০৪:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কারাদন্ডপ্রাপ্ত চরমপন্থী র‍্যাব-৩ এর জালে আটক সাইফুল

স্বাধীনতা পূর্বাপর সময়ে একসময় চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। থানাফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র লুট এবং পুলিশ হত্যা ছিল তাদের অন্যতম ব্রত। সরকারী খাদ্য গুদাম লুট, সেতু কালবার্টভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করা এবং অগ্নিসংযোগ করাই ছিলো তাদের মূল উদ্দ্যোশ্য।র‍্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে অনেকচরমপন্থী এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

১৯৮৭ সালে ২৪ ফেব্রয়ারী মঙ্গলবার হাটের দিন সকাল ১১.ঘটিকার দিকে একদল চরমপন্থী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিতঅবস্থায় হাতে পোটলা নিয়ে হাটের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। উক্ত পোটলার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র লুকায়িত ছিল।তাদের মধ্যে কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয় এবং কয়েকজনথানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময়ে থানায় প্রহরারত কনস্টেবলহাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে ০২ টিএসএমজি, ০৪ টি এসএলআর, ১৮ টি ৩.৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী আসামীকেছিনিয়ে নিয়ে যায়।তারপর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়।তারপর তারা লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে তাঁচকৈর হয়ে পূর্বদিকে গারিসাপাড়া হয়ে ধামাইর মাঠের দিকে চলে যায়।

উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইন ১৯০৮ মামলা রুজুকরা হয়। উক্ত মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামি গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরজবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৪৯ জনকে আসামি করে গুরুদাসপুর থানার চার্জশীট দেন।বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে উক্ত মামলার রায় ঘোষনা করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে উক্ত মামলার একজন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিনারায়ণগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তারপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা নজরদারীর মাধমে ০৯সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকা হতে ছাত্তার নামে ছদ্মবেশেআত্মগোপন করা অবস্থায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম মানিক (৫৬)পাবনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষমহয়।

চরমপন্থী সাইফুল জানান,সে ১৯৮৪ সালে চরমপন্থী নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি লাল পতাকা সর্বহারাদলে যোগ দেয়।তাদের এরূপ আকর্ষনীয় কথায় মুগ্ধ হয়ে সে সক্রিয়ভাবে চরমপন্থীদের হত্যা, লুটপাট, ত্রাস সৃষ্টি, অরাজকপরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকে। চরমপন্থীদের সাথে যোগ দেওয়ায় এলাকায় সকলে তাকে সমীহ করত। যাদেরসাথে তার বিরোধীতা ছিল চরমপন্থীদের আশ্রয়ে থাকায় সকলে তার সাথে আপোষে মিমাংসা করে নেয়।

১২ নরহত্যা মামলার পর তারেকসহ চরমপন্থী দলের সদস্যরা চাটমোহর হতে আত্মগোপন করে সিরাজগঞ্জে আশ্রয় নেয়।১৯৮৯সালের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে তারেকেরসাথে যোগাযোগ করে চরমপন্থী দলের সাথে পুনরায় হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি, অস্ত্র নিয়েএলাকায় মহড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ মিমাংসা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত ছিল।

দুপুরে কাওরানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেলআরিফ মহিউদ্দিন,আরো জানান,ইতোমধ্যে সে এনআইডি পরিবর্তন করে রূপগঞ্জ এলাকার ভোটার হিসেবে নিজেকে ছাত্তারনামে প্রতিষ্ঠিত করে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমানে উক্ত ঘটনায় জড়িত চরমপন্থী দলের সদস্যদেরসাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। তারেকের মৃত্যুর পর উক্ত গ্রুপের সদস্যরা বিছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উক্তঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর সদস্যদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।গ্রেফতারকৃত আসামীকে চাটমোহর, পাবনা থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ফারজানা হক সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র‍্যাব-৩।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব

 

জনপ্রিয়

একজন ব্যবসায়ী বান্ধব নেতা ওয়াহিদুল হাসান দিপু

কারাদন্ডপ্রাপ্ত চরমপন্থী র‍্যাব-৩ এর জালে আটক সাইফুল

প্রকাশিত : ০৫:৪৯:০৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২২

স্বাধীনতা পূর্বাপর সময়ে একসময় চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল। থানাফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে অস্ত্রশস্ত্র লুট এবং পুলিশ হত্যা ছিল তাদের অন্যতম ব্রত। সরকারী খাদ্য গুদাম লুট, সেতু কালবার্টভেঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল করা এবং অগ্নিসংযোগ করাই ছিলো তাদের মূল উদ্দ্যোশ্য।র‍্যাবের সাঁড়াশি অভিযানে অনেকচরমপন্থী এলাকা ছেড়ে রাজধানীতে এসে আশ্রয় নিয়েছে।

