পরিষদের জায়গা দখল করে নিকট আত্মীয়দের বরাদ্দ দেয়া এবং উপজেলা পরিষদের অর্থ আত্মসাৎ করা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতি সম্প্রতি তিনিও বরখাস্ত হয়েছেন।

জানা যায়, তাদের আরও দুই ভাই রয়েছেন। একজন ওয়াজেদ মন্ডল, তিনি পাংশা পৌরসভার চেয়ারম্যান। আরেক ভাই ইদ্রিস মন্ডল একাধিক মামলার আসামি। এই মন্ডল পরিবার হাইব্রিড আওয়ামী লীগ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে এই মন্ডল ভাইয়েরা।

এক সময়ে তারা ওয়াকার্স পার্টির রাজনীতি করতো। তারও আগে ছিলো চৈনিক পন্থী আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগে এসে হঠাৎ পাংশার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তারা। তাদের প্রভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। একের পর এক খুন হতে থাকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা। খুন হন কৃষক নেতা নাদের মুন্সী। তারা আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করে আহত করে উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। পাংশা আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা পরিবারটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে একের পর এক দুর্নীতির কারণে বরখাস্ত হওয়ার দায় পড়ছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে।

পাংশা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের প্রশ্ন এই পরিবারের অপকর্মের দায় নেবে কে? কারা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে? তাদের ভাষ্য, গায়ে গতরে আওয়ামী লীগ করলেও এদের সম্পর্ক ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাংশার ২৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর খুন ও কয়েকশ নারী ধর্ষনের মুল হোতা বিএনপি নেতা সন্ত্রাসী চাঁদ আলী খানের সঙ্গে।

সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডল লুটপাটের মাধ্যমে শত শত  কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। নিজ নামে ক্রয় করেছেন কয়েকশ কোটি টাকার ভূ-সম্পদ। এই পরিবারের লোকেরা একাধিকবার হামলা করেছে পাংশায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর। এ নিয়ে ঢাকার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন করে সন্ত্রাসীদের বিচার চেয়েছে। তারপরও রহস্যজনকভাবে নীরব থেকেছে রাজবাড়ির পুলিশ প্রশাসন।

এমনকি, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বহিস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ হাসান ওদুদের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের অধিগ্রহণকৃত জমিতে নির্মিত ১০টি দোকান তার আপন ভাই ও ফুপাতো ভাইয়ের নামে বরাদ্দ দেয়া। রাজস্ব তহবিল ব্যবহারেরর নির্দেশনা অনুসরণ না করেই গবীর ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে নিজস্ব লোকের সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।

ট্যাগ :

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

পাংশায় দুর্নীতির দায়ে দুই চেয়ারম্যান বরখাস্ত

প্রকাশিত : ০৮:৫৭:৩৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১

রাজবাড়ী পাংশা উপজেলার যশাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সিদ্দিক মন্ডল। গত বছর দরিদ্র মানুষদের করোনাকালীন সহায়তার সরকারি চাল চুরির দায়ে বরখাস্ত হন। তার ভাই ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডল, পাংশা উপজেলা চেয়ারম্যান তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-উপজেলা পরিষদের জায়গা দখল করে নিকট আত্মীয়দের বরাদ্দ দেয়া এবং উপজেলা পরিষদের অর্থ আত্মসাৎ করা। এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় অতি সম্প্রতি তিনিও বরখাস্ত হয়েছেন।

জানা যায়, তাদের আরও দুই ভাই রয়েছেন। একজন ওয়াজেদ মন্ডল, তিনি পাংশা পৌরসভার চেয়ারম্যান। আরেক ভাই ইদ্রিস মন্ডল একাধিক মামলার আসামি। এই মন্ডল পরিবার হাইব্রিড আওয়ামী লীগ হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছে এই মন্ডল ভাইয়েরা।

এক সময়ে তারা ওয়াকার্স পার্টির রাজনীতি করতো। তারও আগে ছিলো চৈনিক পন্থী আন্ডারগ্রাউন্ড পার্টির সঙ্গে জড়িত। আওয়ামী লীগে এসে হঠাৎ পাংশার রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন তারা। তাদের প্রভাবে কোনঠাসা হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরা। একের পর এক খুন হতে থাকে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতারা। খুন হন কৃষক নেতা নাদের মুন্সী। তারা আওয়ামী লীগের সমাবেশে হামলা করে আহত করে উপজেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে। পাংশা আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতাকর্মীরা পরিবারটির কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে একের পর এক দুর্নীতির কারণে বরখাস্ত হওয়ার দায় পড়ছে আওয়ামী লীগের ঘাড়ে।

পাংশা আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের প্রশ্ন এই পরিবারের অপকর্মের দায় নেবে কে? কারা তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে? তাদের ভাষ্য, গায়ে গতরে আওয়ামী লীগ করলেও এদের সম্পর্ক ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পাংশার ২৭ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর খুন ও কয়েকশ নারী ধর্ষনের মুল হোতা বিএনপি নেতা সন্ত্রাসী চাঁদ আলী খানের সঙ্গে।

সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ মন্ডল লুটপাটের মাধ্যমে শত শত  কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। নিজ নামে ক্রয় করেছেন কয়েকশ কোটি টাকার ভূ-সম্পদ। এই পরিবারের লোকেরা একাধিকবার হামলা করেছে পাংশায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর। এ নিয়ে ঢাকার সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ মানববন্ধন করে সন্ত্রাসীদের বিচার চেয়েছে। তারপরও রহস্যজনকভাবে নীরব থেকেছে রাজবাড়ির পুলিশ প্রশাসন।

এমনকি, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হওয়ার পরও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।

পাংশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বহিস্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পাংশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফরিদ হাসান ওদুদের বিরুদ্ধে উপজেলা পরিষদের অধিগ্রহণকৃত জমিতে নির্মিত ১০টি দোকান তার আপন ভাই ও ফুপাতো ভাইয়ের নামে বরাদ্দ দেয়া। রাজস্ব তহবিল ব্যবহারেরর নির্দেশনা অনুসরণ না করেই গবীর ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের পরিবর্তে নিজস্ব লোকের সন্তানদের বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ার কারণে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ সামছুল হক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।