০৪:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বরিশালের পাটচাষিরা

বরিশালের মুলাদীতে পাট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে পাট চাষিরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পাট বিক্রি করে চাষিদের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। পাট ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করায় নিতান্তই কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সোনালি ফসল পাটচাষ করে এখন তারা হতাশ। পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে গেছে তাদের পাটচাষে।

অন্য দিকে পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা দাম কমিয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে তাদের। চলতি মৌসুমের শুরুতে পাট ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ পাট দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে কিনেছিলেন। হঠাৎ করে দাম কমিয়ে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে দাম নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় পাট কিছুটা ভিজা থাকাসহ নানা টালবাহানায় দাম কমিয়ে দেন তারা।

জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ সব জমিতে ফলনও ভালো ছিল। পাটের কাক্সিক্ষত দাম নিয়ে কৃষকদের মনে আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ছিল। এরপরও দো-ফসলি জমিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই পাটচাষ করেছেন তারা। মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গারমোনা গ্রামের কৃষক মো: রিয়াজুর কবির বলেন, আমন ধান ওঠানোর পর প্রায় এক একর জমিতে পাটচাষ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জমির পাটচাষের হিসাব করে দেখেন- বীজ কেনা, জমি চাষ, সার প্রয়োগ এবং পাট কাটা ও ধোয়ার পর মোট মজুরি বাবদ প্রায় চার হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। ওই ২০ শতাংশ জমির পাট বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ৭৫০ এবং পাটখড়ি বিক্রি করে পেয়েছেন ৪৮০ টাকা। চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের আরেক কৃষক বাবুল ব্যাপারী বলেন, ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে কম দামে পাট কিনছেন। তাদের কাছে কৃষকরা এখন অসহায়।

মুলাদী পৌরসভার চরডিক্রি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, গত বছর পাইকারদের কাছে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে পাট কিনেছিলাম। কিন্তু এবার শেষ মুহূর্তে এসে তারা পাটের দাম কমিয়ে দেন। এ ব্যাপারে খাসেরহাট বন্দরের পাট ব্যবসায়ী সোহেল ফকির বলেন, পাটের দাম মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করে। মিলমালিকেরা দাম কমিয়ে দিলে বাধ্য হয়েই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনবেন না। মুলাদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ করেছেন কৃষকেরা। এ বছর পাটচাষের জমি বেড়ে ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর হয়েছে। তবে পাটের দাম নির্ধারণের বিষয়টি ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করে। তিনি আরো জানান, পাট খাতে সরকারি কোনো সহযোগিতা কিংবা ভর্তুকি দেয়া হয় না। কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষকদের চাষাবাদ ও ভালো ফলন পেতে পরামর্শ দেয়া হয়। যদি সরকারিভাবে পাটচাষিদের সহযোগিতা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং অর্থবরাদ্দ দেয়া হতো, তা হলে তালিকা করে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব

জনপ্রিয়

ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না বরিশালের পাটচাষিরা

প্রকাশিত : ০২:৫৬:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২

বরিশালের মুলাদীতে পাট ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে পাট চাষিরা অসহায় হয়ে পড়েছেন। পাট বিক্রি করে চাষিদের লাভ তো দূরের কথা উৎপাদন খরচও উঠছে না। পাট ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো দাম নির্ধারণ করায় নিতান্তই কম দামে পাট বিক্রি করতে হচ্ছে চাষিদের। ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় সোনালি ফসল পাটচাষ করে এখন তারা হতাশ। পাটচাষে আগ্রহ হারিয়ে গেছে তাদের পাটচাষে।

অন্য দিকে পাট ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা দাম কমিয়ে দেয়ায় বাধ্য হয়ে কম দামে পাট কিনতে হচ্ছে তাদের। চলতি মৌসুমের শুরুতে পাট ব্যবসায়ীরা প্রতি মণ পাট দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকা দরে কিনেছিলেন। হঠাৎ করে দাম কমিয়ে এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা দরে দাম নির্ধারণ করা হয়। বৃষ্টি কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় পাট কিছুটা ভিজা থাকাসহ নানা টালবাহানায় দাম কমিয়ে দেন তারা।

জানা গেছে, এ বছর উপজেলায় ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এ সব জমিতে ফলনও ভালো ছিল। পাটের কাক্সিক্ষত দাম নিয়ে কৃষকদের মনে আগে থেকেই দুশ্চিন্তা ছিল। এরপরও দো-ফসলি জমিতে অনেকটা বাধ্য হয়েই পাটচাষ করেছেন তারা। মুলাদী সদর ইউনিয়নের ভাঙ্গারমোনা গ্রামের কৃষক মো: রিয়াজুর কবির বলেন, আমন ধান ওঠানোর পর প্রায় এক একর জমিতে পাটচাষ করেছেন তিনি। এর মধ্যে ২০ শতাংশ জমির পাটচাষের হিসাব করে দেখেন- বীজ কেনা, জমি চাষ, সার প্রয়োগ এবং পাট কাটা ও ধোয়ার পর মোট মজুরি বাবদ প্রায় চার হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়েছে। ওই ২০ শতাংশ জমির পাট বিক্রি করে তিনি পেয়েছেন তিন হাজার ৭৫০ এবং পাটখড়ি বিক্রি করে পেয়েছেন ৪৮০ টাকা। চরলক্ষ্মীপুর গ্রামের আরেক কৃষক বাবুল ব্যাপারী বলেন, ব্যবসায়ীরা জোটবদ্ধ হয়ে কম দামে পাট কিনছেন। তাদের কাছে কৃষকরা এখন অসহায়।

মুলাদী পৌরসভার চরডিক্রি গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, গত বছর পাইকারদের কাছে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকদের কাছ থেকে তিন হাজার থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দরে পাট কিনেছিলাম। কিন্তু এবার শেষ মুহূর্তে এসে তারা পাটের দাম কমিয়ে দেন। এ ব্যাপারে খাসেরহাট বন্দরের পাট ব্যবসায়ী সোহেল ফকির বলেন, পাটের দাম মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করে। মিলমালিকেরা দাম কমিয়ে দিলে বাধ্য হয়েই কৃষকদের কাছ থেকে কম দামে পাট কিনতে হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা লোকসান দিয়ে তো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনবেন না। মুলাদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, গত বছর পাঁচ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পাটচাষ করেছেন কৃষকেরা। এ বছর পাটচাষের জমি বেড়ে ছয় হাজার ৪৫০ হেক্টর হয়েছে। তবে পাটের দাম নির্ধারণের বিষয়টি ব্যবসায়ী ও মিলমালিকদের ওপর নির্ভর করে। তিনি আরো জানান, পাট খাতে সরকারি কোনো সহযোগিতা কিংবা ভর্তুকি দেয়া হয় না। কৃষি কার্যালয় থেকে কৃষকদের চাষাবাদ ও ভালো ফলন পেতে পরামর্শ দেয়া হয়। যদি সরকারিভাবে পাটচাষিদের সহযোগিতা করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত এবং অর্থবরাদ্দ দেয়া হতো, তা হলে তালিকা করে কৃষকদের প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো।

বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব