মহেশখালীতে পরিবেশ বান্ধব ও বজ্র প্রতিরোধক তাল গাছ বিলুপ্তির পথে। তাল গাছের পাতার সঙ্গে সুপরিচিত বাবুই পাখির তৈরি ঝুলানো বাসা (আশ্রয়স্থল) সবার পরিচিত। আজকাল হাজার হাজার পাখির কিচির-মিচির ডাক আর মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে না। ছোট বেলায় একটা কবিতা পড়তাম- ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐখানেতে বাস করে কানাবগীর ছা। কিংবা- তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে- বইয়ের পাতায় কবিতা থাকলেও বাস্তবে আজ কোন মিল নেই। মহেশখালীতে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ বান্ধব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা কারী তাল গাছ।
বর্তমান সরকার তাল গাছ রোপণের উপর জোর দিলেও এক শ্রেণির মানুষ কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে। নানা কারণ দেখিয়ে রাস্তার পাশের ও ব্যক্তি মালিকানাধীন তাল গাছ কেটে বিভিন্ন করাতকলে বিক্রি করছে। এ কারণে ঝড়, বৃষ্টি ও বিজলী (বিদ্যুৎস্পৃষ্টের) হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না মানুষ, পশু-পাখি সহ জীব বৈচিত্র। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে জানা যায়, ১৪-১৫ বছর আগেও গ্রামের রাস্তা -ঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিবদ্ধ ভাবে তালগাছ ছিল। আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরুতে করতো। তখন কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচির-মিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।
তবে মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী,হোয়ানক, শাপলাপুর, কুতুবজোম,কালারমারছড়া, মাতারবাড়ী, সোনাদিয়া সহ নদী ও পাকা সড়কের পাশে কয়েকটি তালগাছ ও তালগাছে অর্ধশত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা দেখা গেছে। যা একনজর দেখতে পথচারী ও শিক্ষার্থীরা একটু হলেও থমকে দাঁড়ায়। উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের মাষ্টার অশোক দাশ জানান, তিনি একটি ঘর তৈরি করছেন, কিন্তু ঘরের তীর দেওয়ার জন্য পরিপক্ষ তালগাছ মিলছে না। হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন এক স-মিল থেকে আরেক স-মিল, এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রাম । যদিও কাজের উপযোগী ২/১টি গাছ মিলছে, তার দাম আকাশ ছোঁয়া।
মাতারবাড়ীর কবির আহমেদ জানান, ২০-২৫ বছর আগে এসব এলাকায় তাল গাছের কদর ছিলো বেশি। আমাদের এলাকায় তালের নৌকা তৈরি হতো। এখন আগের মতো বড় বড় তালগাছ পাওয়া যায় না। বর্তমানে মানুষজন তাল গাছ কেটে ফেলে। কিন্তু নতুন করে কেউ আর রোপণ করে না। মহেশখালী উপজেলা শ্রমিকলীগের যুগ্ম আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, এ গাছ রোপণ করলে তাতে বেশি জমি দখল করে না তাই জমিও নষ্ট হয় না। কোনো সার ওষুধ ব্যবহার করতে হয় না। কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না।
রোপণ করার ১০ থেকে ১৫ বছর পরে তাল গাছে ফল ধরে। তবে কৃষকরা দাবি করেন এ বিষয়ে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা এবং তদারকি থাকলে হয়তো গাছগুলো একটু বেশি করে রোপণ করা হতো। মহেশখালী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, যেভাবে তাল গাছ কাটা হচ্ছে, সেভাবে তালগাছ রোপণ করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তন ও জনবসতি বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে বড়বড় গাছপালাসহ জঙ্গল কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাবুই পাখি নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। এ গাছ রোপনের ব্যাপারে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করি।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব