১০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ১৬৪ মৃত্যু-১২

সীমান্তবর্তী এলাকা কুষ্টিয়া জেলায় দিনের পর দিন করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যু সংখ্যাও বৃদ্ধি পেলেও লকডাউনের বালাই নেই। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন সার্বক্ষনিক লকডাউনের পক্ষে মত দিলেও তা এখনো কোন প্রকার কার্যকর হচ্ছে না। ফলে করোনা আতংকে জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকলেও তা সঠিক ভাবে মানা হচ্ছেনা। শহরের মধ্যে দোকানপাট বন্ধর পাশাপাশি যান চলাচল নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। শহরের অলিগলিতে যানচলাল অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এসব যান চলাচল করছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করছে।
এদিকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শহর ও শহরতলী এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও তাতেও কোন কাজে আসছে না।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬৪ জনের করোনা ধরা পড়েছে। সেই সাথে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২জন। এরা সবাই করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত এরির্পোট লেখা পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং বি বøকের রওশনারা (৭০), দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের জরিনা খাতুন ( ৬৫), মিরপুর পৌরসভার নোয়াপড়িারর সায়রা বানু ( ৭০), কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া শেফালী খাতুন (৫৫), সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের বালিয়াপড়িা গ্রামের আকমল হোসেন(৮৫) কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার রোজিনা খাতুন ( ৪৫), কুমারখালী উপজেলার চাপড়া কামরুজ্জামান ( ২৮) , ভেড়ামারা উপজেলার পূর্ব বামন পাড়ার এলাকার আমিরণ বেগম ( ৬৫), খোকসা উপজেলার নিশ্চিন্তবাড়ীয়া এলাকার রফিক শেখ (৬৫), ও দৌলতপুরের কাউছার বিশ^াস(৮০) , খোকসা উত্তর স্যামপুরের হবিবর খান ( ৬০) ভেড়ামারা সাতবাড়িয়ার রহিমা ( ৫৫)। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটাই এ জেলায় সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিপরিতে ১১৩ জন রোগী ভর্তি আছে। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোন রোগী ভর্তির সুযোাগ নেই। এই পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৩০জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যে সব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
এদিকে জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও প্রশাসনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা চলছে ঢিমেতালে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু মানুষের চলাচল দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। স¤প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। কিন্তু এখানে আরো ৭দিনের কঠোর বিধি নিষেধ চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা গবেষণা করা প্রয়োজন। হু হু করে করোনা সংক্রমন যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনা শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগের ওপরে কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু এখন আক্রাস্তের সংখ্যা ৪০ ভাগের ওপরে উঠে গেছে।
এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভিড় লেগেই আছে। ওয়ার্ডটিতে ১০০টি বেড রয়েছে কিন্তু সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখা হচ্ছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা, স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার জায়গা টুকুও রোগীর শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, এ অবস্থায় করোনা রোগীর ভিড় সামাল দিতে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ

ট্যাগ :

পঞ্চগড়ের তাপমাত্রা নামল ১২ ডিগ্রিতে

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ১৬৪ মৃত্যু-১২

প্রকাশিত : ০৪:২০:১০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুন ২০২১

সীমান্তবর্তী এলাকা কুষ্টিয়া জেলায় দিনের পর দিন করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি মৃত্যু সংখ্যাও বৃদ্ধি পেলেও লকডাউনের বালাই নেই। কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন সার্বক্ষনিক লকডাউনের পক্ষে মত দিলেও তা এখনো কোন প্রকার কার্যকর হচ্ছে না। ফলে করোনা আতংকে জেলা জুড়ে সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসনের কঠোর বিধি নিষেধ থাকলেও তা সঠিক ভাবে মানা হচ্ছেনা। শহরের মধ্যে দোকানপাট বন্ধর পাশাপাশি যান চলাচল নিষেধ থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। শহরের অলিগলিতে যানচলাল অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। পুলিশ প্রশাসনের নজর এড়িয়ে এসব যান চলাচল করছে বলে অনেকে মত প্রকাশ করছে।
এদিকে স্থানীয় জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন শহর ও শহরতলী এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলেও তাতেও কোন কাজে আসছে না।
কুষ্টিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১৬৪ জনের করোনা ধরা পড়েছে। সেই সাথে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ১২জন। এরা সবাই করোনা পজেটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন ছিল। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার রাত এরির্পোট লেখা পর্যন্ত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার হাউজিং বি বøকের রওশনারা (৭০), দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি ইউনিয়নের আব্দুলপুরের জরিনা খাতুন ( ৬৫), মিরপুর পৌরসভার নোয়াপড়িারর সায়রা বানু ( ৭০), কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া শেফালী খাতুন (৫৫), সদর উপজেলার জিয়ারখী ইউনিয়নের বালিয়াপড়িা গ্রামের আকমল হোসেন(৮৫) কুষ্টিয়া শহরের হরিশংকরপুর এলাকার রোজিনা খাতুন ( ৪৫), কুমারখালী উপজেলার চাপড়া কামরুজ্জামান ( ২৮) , ভেড়ামারা উপজেলার পূর্ব বামন পাড়ার এলাকার আমিরণ বেগম ( ৬৫), খোকসা উপজেলার নিশ্চিন্তবাড়ীয়া এলাকার রফিক শেখ (৬৫), ও দৌলতপুরের কাউছার বিশ^াস(৮০) , খোকসা উত্তর স্যামপুরের হবিবর খান ( ৬০) ভেড়ামারা সাতবাড়িয়ার রহিমা ( ৫৫)। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ তাপস কুমার সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এটাই এ জেলায় সর্বোচ্চ মৃত্যু সংখ্যা। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিপরিতে ১১৩ জন রোগী ভর্তি আছে। ওয়ার্ডে নতুন করে আর কোন রোগী ভর্তির সুযোাগ নেই। এই পরিস্থিতিতে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে ৩০জন সাধারণ রোগীকে পাশের মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ডায়াবেটিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
এদিকে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যে সব রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আনা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে।
এদিকে জেলায় করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও প্রশাসনের প্রতিরোধ ব্যবস্থা চলছে ঢিমেতালে। গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে কুষ্টিয়া পৌর এলাকায় সাত দিনের জন্য কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। কিন্তু মানুষের চলাচল দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে এটাই সর্বোচ্চ শনাক্ত। স¤প্রতি কুষ্টিয়া পৌরসভায় সবচেয়ে বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। কিন্তু এখানে আরো ৭দিনের কঠোর বিধি নিষেধ চলছে। এরপরও কেন রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তা গবেষণা করা প্রয়োজন। হু হু করে করোনা সংক্রমন যে হারে বাড়ছে তাতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া বেশ কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের চিকিৎসকরা জানান, করোনা শুরু থেকেই কুষ্টিয়া জেলায় শনাক্তের সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগের ওপরে কখনো অতিক্রম করেনি। কিন্তু এখন আক্রাস্তের সংখ্যা ৪০ ভাগের ওপরে উঠে গেছে।
এদিকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভিড় লেগেই আছে। ওয়ার্ডটিতে ১০০টি বেড রয়েছে কিন্তু সেখানে প্রায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেড না থাকায় রোগীদের বারান্দায় রাখা হচ্ছে। রোগীর ভিড় বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দা, স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার জায়গা টুকুও রোগীর শয্যায় রূপান্তরিত হয়েছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তাপস কুমার সরকার বলেন, এ অবস্থায় করোনা রোগীর ভিড় সামাল দিতে অন্যান্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করাকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