১০:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

ওষুধের দাম বাড়তি সরবরাহ কম, মিটফোর্ডে স্টক করার অভিযোগ

বাড়ছে ওষুধের দাম। তবে এমন সময় ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ওষুধ সরবারহও কমেছে। ক্রেতা ও ফার্মেসির বিক্রেতাদের অভিযোগ রাজধানীর সবচেয়ে বড় ওষুধের পাইকারি বাজার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রির জন্য বাজারে ওষুধ না ছেড়ে স্টক করছেন।

রাজধানীর একাধিক ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাসে ওষুধের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর খাবার স্যালাইনের দামও বেড়েছে। গত শনিবার থেকে ৬ টাকা করে প্রতি প্যাকেট বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ আগ থেকেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসএমসির ওরস্যালাইন। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘মা ফার্মেসি’র ফার্মাসিস্ট ফাহাদ হাসান বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্যারাসিটামল। এটির দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। ১০০ এমএল বোতলে যেটি ছিল ৩০ টাকা, সেটি এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাপা ট্যাবলেট যেগুলো ছিল আট টাকা পাতা, সেটি হয়েছে ১২ টাকা। নাপা র‌্যাপিড আট টাকা থেকে হয়েছে ১৩ টাকা। নাপা এক্সটেন্ড আগে ছিল ১৫ টাকা পাতা, এখন ২০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্কয়ার ফার্মার প্রেশারের ওষুধ এনজিলক ছিল ৮০ টাকা পাতা, এখন হয়েছে ১০০ টাকা। পেটের অসুখের অ্যামোডিস ট্যাবলেট ছিল ১২ টাকা পাতা, এখন ১৭ টাকা। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের দামও বেড়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সেফ-৩ ট্যাবলেট (৩০ এমএল) ছিল ১৩৫ টাকা, এখন হয়েছে ১৪৫ টাকা। শুনছি ওষধের দাম আরও বাড়বে। এ কারণে নাকি মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ওষুধ স্টক করে রেখেছে।’

মিটফোর্ডের একজন ওষুধ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘মিটফোর্ডের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রির জন্য বাজারে ওষুধ না ছেড়ে স্টক করছেন। এখন বিষয় হলো দামটা নিয়ন্ত্রণ করা। মালামাল (ওষুধ) ঠিক মতো বাজারে ছাড়া, কোনো স্টক যেন না হয় তদারকি করা দরকার। কিন্তু দেশে প্রায় সময়ই বেশি লাভে বিক্রির আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওষুধ স্টক করে। সরকারের এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা উচিত।’

‘মিটফোর্ডে কোটি কোটি টাকার মাল (ওষুধ) স্টক করা হয়’ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ধরেন ১০০ টাকার ওষুধ যদি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করা যায়, তাহলে তাদের কোটি কোটি টাকা মুনাফা হয়। এর প্রভাব শেষ পর্যায়ে এসে ভোক্তাদের উপর পরে।’

রাজধানীর জিগাতলা এলাকার ‘মমতা ফার্মেসি’র স্বত্বাধিকারী জয়লান আহমেদবিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘ওষুধের দাম তো আসলে থেমে নেই। গত মাসে (জুলাই) ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বেশি দাম বেড়েছে জনপ্রিয় স্কয়ার আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের। এছাড়া এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও কিছু কোম্পানির ওষুধের দামও বেড়েছে। দেখা গেছে, যে ওষুধগুলো মানুষের বেশি প্রয়োজন, সেগুলোরই দাম বাড়ানো হয়েছে। শুনছি আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দাম আরো বাড়বে।’

রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা সৈয়দ আনোয়ারা খাতুন বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিকস, প্রেসারসহ নানান সমস্যা। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। আমার প্রায় ওষুধের মূল্য দ্বিগুণের কাছাকাছি। ফলে ছেলেদের ওষুধ কিনে দিতে সমস্যা হচ্ছে।’

হাজারীবাগের একজন পোশাকশ্রমিক বিজনেস বিাংলাদেশকেবলেন, ‘আমার বৃদ্ধ মা সঙ্গে থাকেন। তার নিয়মিত ওষুধ লাগে। আমি মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। ঘর ভাড়া, খাবার খরচ দিয়ে এই বেতনে চলতে অনেক কষ্ট হয়। মায়ের ওষুধও এখন নিয়মিত কিনে দিতে পারি না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা।’

ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলে মনে করেন এই পোশাকশ্রমিক।
সামগ্রিক বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘ওষুধের দাম আচমকা বাড়ানো হচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। কাঁচামালের দাম বাড়াসহ অনেকগুলো কারণে বাজারে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো কিছু কিছু ওষুধ উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। সব কিছু পর্যালোচনা করেই ওষুধ প্রশাসনের দাম নিয়ন্ত্রণ কমিটির পরামর্শক্রমে গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্যনির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন দেওয়া হয়।’

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব

জনপ্রিয়

ভবিষ্যতে আরও কঠোর হবে এনসিপির প্রতিবাদপ্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ অন্তর্বর্তী সরকার: মাহবুব আলম

ওষুধের দাম বাড়তি সরবরাহ কম, মিটফোর্ডে স্টক করার অভিযোগ

প্রকাশিত : ০৩:৪৫:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ অগাস্ট ২০২২

বাড়ছে ওষুধের দাম। তবে এমন সময় ওষুধের দাম বাড়ানো হচ্ছে, যখন ভোজ্য ও জ্বালানি তেল, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। ওষুধের মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাজারে ওষুধ সরবারহও কমেছে। ক্রেতা ও ফার্মেসির বিক্রেতাদের অভিযোগ রাজধানীর সবচেয়ে বড় ওষুধের পাইকারি বাজার মিটফোর্ডে ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রির জন্য বাজারে ওষুধ না ছেড়ে স্টক করছেন।

