সরকারীভাবে নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আশ্রিতদের সন্তানের লেখা-পড়ার জন্য চালু করা হলো এক বিশেষ পাঠশালা। কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ বাধ এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পে আশ্রিত শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ কল্পে বিশেষ এ পাঠশালাটি চালু করা হয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে।
জানাগেছে, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২এর আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহ নির্মান প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় মোট ৬৫০জন গৃহহীনকে জমিসহ ঘর প্রদান করা হয়। এর মধ্যে উপজেলার রমনা ইউনিয়নের জোড়গাছ বাধ এলাকায় ওই প্রকল্পের ১৫টি ঘরে ১৫জন ভূমিহীন বাস করেন। সেখানে আশ্রিতদের সন্তানরা স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ে লেখা-পড়া করলেও অভিভাবক সচেতন না হওয়ায় প্রতিনিয়ত ঝরে পড়ছে তারা। এদের ঝরে পড়া রোধ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.মাহবুবুর রহমানের উদ্যোগে বৈকালিক বিশেষ পাঠশালা চালু করা হয়।
আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রিত ২৩জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে পাঠশালা চালু করেন কেন্দ্রে আশ্রিত মাষ্টার্স পড়ুয়া ছাত্রী শাহানাজ পারভীন। পরবর্তীতে পাশ্ববর্তী আরও প্রায় ৩০জন দরিদ্র শিক্ষার্থী ছুটে আসে ওই পাঠশালায়। উৎসাহ বাড়াতে এসব শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রকার শিক্ষা উপকরণও প্রদান করা হয়। প্রমম শ্রেনী থেকে নবম শ্রেনী পর্যন্ত ৫০জনের উপরে শিক্ষার্থীকে দুটি গ্রুপে ভাগ করে পাঠদান করাচ্ছেন শাহানাজ পারভীন।
জোড়গাছ বাধ এলাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশাপাশি তিনটি ঘরের বারান্দার মেঝেতে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন শাহানাজ পারভীন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে গড়ে উঠা বৈকালিক ওই বিশেষ পাঠশালায় আসা ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সিনহা উমাইয়া নদী, সাবিনা ইয়াছমিন,৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কৃষ্ণা রাণী,৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী লাবনী আক্তার লিমা,সুইটি আক্তার,মনিকা রানী,পপি রাণীসহ অনেকে জানায়,তারা তাদের স্ব-স্ব বিদ্যালয়ের শ্রেণী পাঠের বাড়ীর কাজ করতে পারতো না।স্কুলের পড়া না হলে স্কুলে যেতেও ভয় করতো তাদের।বর্তমানে এই পাঠশালায় এসে স্কুলের দেয়া বাড়ীর কাজ(পড়া) তাদের জন্য সহজ হয়েছে বলে জানায় তারা।
শিক্ষার্থী আলিফ মিয়ার মা আফরোজা বেগম ও জান্নাতী বেগমের দাদী মমেনা বেওয়া জানান,সন্তানদের প্রাইভেট দেয়ার সামর্থ না থাকায় তারা প্রায়ই স্কুলে যেত না। বর্তমানে শাহানাজ পারভীনের ফ্রি পাঠশালায় এসে তাদের সন্তানরা বেশ ভাল করছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে গড়ে ওঠা বিশেষ পাঠশালার শিক্ষিকা মোছা.শাহানাজ পারভীন জানান,নিজেদের বসতভিটা না থাকায় বাবা মায়ের সাথে তিনিও আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি বাসায় থাকেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রিত শিশুদের লেখা-পড়া থেকে ঝরে যাওয়া বন্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারের দেয়া প্রতিশ্রুতি মোতাবেক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বারান্দায় পাঠদান শুরু করেন তিনি। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুর রহমান বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষদের নতুন ভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছেন। আশ্রয়স্থলে থাকতে পাওয়ায় এ সকল পরিবারের শিক্ষার্থীরা আজ বিভিন্ন স্কুলে যাচ্ছে। তারা যেন শিক্ষা জীবন থেকে ঝড়ে না পড়ে সে জন্য এ বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বিজনেস বাংলাদেশ/ হাবিব


