১৯৮৭ সালে ২৪ ফেব্রয়ারী মঙ্গলবার হাটের দিন সকাল ১১.ঘটিকার দিকে একদল চরমপন্থী ছদ্মবেশে লুঙ্গি, গামছা পরিহিতঅবস্থায় হাতে পোটলা নিয়ে হাটের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। উক্ত পোটলার মধ্যে তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র লুকায়িত ছিল।তাদের মধ্যে কিছু লোক অস্ত্র প্রদর্শন করে টেলিফোন অফিস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেন্ট্রাল কমান্ড বিকল করে দেয় এবং কয়েকজনথানায় জিডি করার উদ্দেশ্যে থানায় প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে থানা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এসময়ে থানায় প্রহরারত কনস্টেবলহাবিবুর রহমান বাধা দিলে চরমপন্থীরা তাকে গুলি করে হত্যা করে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে থানার অস্ত্রাগার লুট করে ০২ টিএসএমজি, ০৪ টি এসএলআর, ১৮ টি ৩.৩ রাইফেল ও গোলাবারুদ লুট করে থানার লকআপে বন্দি চরমপন্থী আসামীকেছিনিয়ে নিয়ে যায়।তারপর আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য তারা একযোগে টেলিফোন অফিস ও থানা কম্পাউন্ডে বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়।তারপর তারা লুন্ঠিত মালামাল নিয়ে তাঁচকৈর হয়ে পূর্বদিকে গারিসাপাড়া হয়ে ধামাইর মাঠের দিকে চলে যায়।

উক্ত ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানায় বিষ্ফোরকদ্রব্য আইন ১৯০৮ মামলা রুজুকরা হয়। উক্ত মামলার তদন্ত শেষে সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০ জন আসামি গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারকৃত আসামিদেরজবানবন্দি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ভিত্তিতে ৪৯ জনকে আসামি করে গুরুদাসপুর থানার চার্জশীট দেন।বিচারপ্রক্রিয়া শেষে ২০০৭ সালে উক্ত মামলার রায় ঘোষনা করা হয়।

র‍্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারে উক্ত মামলার একজন যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামিনারায়ণগঞ্জ এলাকায় আত্মগোপন করে আছে। তারপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং গোয়েন্দা নজরদারীর মাধমে ০৯সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখ রাতে অভিযান পরিচালনা করে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ এলাকা হতে ছাত্তার নামে ছদ্মবেশেআত্মগোপন করা অবস্থায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডপ্রাপ্ত আসামি সাইফুল ইসলাম মানিক (৫৬)পাবনাকে গ্রেফতার করতে সক্ষমহয়।

চরমপন্থী সাইফুল জানান,সে ১৯৮৪ সালে চরমপন্থী নেতা তারেকের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা কমিউনিষ্ট পার্টি লাল পতাকা সর্বহারাদলে যোগ দেয়।তাদের এরূপ আকর্ষনীয় কথায় মুগ্ধ হয়ে সে সক্রিয়ভাবে চরমপন্থীদের হত্যা, লুটপাট, ত্রাস সৃষ্টি, অরাজকপরিস্থিতি সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণ করতে থাকে। চরমপন্থীদের সাথে যোগ দেওয়ায় এলাকায় সকলে তাকে সমীহ করত। যাদেরসাথে তার বিরোধীতা ছিল চরমপন্থীদের আশ্রয়ে থাকায় সকলে তার সাথে আপোষে মিমাংসা করে নেয়।

১২ নরহত্যা মামলার পর তারেকসহ চরমপন্থী দলের সদস্যরা চাটমোহর হতে আত্মগোপন করে সিরাজগঞ্জে আশ্রয় নেয়।১৯৮৯সালের নভেম্বর মাসে তার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে গেলে সে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধৃত হয়। জামিনে মুক্ত হয়ে সে তারেকেরসাথে যোগাযোগ করে চরমপন্থী দলের সাথে পুনরায় হত্যা, লুটপাট, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, অস্ত্র প্রদর্শন করে ত্রাস সৃষ্টি, অস্ত্র নিয়েএলাকায় মহড়া দেওয়া, অর্থের বিনিময়ে জমি দখল, পারিবারিক বিরোধ মিমাংসা ইত্যাদি কাজে লিপ্ত ছিল।

দুপুরে কাওরানবাজার র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেলআরিফ মহিউদ্দিন,আরো জানান,ইতোমধ্যে সে এনআইডি পরিবর্তন করে রূপগঞ্জ এলাকার ভোটার হিসেবে নিজেকে ছাত্তারনামে প্রতিষ্ঠিত করে নিজের স্ত্রী সন্তান নিয়ে বসবাস করতে শুরু করে। বর্তমানে উক্ত ঘটনায় জড়িত চরমপন্থী দলের সদস্যদেরসাথে তার কোন যোগাযোগ নেই। তারেকের মৃত্যুর পর উক্ত গ্রুপের সদস্যরা বিছিন্নভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উক্তঘটনার সাথে জড়িত অপরাপর সদস্যদের সনাক্ত করে গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।গ্রেফতারকৃত আসামীকে চাটমোহর, পাবনা থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানান ফারজানা হক সহকারী পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) র‍্যাব-৩।

বিজনেস বাংলাদেশ/হাবিব