রাজধানীর একাধিক ফার্মেসির বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাসে ওষুধের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পর খাবার স্যালাইনের দামও বেড়েছে। গত শনিবার থেকে ৬ টাকা করে প্রতি প্যাকেট বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও এক সপ্তাহ আগ থেকেই বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসএমসির ওরস্যালাইন। এ ছাড়া গ্যাস্ট্রিক, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপসহ প্রায় সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে।

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ‘মা ফার্মেসি’র ফার্মাসিস্ট ফাহাদ হাসান বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘সর্দি-জ্বরসহ বিভিন্ন রোগে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্যারাসিটামল। এটির দাম ২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৫ টাকা। ১০০ এমএল বোতলে যেটি ছিল ৩০ টাকা, সেটি এখন ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাপা ট্যাবলেট যেগুলো ছিল আট টাকা পাতা, সেটি হয়েছে ১২ টাকা। নাপা র‌্যাপিড আট টাকা থেকে হয়েছে ১৩ টাকা। নাপা এক্সটেন্ড আগে ছিল ১৫ টাকা পাতা, এখন ২০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘স্কয়ার ফার্মার প্রেশারের ওষুধ এনজিলক ছিল ৮০ টাকা পাতা, এখন হয়েছে ১০০ টাকা। পেটের অসুখের অ্যামোডিস ট্যাবলেট ছিল ১২ টাকা পাতা, এখন ১৭ টাকা। কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের দামও বেড়েছে। স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সেফ-৩ ট্যাবলেট (৩০ এমএল) ছিল ১৩৫ টাকা, এখন হয়েছে ১৪৫ টাকা। শুনছি ওষধের দাম আরও বাড়বে। এ কারণে নাকি মিটফোর্ডের ব্যবসায়ীরা প্রয়োজনীয় ওষুধ স্টক করে রেখেছে।’

মিটফোর্ডের একজন ওষুধ বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘মিটফোর্ডের বড় বড় ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে বিক্রির জন্য বাজারে ওষুধ না ছেড়ে স্টক করছেন। এখন বিষয় হলো দামটা নিয়ন্ত্রণ করা। মালামাল (ওষুধ) ঠিক মতো বাজারে ছাড়া, কোনো স্টক যেন না হয় তদারকি করা দরকার। কিন্তু দেশে প্রায় সময়ই বেশি লাভে বিক্রির আশায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ওষুধ স্টক করে। সরকারের এ জন্য অভিযান পরিচালনা করা উচিত।’

‘মিটফোর্ডে কোটি কোটি টাকার মাল (ওষুধ) স্টক করা হয়’ উল্লেখ করে এই ব্যবসায়ী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘ধরেন ১০০ টাকার ওষুধ যদি ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি করা যায়, তাহলে তাদের কোটি কোটি টাকা মুনাফা হয়। এর প্রভাব শেষ পর্যায়ে এসে ভোক্তাদের উপর পরে।’

রাজধানীর জিগাতলা এলাকার ‘মমতা ফার্মেসি’র স্বত্বাধিকারী জয়লান আহমেদবিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘ওষুধের দাম তো আসলে থেমে নেই। গত মাসে (জুলাই) ৫৩টি ওষুধের দাম বাড়িয়েছে সরকার। বেশি দাম বেড়েছে জনপ্রিয় স্কয়ার আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের। এছাড়া এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসসহ আরও কিছু কোম্পানির ওষুধের দামও বেড়েছে। দেখা গেছে, যে ওষুধগুলো মানুষের বেশি প্রয়োজন, সেগুলোরই দাম বাড়ানো হয়েছে। শুনছি আগামী এক-দুই মাসের মধ্যে দাম আরো বাড়বে।’

রাজধানীর ধানমন্ডির বাসিন্দা সৈয়দ আনোয়ারা খাতুন বিজনেস বিাংলাদেশকে বলেন, ‘আমার ডায়াবেটিকস, প্রেসারসহ নানান সমস্যা। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। আমার প্রায় ওষুধের মূল্য দ্বিগুণের কাছাকাছি। ফলে ছেলেদের ওষুধ কিনে দিতে সমস্যা হচ্ছে।’

হাজারীবাগের একজন পোশাকশ্রমিক বিজনেস বিাংলাদেশকেবলেন, ‘আমার বৃদ্ধ মা সঙ্গে থাকেন। তার নিয়মিত ওষুধ লাগে। আমি মাসে ৯ হাজার টাকা বেতন পাই। ঘর ভাড়া, খাবার খরচ দিয়ে এই বেতনে চলতে অনেক কষ্ট হয়। মায়ের ওষুধও এখন নিয়মিত কিনে দিতে পারি না। আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য এটা অনেক বড় সমস্যা।’

ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য মরার উপর খাঁড়ার ঘা বলে মনে করেন এই পোশাকশ্রমিক।
সামগ্রিক বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, ‘ওষুধের দাম আচমকা বাড়ানো হচ্ছে, বিষয়টা এমন নয়। কাঁচামালের দাম বাড়াসহ অনেকগুলো কারণে বাজারে ওষুধের স্বল্পতা দেখা দিয়েছে। দেশীয় কোম্পানিগুলো কিছু কিছু ওষুধ উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। সব কিছু পর্যালোচনা করেই ওষুধ প্রশাসনের দাম নিয়ন্ত্রণ কমিটির পরামর্শক্রমে গত ৩০ জুন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত ওষুধের মূল্যনির্ধারণ কমিটির ৫৮তম সভায় ওষুধের পুনর্নির্ধারিত দাম অনুমোদন দেওয়া হয়।’

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব