ডিজিটাল প্লাটফর্মে যাদের গান প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল তাদের মধ্যে অন্যতম সঙ্গীতশিল্পী গগন সাকিব। সম্প্রতি তরুণ এই সঙ্গীতশিল্পী এসেছিলেন আজকের ‘বিজনেস বাংলাদেশ’ কার্যালয়ে। ক্যারিয়ারের সফলতার গল্পের পাশাপাশি ব্যক্তি জীবনের নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেছেন বাবুল হৃদয়
প্রথমে জানতে চাই আপনার নাম গগন সাকিব কেন, এই নামকি আপনার নিজের রাখা, আসল নাম কি?
আমার বাবা মা যে নামটি রেখেছিলেন সে নামটা হচ্ছে নাজিমুস সাকিব। মিডিয়া জগতে আসছি, যখন গান শুরু করি. তখন ইউটিউবে এই নামে সার্চ দিলে একজন হাফেজ সাহেবের নাম পাওয়া যেত ‘নাজিমুস’ । চিন্তা করলাম নামটা বদলানো দরকার। আমার মামা গগন নামে ডাকতো। নাজিমুস সাকিব থেকে সাকিব আর মামার দেয়া গগন নিয়ে হয়ে গেলাম ‘গগন সাকিব’ । ইউটিউবে সার্চ দিয়ে দেখলাম এই নামে কোনো নাম নেই। আমার কোন গান আপলোড করা হলে গগন সাকিব দিয়ে আপলোড করা হয়। এখন সবাই গগন সাকিব দিয়ে সার্চ দিতে দিতে আমি গগন সাকিব হয়ে গেলাম।
গানের জগতে কখন এলেন, গান লিখা ও গাওয়া হয় কখন থেকে?
আমার গান লিখা শুরু হয়েছে ক্লাস নাইন থেকে। তখন ২০১৮ সাল। আমি নাইনে পরি। সে সময় আমার জীবনের একটি দুর্ঘটনা ঘটে। সে সময় থেকে গান লেখার চেষ্টা করি। বারবার চেষ্টা করতে করতে বিরহের গান লিখা দিয়ে আমার গান শুরু। এ জগতে আশার কোন ইচ্ছে ছিল না। বিরহ থেকেই গানে আসা।
বর্তমান ব্যস্ততা কি নিয়ে?
সামনে আমার এইচএসসি পরীক্ষা। এখন পড়া-শুনা নিয়ে ব্যস্ত। বেশকিছু গান প্রন্তুত আছে ইনশাআল্লাহ, পরীক্ষা দিয়ে নতুন গান রেকর্ডে যাবো।
যে বিরহ থেকে গানে আসলেন সেখানে আপনি সফল-
অবশ্যই সফল। যার কারণে গানে এসেছি সে ছাড়াও লাখো লোক আমার গান এখন শোনে।
পরিপূণ্য একটি গান কখন গাইলেন?
পরিপূণ্য বলতে প্রথম আমার যে গানটা রেকর্ড করা হয় ‘প্রেমীকা ’ শিরোনামের গানটা। প্রেমে ব্যর্থ হলে একটি প্রেমিকের কিভাবে সময় কাটে তা তুলে ধরা হয়েছে এই গানটিতে । আমার নিজের লেখা ও সুরে গানটি সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন জামিউল হাসান। এটা আপলোড হয় শামসুল হক চ্যানেলে। গানটি প্রথম দিকে তেমন সাড়া না পেলেও এখন ১০ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে মাত্র দুই বছরে।
এই পর্যস্ত কয়টি গান করেছেন?
এই পর্যস্ত ৩০টির বেশি গান হবে করেছি। নতুন কিছু গান হাতে রয়েছে।
আপনার গানগুলো প্রায় একই পেটার্নের কারণ কি, কোনো রহস্য রয়েছে?
আমার নিজস্ব একটা ধারা বজায় জন্য গানগুলো কিছুটা একই পেটার্নের করছি। প্রত্যেকটা শিল্পীর একটা নিজস্বতা থাকে, গান শুনলেই বুঝা যায় ঐ শিল্পীর গান। আমার গান শুনলেই দর্শক ও শ্রোতারা যেন বুঝতে পারে এটা আমার গান, গগন সাকিবের গান। আমি আমার পেটার্নে আগাতে চাই।
আপনি যে টাইপের গান করেন এভাবেই করবেন, না টাইপ চেঞ্জ করবেন. টাইপটা কতোটা চ্যালেঞ্জিং মনে করেন?
