১০:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫

শেখ হাসিনার হাতে ২১ বছর আগে স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্থর এখন বাংলাদেশের গৌরব

দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনা সব সময়ই নিয়েছেন সাহসী পদক্ষেপ। তার নেওয়া এসব পদক্ষেপের কারণে আজ অবকাঠামোগত উন্নয়নে মেগা প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম সেতু। ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ জুন সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুর ইতিহাসের পুরোটার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতার খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন বলে দাবি করছেন। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। উল্টো বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি ভিডিও ফুটেজে শেখ হাসিনার হাতে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের বিষয়টি স্পষ্ট ওঠে এসেছে।

দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সেতুর অর্থায়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, এই সেতু নির্মাণ আর সম্ভব হবে কি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় দৃঢ়তার কারণে অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে। ২০১২ সালের ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এর চার দিন পর ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দৃঢ়তা প্রকাশ করেন তিনি। এর প্রায় এক দশক পর বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনা যখন শুরু হয়েছে, তখন নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে মাঠের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে যখন সরগরম রাজনীতি, চলছে বাদানুবাদ, তখনই অনিবার্য সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ভিডিও ফুটেজটি। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার প্রথম মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপন করেন তিনি। পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১১ দিন পর, অর্থাৎ ওই বছরের ১৫ জুলাই শেষ হয় তার সরকারের মেয়াদ। পরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। ২০০১ সালের ৪ জুলাই (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৪০৮ বঙ্গাব্দের ২০ আষাঢ়) প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে। ভিত স্থাপন শেষে মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করে, সেখানেও ছাপা হয়েছে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাণী।

২০১৫ সালের মধ্যে এই সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াতের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। তবে দমে যাওয়ার মানুষ নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এতো বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। এতে শুধু বর্হিবিশ্বে প্রশংসারই নয়, দেশের জনমনেও বিরাজ করছে স্বস্তি। এই সেতু নির্মাণ নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের ছিল। আর এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় অর্জন করাও সম্ভব হয়েছে।

পদ্মা সেতু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয় সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের। ক্ষমতায় এসে সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয় দুর্নীতির কথিত অভিযোগসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণে বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে চলে নানা জটিলতা। সরকার সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই শুরু করে এই সেতুর নির্মাণযজ্ঞ।
পদ্মা সেতু নির্মাণে পিছিয়ে পড়ার পেছনে দায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে। অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রধানের পদে থাকতে না পেরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছেন।


বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেই অনুযায়ী ১৯৯৮ থেকে ২০০০ এই সময়ে পূর্ব সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ হয়। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালে জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই নতুন করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। সেই সাথে সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা। ২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। এরপর ওই বছরের ১৮ মে জাইকা (৪০ কোটি ডলার), ২৪ মে আইডিবি (১৪ কোটি ডলার) এবং ৬ জুন এডিবি’র (৬২ কোটি ডলার) সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিপত্তি। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আসে দুর্নীতির অভিযোগ। ঋণচুক্তির পাঁচ মাসের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই বছর (২০১১) সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম আসে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ওপরও। বিশ্বব্যাংকের পথ অনুসরণ করে অন্য দাতা সংস্থাগুলোও। ঋণচুক্তি স্থগিতের সময় ঋণ পুনর্বিবেচনার জন্য দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৪টি শর্ত জুড়ে দেয় বিশ্বব্যাংক। সরকারের তরফ থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে নানা দেন-দরবার চলতে থাকে। চুক্তি বাতিল এড়াতে এ সময় যোগাযোগ সচিবকে সরিয়ে দেওয়াসহ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেয় সরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সন্তোষজনক ব্যবস্থা ছিল না সেগুলো। ফলে, ২০১২ সালের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। একে একে যখন সব দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিল, তখন এই মহা কর্মযজ্ঞ থেকে দমে যাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরিন সামর্থকে তিনি কাজে লাগাতে হয়েছেন মরিয়া। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সে অনুযায়ী কাজ করেছেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি ও প্রবাসীদের পদ্মা সেতু নির্মাণে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে এগিয়েও আসেন। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতুর অর্থ সংগ্রহে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকে দুটি করে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত অনুসারে এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল একাধিকবার ঢাকায় এসে দুদকের সাথে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে নতুন নতুন শর্ত আসতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের সাথে দেন-দরবারের পাশাপাশি সরকার বিকল্প অর্থায়নের প্রচেষ্টা শুরু করে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগের কথাও এ সময় জোরেশোরে আলোচনা হতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সংস্থাটিকে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে আল্টিমেটাম দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করলে সরকার তাদের কাছ থেকে কোনো ঋণ নেবে না। তারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। পরে ৩১ জানুয়ারি সরকার পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাংককে চিঠি দেয়। বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহারের আগে-পরে মালয়েশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ অর্থায়নে আগ্রহ দেখায়। তবে সেগুলো দেশের জন্য সাশ্রয়ী না হওয়ায় সরকার সেদিকে না গিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। পরবর্তী অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথে চুক্তি সই করে সরকার। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কানাডার আদালতে তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। ২০১৭ সালের ১০ ফেবব্রুয়ারি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনরার অশেষ দৃঢ়তা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তাই পদ্মা সেতুর আসল ইতিহাসে ড. মুহম্মদ ইউনূসের মতো ভিলেনদের কথা যেমন লেখা থাকবে, তেমনি শেখ হাসিনার মতো অবিচল নেত্রীর নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। সেখানে খালেদা জিয়া বা অন্য কারো কোনো প্রকার ক্রেডিট নেয়ার কোনো সুযোগই নেই। শুধু পদ্মা সেতুই নয়, শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল স্পর্শে বাস্তব হয়ে ওঠেছে একের পর এক মেগা প্রকল্প। মেট্রোরেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতেও তিনি রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। দেশ এখন পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, স্যাটেলাইট প্রকল্পের মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় সরকার দশটি বৃহৎ প্রকল্পকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এমআরটি), পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প বা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পসহ আরো নানা প্রকল্প। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটা শুরু করেছে, কোনো ষড়যন্ত্রের সামনেই সেটা ব্যাহত হবে না।

 

 

শেখ হাসিনার হাতে ২১ বছর আগে স্থাপিত ভিত্তিপ্রস্থর এখন বাংলাদেশের গৌরব

প্রকাশিত : ১১:০০:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জুন ২০২২

দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনা সব সময়ই নিয়েছেন সাহসী পদক্ষেপ। তার নেওয়া এসব পদক্ষেপের কারণে আজ অবকাঠামোগত উন্নয়নে মেগা প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখতে শুরু করেছে। দুর্নীতিচেষ্টার ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংকের মুখ ফিরিয়ে নেয়া, রাজনৈতিক বাদানুবাদ, গুজব, প্রাকৃতিক প্রতিকূলতাসহ নানা প্রতিবন্ধকতা জয় করে প্রমত্তা পদ্মার বুকে এখন সগর্বে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের দীর্ঘতম সেতু। ভায়াডাক্ট ছাড়া ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে নিজের সক্ষমতা জানান দিয়েছে বাংলাদেশ। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২৫ জুন সেতুটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সেতুর ইতিহাসের পুরোটার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন শেখ হাসিনা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতার খালেদা জিয়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন বলে দাবি করছেন। কিন্তু এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ নেই। উল্টো বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের একটি ভিডিও ফুটেজে শেখ হাসিনার হাতে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপনের বিষয়টি স্পষ্ট ওঠে এসেছে।

দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ এনে বিশ্বব্যাংক সেতুর অর্থায়ন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পর প্রশ্ন উঠেছিল, এই সেতু নির্মাণ আর সম্ভব হবে কি না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনমনীয় দৃঢ়তার কারণে অসম্ভব কাজটি সম্ভব হয়েছে। ২০১২ সালের ৪ জুলাই সংসদে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এর চার দিন পর ৮ জুলাই আবারও সংসদে দাঁড়িয়ে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দৃঢ়তা প্রকাশ করেন তিনি। এর প্রায় এক দশক পর বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের ক্ষণগণনা যখন শুরু হয়েছে, তখন নতুন করে বিতর্ক জন্ম দিয়েছে মাঠের রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করেছেন, পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিয়ে যখন সরগরম রাজনীতি, চলছে বাদানুবাদ, তখনই অনিবার্য সত্য হয়ে ধরা দিয়েছে বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের ভিডিও ফুটেজটি। সেখানে দেখা যায়, ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। প্রথমবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুকন্যা। তার প্রথম মেয়াদের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপন করেন তিনি। পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের ১১ দিন পর, অর্থাৎ ওই বছরের ১৫ জুলাই শেষ হয় তার সরকারের মেয়াদ। পরের জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। ২০০১ সালের ৪ জুলাই (বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৪০৮ বঙ্গাব্দের ২০ আষাঢ়) প্রথমবারের মতো পদ্মা সেতুর ভিত স্থাপনের সময় শেখ হাসিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকসহ আরও অনেকে। ভিত স্থাপন শেষে মাওয়া প্রান্তে এক সুধী সমাবেশেও বক্তব্য দেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উপলক্ষে সেদিন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় যে স্মারকগ্রন্থটি প্রকাশ করে, সেখানেও ছাপা হয়েছে ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বাণী।

২০১৫ সালের মধ্যে এই সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে যাতায়াতের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু কথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংক। তবে দমে যাওয়ার মানুষ নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি পদ্মা সেতু নির্মাণকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। তিনি দেখিয়ে দিলেন সরকারের নিজস্ব উদ্যোগেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এতো বড় অবকাঠামো নির্মাণ করা সম্ভব। এতে শুধু বর্হিবিশ্বে প্রশংসারই নয়, দেশের জনমনেও বিরাজ করছে স্বস্তি। এই সেতু নির্মাণ নিঃসন্দেহে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের ছিল। আর এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতায় অর্জন করাও সম্ভব হয়েছে।

পদ্মা সেতু বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভুক্ত প্রকল্প। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার আগে ‘দিনবদলের সনদ’ নামে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে নির্বাচনী ইশতেহার দেওয়া হয় সেখানে প্রতিশ্রুতি ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের। ক্ষমতায় এসে সেই অনুযায়ী কাজও শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু এরই মধ্যে শুরু হয় দুর্নীতির কথিত অভিযোগসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধকতা। বাংলাদেশের দীর্ঘতম এই সেতু নির্মাণে বিদেশি অর্থায়ন নিয়ে চলে নানা জটিলতা। সরকার সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নিজস্ব অর্থায়নেই শুরু করে এই সেতুর নির্মাণযজ্ঞ।
পদ্মা সেতু নির্মাণে পিছিয়ে পড়ার পেছনে দায়ী দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। শান্তিতে নোবেল জয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময় আলোচনায় এসেছে। অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রধানের পদে থাকতে না পেরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছেন।


বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন। সেই অনুযায়ী ১৯৯৮ থেকে ২০০০ এই সময়ে পূর্ব সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়। এরপর ২০০১ সালে জাপানিদের সহায়তায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ হয়। স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ২০০১ সালের ৪ জুলাই মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করেছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৪ সালে জুলাই মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকার সুপারিশ মেনে মাওয়া-জাজিরার মধ্যে পদ্মাসেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়নে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করে। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার শপথ নিয়েই নতুন করে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ দেখায় বিশ্বব্যাংক। সেই সাথে সহযোগী হতে চায় এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিপি), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) ও জাইকা। ২৯০ কোটি ডলার ব্যয়ে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্বব্যাংকের সাথে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। এরপর ওই বছরের ১৮ মে জাইকা (৪০ কোটি ডলার), ২৪ মে আইডিবি (১৪ কোটি ডলার) এবং ৬ জুন এডিবি’র (৬২ কোটি ডলার) সাথে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর হয়। এরই মধ্যে শুরু হয়ে যায় বিপত্তি। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে আসে দুর্নীতির অভিযোগ। ঋণচুক্তির পাঁচ মাসের মাথায় দুর্নীতির অভিযোগ এনে ওই বছর (২০১১) সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন স্থগিত করে। তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম আসে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার বিষয়ে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের সদস্যদের ওপরও। বিশ্বব্যাংকের পথ অনুসরণ করে অন্য দাতা সংস্থাগুলোও। ঋণচুক্তি স্থগিতের সময় ঋণ পুনর্বিবেচনার জন্য দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ ৪টি শর্ত জুড়ে দেয় বিশ্বব্যাংক। সরকারের তরফ থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারে নানা দেন-দরবার চলতে থাকে। চুক্তি বাতিল এড়াতে এ সময় যোগাযোগ সচিবকে সরিয়ে দেওয়াসহ কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপও নেয় সরকার। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের দৃষ্টিতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সন্তোষজনক ব্যবস্থা ছিল না সেগুলো। ফলে, ২০১২ সালের ২৯ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঋণচুক্তি বাতিল করে দেয় আন্তর্জাতিক এই সংস্থাটি। একে একে যখন সব দাতা সংস্থা মুখ ফিরিয়ে নিল, তখন এই মহা কর্মযজ্ঞ থেকে দমে যাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অভ্যন্তরিন সামর্থকে তিনি কাজে লাগাতে হয়েছেন মরিয়া। তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও সে অনুযায়ী কাজ করেছেন তিনি। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশি ও প্রবাসীদের পদ্মা সেতু নির্মাণে সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেকে এগিয়েও আসেন। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ। পরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতুর অর্থ সংগ্রহে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংকে দুটি করে ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংকের দেওয়া শর্ত অনুসারে এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি দল একাধিকবার ঢাকায় এসে দুদকের সাথে বৈঠক করে। এসব বৈঠকে নতুন নতুন শর্ত আসতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের সাথে দেন-দরবারের পাশাপাশি সরকার বিকল্প অর্থায়নের প্রচেষ্টা শুরু করে। নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগের কথাও এ সময় জোরেশোরে আলোচনা হতে থাকে। বিশ্বব্যাংকের টালবাহানায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি সংস্থাটিকে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে আল্টিমেটাম দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ওই মাসের মধ্যে বিশ্বব্যাংক তাদের অবস্থান স্পষ্ট না করলে সরকার তাদের কাছ থেকে কোনো ঋণ নেবে না। তারা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করবে। পরে ৩১ জানুয়ারি সরকার পদ্মা সেতুর জন্য অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহার করে বিশ্বব্যাংককে চিঠি দেয়। বিশ্বব্যাংকের কাছে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহারের আগে-পরে মালয়েশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ অর্থায়নে আগ্রহ দেখায়। তবে সেগুলো দেশের জন্য সাশ্রয়ী না হওয়ায় সরকার সেদিকে না গিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের কাজ হাতে নেয়। পরবর্তী অর্থবছরের (২০১৩-১৪) বাজেটে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ৬ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৪ সালের ১৮ জুন মূল সেতু নির্মাণে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সাথে চুক্তি সই করে সরকার। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর মূল কাঠামো নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।
পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও কানাডার আদালতে তার কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি বিশ্বব্যাংক। ২০১৭ সালের ১০ ফেবব্রুয়ারি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে কানাডার আদালত জানায়, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের যে অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ বাতিল করেছিল তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনরার অশেষ দৃঢ়তা অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। তাই পদ্মা সেতুর আসল ইতিহাসে ড. মুহম্মদ ইউনূসের মতো ভিলেনদের কথা যেমন লেখা থাকবে, তেমনি শেখ হাসিনার মতো অবিচল নেত্রীর নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে। সেখানে খালেদা জিয়া বা অন্য কারো কোনো প্রকার ক্রেডিট নেয়ার কোনো সুযোগই নেই। শুধু পদ্মা সেতুই নয়, শেখ হাসিনার ম্যাজিক্যাল স্পর্শে বাস্তব হয়ে ওঠেছে একের পর এক মেগা প্রকল্প। মেট্রোরেল, পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতেও তিনি রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। দেশ এখন পারমানবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, স্যাটেলাইট প্রকল্পের মতো সাহসী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে। জনগুরুত্ব বিবেচনায় সরকার দশটি বৃহৎ প্রকল্পকে মেগা প্রজেক্ট হিসেবে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প (এমআরটি), পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প, মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্প বা রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প এবং এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পসহ আরো নানা প্রকল্প। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে উন্নয়নের মহাসড়কে হাঁটা শুরু করেছে, কোনো ষড়যন্ত্রের সামনেই সেটা ব্যাহত হবে না।