আমার যে টাইপের গানে আমাকে দর্শক চিনতে পেরেছে সেই টাইপটা আপাতত ধরে রাখতে চাই। সময়ের প্রয়োজনে টাইপ বদলাতে হলে বদলাবো। আপাতত বদলাতে চাইনা। ভাইরালের এই যুগে গানে টিকে থাকা খুবই চ্যালেঞ্জজিং। আজকাল সবাই ভাইরালের পেছনে ছুটে। গানে টিকে থাকলে হলে ভালো গান লাগবেই।
আপনার উল্লেখযোগ্য গান সম্পর্কে বলেন-
শেষ গান মার্চে আপলোড করেছি ‘নেশার নৌকা’ ৭৫ মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। এছাড়া উল্লেখযোগ্য গানের মধ্যে রয়েছে- তামাক পাতা, বাবু ঘুমিয়ে গেছে, নেশার পাহাড়, মায়াবতী, বেইমান মাইয়া. কালোটিপ, ভুলছিল, নেশার দেশে. বেইমান প্রেমিকা ইত্যাদি।
গান এখন ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রকাশ হচ্ছে, সুবিধা কেমন পাচ্ছেন?
সুবিধাটা পাচ্ছি হচ্ছে, টিকটক. লাইকি, বিগো এই টাইপের যে সাইড গুলো আছে গান ছড়ায়ে দেওয়ার এগুলো বিশাল একটা মাধ্যম। এখন আমার টিকটকে ১মিলিয়ন ফলোয়ার, প্লাস ভেরিফায়েড। এই যে আমার টিকটকে ১০ লাখ ফলোয়ার আছে , আমি একটা ভিডিও প্রকাশ করলাম নতুন গান প্রকাশ হওয়ার পর, ১৫ সেকেন্ড বা ১ মিনিটের ছোট্ট ভিডিও করা যায়, এরকম একটা ভিডিও করলাম লিখে দিলাম একটা নতুন গান এসেছে, সবাই শুনে আসবেন, লিরিখ দেওয়া আছে। এইটা দিয়ে ছিড়ে দিলাম, ১০ লাখ ভক্তের কাছে চলে গেল নিমিশে। এই সুবিধেটা পাচ্ছি যে, ছড়ায়ে দেওয়ার বিশাল প্লাটফর্ম। এই সুবিধাটা আগে ছিল না। এখন ঘরে বসেই গান প্রমোট করা যায়।
গানে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন কোথাও থেকে?
গানে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নাই। আমার কয়েকজন বড় ভাই আছে তারা হেল্প করেছেন। আর যার কথা না বললেই নয়, তিনি জামিউল হাসান, তিনি আর্থিক ভাবে হোক, মানসিক ভাবে হোক, বিভিন্ন ভাবে হেল্প করেছে, গানের বিভিন্ন ভুল তিনি ধরায়ে দিতেন। আসলে তার সহযোগিতার কারণে আর দর্শকদের ভালোবাসার আজ এ পর্যন্ত এসেছি। আমি আসলে গানের “গ” ও জানিনা। আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে।
আপনার প্রিয় শিল্পী কে?
আমার প্রিয় শিল্পী জুনায়েদ ইভান।
আপনার পরিবার গানকে কিভাবে দেখে?
গান করতে আমার পরিবার কোনো সাহায্য করেনি। নিজের ইচ্ছে এতোটুক এগিয়েছি। গানের জন্য মাঝে পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো ছিল না। এখন বিভিন্ন জায়গায় গান শুনতে শুনতে আগের মতো ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
গান নিয়ে আগামীর ভাবনা কি?
গান নিয়ে আগামীর ভাবনা নিজের একটি স্টুডিও থাকবে, সেই স্টুডিওতে আমি নিজে কম্পোজিশন শিখবো, নিজের কিছু ভাল কাজ করবো , বাইরের যারা আসবে তাদের কাজও করে দেবো। নিজের যে ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল আছে সেটিকে নিয়ে এগিয়ে যাবো। বড় বড় শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করতে চাই।
আপনার জন্ম, পড়াশুনা ও বড় হয়েছেন কোথায়?
আমার গ্রামের বাড়ি হল, নেত্রকোনা মদন থানা, চানগাঁও, রত্নপুর গ্রাম। এখনেই ফাইভ পর্যন্ত পড়েছি, এরপর ঢাকায় তিন বছর, আবার নেত্রকোনা, ময়মনসিং, আসলে নিদিষ্ট কোন জায়গায় নয় বিভিন্ন জায়গায় থেকে বড় হয়েছি। গানের জন্য পড়াশুনায় কিছুটা গ্যাপ হয়েছে। এখন মংমনসিংহে এইচ এসসি পরীক্ষা দেব।
আপনার পরিবারে কে কে আছেন?
আমার পরিবারে রয়েছে, আমার বাবা, আমার মা মারা গেছেন ৬ বছর আগে। ছোট দুই বোন রয়েছে।
বিজনেস বাংলাদেশ/বিএইচ